সাজিদ নূর সুমন : লটকনকে ইংরেজিতে বলা হয় বার্মিজ গ্রেপ। টক-মিষ্টি ফল লটকন আমাদের দেশে অনেকের কাছে প্রিয় একটি ফলে পরিণত হয়েছে। লটকন এখন শুধু অতি পরিচিত ফলই নয় বরং অতি প্রয়োজনীয় ফলে পরিচিতি লাভ করেছে। লটকন খেলে মুখে রুচি আসে। লটকন গাছ দক্ষিণ এশিয়ায় বুনো গাছ হিসেবে জন্মালেও বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বাণিজ্যিক চাষ হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটি বেশ উপযোগী লটকন উৎপাদনের জন্য।
লটকন উৎপাদন এলাকা : বাংলাদেশের সর্বত্র এ ফলের চাষ হলেও নরসিংদী, গাজীপুর, নেত্রকোনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও সিলেটে বেশি চাষ হয়। বেশি লাভের কারণে নরসিংদীর শিবপুর, বেলাব ও মনোহরদী উপজেলার শত শত চাষি বর্তমানে লটকন চাষ করে অর্থনৈতিক সাফল্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।
লটকন ফলের পুষ্টিগুণ : লটকনে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে আমিষ, চর্বি, লৌহ এবং খনিজ পদার্থ। প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনের খাদ্যশক্তি প্রায় ৯২ কিলোক্যালরি, ভিটামিন বি-২: ০.২০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১: ১০ দশমিক ০৪ মিলিগ্রাম। লটকনে ভিটামিন ‘সি’ আছে প্রচুর। সিজনের সময় প্রতিদিন ২-৩টি লটকন খেলে দৈনন্দিন ভিটামিন ‘সি’র চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। লটকন খেলে বমি বমি ভাব দূর হয়। গরমে তৃষ্ণাও নিবারণ হয়। এটি খেলে মানসিক অবসাদ দূর হয়। লটকন গাছের ছাল এবং পাতা খেলে চর্মরোগ দূর হয়ে যায়। লটকন গাছের শুকনো ও গুঁড়া পাতা ডায়রিয়া উপশম করে। গাছের পাতা ও মূল খেলে পেটের পীড়া এবং পুরানো জ্বরও নিরাময় হয়। গনোরিয়া রোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে এই লটকনের বীজ। লটকন মুখের রুচি বাড়ায়। লটকন শিশু এবং মেয়েদের একটি প্রিয় ফল। তবে লটকন বেশি খেলে ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে।
উল্লেখ্য, লটকন এখন আর অবহেলিত ফল নয়। লটকন রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। ফলচাষি ও ভোক্তা সাধারণের কাছে ফলটির পরিচয়, পুষ্টিগুণ, চাষ প্রণালি ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব যদি সঠিকভাবে তুলে ধরা যায়, তবে সারা দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লটকনের চাষ সম্প্রসারণ করা যাবে এবং দেশে ফল ও পুষ্টি চাহিদার সামান্য অংশ হলেও পূরণ করা সম্ভব হবে।
-এজেড