রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


শেরপুর-জামালপুরে বন্যার অবনতি, নতুন করে প্লাবিত অনেক গ্রাম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, দশা ও মৃগী নদীর পানিবৃদ্ধির ফলে শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত শেরপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে বন্যার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৩ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

বন্যায় জেলার তিন উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের ৭৭ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে শেরপুর সদরের আট ইউনিয়নের ৩০টি, শ্রীবরদীর দুই ইউনিয়নের ৩৫টি এবং নকলার চার ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার লোক পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। সদর উপজেলার চরপক্ষিমারি ইউনিয়নের কুলুরচর বেপারীপাড়া গ্রামের ঘরবাড়িহারা ৩০০ পরিবার স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে, গত পাঁচ দিন ধরে সরকারি কোনও ত্রাণ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে পানিবন্দি মানুষ। তারা সেখানে মানবেতর অবস্থায় অবস্থান করলেও সরকারি কোনও ত্রাণ সহায়তা কিংবা প্রশাসনের কেউ তাদের দেখতে যায়নি বলে স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. জাফর আহমেদ অভিযোগ করেন। তবে স্থানীয় মশগুল মিয়া নামের এক ব্যবসায়ী এক কেজি করে চিড়া বিতরণ করেছেন বলেও তিনি জানান।

 

এদিকে জামালপুরে যমুনা নদীতে বন্যার পানি ৩৪ সেন্টি মিটার হ্রাস পেলেওে ব্রহ্মপুত্র, দশানি ও ঝিনাই নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলা সমুহের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ইতোমধ্যেই জেলার ৮ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জামালপুর পানি উন্ননয়ন বোর্ডের গেজ পাঠক আব্দুল মান্নান জানান, জেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে শুক্রবার বিকালে যমুনা নদীতে বন্যার পানি বিপদ সীমার ৯৫ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত দুইদিনে যমুনা নদীতে ৪৯ সেন্টিমিটার পানি হ্রাস পাওয়ায় জেলার ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

অপরদিকে জামালপুর পানি উন্ননয়ন বোর্ডের গেজ পাঠক মো. মোফাজ্জল হোসেন জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের জামালপুর পয়েন্টে গত ২৪ ঘন্টায় ১৬ সেন্টি মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও জামালপুরের দশানি ও ঝিনাই নদীতেও বন্যার পানি পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জামালপুর সদর উপজেলাসহ জেলার মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলা সমুহের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জামালপুর জেলার ৬৮ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৮টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। ৮টি পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা নিমজ্জিত হয়েছে। মোট ৭ লাখ ৪১ হাজার ২৭২ জন মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

এবারের বন্যায় জেলার ৯৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে এবং গত তিনদিনে বন্যার কারণে সারা জেলায় ১২ জনের প্রানহানী ঘটেছে।

এপর্যন্ত ৭৬৮ মেট্রিক টন চাল ও ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বন্যার্তদের সাহায্যে জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের থেকে বন্যার্তদের মাঝে খিচুড়ি, রুটি, চিড়া, গুড় ও ওষষুধসহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।


সম্পর্কিত খবর