যুবায়ের আহমাদ :
সুশৃঙ্খল জীবনের জন্য নিয়ম মানতে হয়। মানবজীবনকে পরিপাটি করতে নিজেদেরকে নিয়ে আসতে হয় নিয়মের বৃত্তে। কুকুর বিড়াল এবং বন্য প্রাণীদের পোশাক পড়তে হয় না; কিন্তু সভ্য জীব হিসেবে মানুষ নিজেদেরকে আবৃত করে পোশাকে। বন্য প্রাণিদের পানাহার ও যৌন চাহিদা পূরণের বাধ্যতামূলক কোনো নিয়ম না থাকলেও মানুষকে মানতে হয় বিশেষ নিয়ম। শান্তির জন্যই মানুষ নিজেদেরকে বৈধ ও অবৈধতার জালে আবদ্ধ রাখে। আর এ গুণটিই মানুষকে , অন্যসব প্রাণি থেকে করেছে আলাদা। দিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা। কিন্তু একজন মানুষও যখন কুকুর বিড়ালের মতো লাগামহীন হয়ে যায় তার শ্রেষ্ঠত্ব কি আর থাকে?
বন্য প্রাণীরাও যৌন চাহিদা পূরণে বিপরীত লিঙ্গের দ্বারস্থ হয়। কুকুর বিড়ালও সমলিঙ্গের সঙ্গে যৌন চাহিদা পূরণে অনাগ্রহী। মানবসমাজ তো বটেই চতুষ্পদ জানোয়াররাও সমকামিতাকে ঘৃণা করে। কিন্তু যেই সমকামিতার অপরাধে একটি জাতিকে ধ্বংসের ভয়াল পরিণতি বরণ করতে হয়েছে সেই ঘৃণ্য কাজটিকেই ‘আধুনিকতা’ এবং ‘অধিকারের’ কথা বলে আবার ছড়িয়ে দিতে কিছু মস্তিষ্কবিকৃত মানুষের চেষ্টা চলছে অব্যাহতভাবে। দৈহিকভাবে মানুষ রেখে চেতনায় পশু বানিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতা।
অভিষপ্ত গোষ্ঠি কওমে লুত ধ্বংশ হয়েছিল সমকামের অপরাধে। হজরত লুত (আ.) এর জাতি ছিল সমকামী। হজরত লুত তাদেরকে এহেন কাজ থেকে বিরত থাকার এবং হালাল পন্থায় নারীদের সঙ্গে তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করার অনুরোধ করেছেন বারবার। কিন্তু কে শুনে লুতের কথা! হজরত লুত ব্যর্থ হলেন। এমতাবস্থায় তার ঘরে চারজন সুদর্শন যুবক মেহমান আসলো। মেহমানের আগমণের খবর পেয়ে সমকামে অভ্যস্ত লোকেরা মেহমানদের সঙ্গেই কুকর্ম করতে চাইল। হজরত লুত ভীত হলে যুবক চারজন তাঁকে বললেন, ‘হে লুত, আমরা ফেরেশতা’।
সুরা হুদের ৮১ নং আয়াতের তাফসিরে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, দুর্বৃত্তরা (সমকামী) হজরত লুত আ. এর গৃহদ্বারে সমবেত হলে তিনি গৃহদ্বার বন্ধ করে দিলেন। ফেরেশতাগণ গৃহে অবস্থান করছিলেন। আড়াল হতে দুষ্টুদের কথাবার্তা শুনছিলেন। দুর্বৃত্তরা দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ এবং দরজা ভাঙতে উদ্যোগী হলে লুত আ. ভীত হয়ে পড়েন। ফেরেশতারা তাকে অভয় দিয়ে ঘরের দরজা খূলে দিতে বললেন। হজরত লুত আ. দরজা খুলে দিলে জিবরাইল আ. দুষ্টুদের প্রতি তার পাখা দিয়ে ঝাপটা দিলে তারা অন্ধ হয়ে গেল এবং পালাতে লাগল। (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন: ৬৪০)।
আল্লাহ তায়ালা জিবরাইল আ. কে আজাবের জন্য পাঠালেন। তিনি তার ছয়শত পাখা থেকে মাত্র একটি পাখা কাজে লাগালেন কওমে লুতকে শাস্তি দিতে। পাখার এক কোণ দিয়ে অভিষপ্ত সে জাতিকে শূন্যে উঠালেন। কওমে লুতের কান্নার আওয়াজ ছড়িয়ে পড়লো দিগ্বিদিক। আবার নিক্ষেপ করলেন। ছাড় দেননি বিন্দুমাত্র।
এরশাদ হচ্ছে, ‘অতপর যখন আমার হুকুম এসে পৌছল, এরপর যখন আমার সিদ্ধান্ত কার্যকর হলো, তখন আমি জনপদের উপরিভাগ নিচে এবং নিম্নভাগ উপরে উঠালাম। এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর-পাথর বর্ষণ করলাম। (সুরা হুদ: ৮২)। কওমে লুতের বস্তির ধ্বংসপ্রাপ্ত রূপই আজকের ‘ডেডসি’ বা মৃত সাগর। আজো তাতে কোনো প্রাণির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।
ইসলামের সমকাম ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য অন্যায় । হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যাদেরকে তোমরা লুতের সম্প্রদায়ের কাজে (সমকামে) লিপ্ত দেখবে তাদের উভয়কেই হত্যা করো।’ (তিরমিজি: ৪/৫৭; আবু দাউদ: ৪/২৬৯; ইবনে মাজা: ২/৮৫৬)। ইসলাম সমকামিতার ব্যাপারে এত কঠোর কেন? এর উত্তর খুঁজে পাই ‘এইডস’ নামক মরণব্যাধির দিকে তাকালেই।
এইডস মানবদেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেয়। এর ওষুধ আবিষ্কারের কথা একাধিকবার শুনা গেলেও বাস্তবতা ভিন্ন। সুতরাং এইডস মানেই নির্ঘাত মৃত্যু। রোগটি ১৯৮১ সালে সমকামীদের মধ্যে প্রথম ধরা পরে। তাও আবার রিয়াদ কিংবা বাগদাদে নয়; নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়ায়। (উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সংকলন, পুষ্ঠা- ৯৮)। সমাকামিতা ও অবাধ যৌনতাই এইডসের মতো প্রাণঘাতি রোগের কারণ। তো ইসলামের মতো কল্যাণধর্মী জীবনবিধান কী করে সমাকামিতাকে ছাড় দেবে! তাই তো তাবরানী ও বায়হাকি শরিফের হাদিসে এসেছে, চার ব্যক্তি সকাল-সন্ধা আল্লাহর গজব ও আক্রোশে পতিত হয়। মহিলার বেশধারী পুরুষ, পুরুষ বেশধারী মহিলা, পশু মৈথুনকারী এবং সমকামী।
দেড় হজার বছর আগে প্রদত্ত নবীজির সা. সতর্কবাণি কতোটা সত্যি হলো! হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে তারা প্রকাশ্যে অশ্লীলতায় লিপ্ত হতে থাকে তখন তাদের মধ্যে এমন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে যা তাদের পুর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল না।’ (ইবনে মাজা: ২/১৩৩২)। যারা সমকামিতাকে বৈধতা দেয় এইডসের মতো মহামারির উত্থান তো তাদের দেশেই।
পুরুষ যদি পুরুষেই যৌন চাহিদা পুরণ করতে পারে তাহলে নিশ্চই নারীর প্রতি তার টান কমে যাবে। আর এর ফল কোথায় দাঁড়াবে? পুরুষ যদি নারীর কাছে না যায় তাহলে মানুষের বংশবৃদ্ধির কী হবে? সমকামিতার ফলে যেমন এইডস মহামারি ছড়াবে তেমনি মানুষের স্বাভাবিক প্রজনন ব্যহত হবে নিশ্চিতভাবে। হুমকির মুখে পড়বে মানবসভ্যতা।
লেখক: খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর।
-এজেড