ডাঃ প্রহলাদ কুমার স্বপ্নীল
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
জন্মের পর ২-৩ বছর পর্যন্ত ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করা শিশুদের জন্য একটা স্বাভাবিক বিষয়। এটি কোনো রোগ নয়। যেহেতু তিন বছর বয়স পর্যন্ত মস্তিষ্কে সম্পূর্ণ পরিপক্বতা আসে না, সেহেতু প্রস্রাব ও পায়খানা ধরে রাখার ক্ষমতা মস্তিষ্ক থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়। এ বয়সের পরে যদি কোনো শিশু বিছানায় প্রস্রাব করে, তবে সেটি রোগ।
কারণ
এই রোগের সঠিক কারণ এখনও অজানা। তবে ধারণা করা হয়, স্বাভাবিক অবস্থায় জন্মের পর ২-৩ বছর পর্যন্ত দেহের মেরুদণ্ডের কোমরের অংশের স্নায়ুতন্ত্র যেটা সেকরাল প্লেক্সাস নামে পরিচিত সেটা প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য এ বয়স পর্যন্ত প্রস্রাব ঘনঘন হয় এবং সত্যিকার কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
তিন বছর পর মস্তিষ্কের মূল অংশ নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। ফলে প্রস্রাবের প্রক্রিয়াটিও কারও নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আর এ প্রক্রিয়াটি যদি দেরি হয় অথবা কোনো কারণে এর নিয়ন্ত্রণ স্নায়ুসন্ধিতেই বিদ্যমান থাকে, তখনই বিছানায় প্রস্রাব করার উপসর্গ দেখা দেয়।
কিছু ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কারণগুলো লক্ষ্য করা যায়-
ঘুমের সময় প্রস্রাব না করে ঘুমাতে যাওয়া।
ঘুমের সমস্যা বা প্লিপ ডিসঅর্ডার।
প্রস্রাবে দীর্ঘ সময় ধরে প্রদাহ বা ইনফেকশন থাকা।
মূত্রতন্ত্রের গঠনগত সমস্যা :যেমন- ক্ষুদ্র বৃক্ক বা কিডনি, একাধিক বৃক্কনালি বা ইউরেটার।
কিডনি ফেইলিউর, হার্ট ফেইলিউর ইত্যাদি।
বিশেষ কিছু ওষুধ।
মূত্রনালির স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা।
এমনকি জিনগত কারণেও এ সমস্যা হতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
শিশুদের ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করার কারণ বা কারণগুলো মাথায় রেখে সে অনুযায়ী বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে। যেমন-
প্রস্রাব পরীক্ষা
রক্তে গ্গ্নুকোজের মাত্রা
কিডনির কার্যকারিতা ও গঠনজনিত সমস্যা নিরূপণে কিছু বিশেষ পরীক্ষা
আলট্রাসনোগ্রাম
চিকিৎসা
এ রোগের কার্যকর তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। তবে-কাউন্সেলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর যাদের কোনো কারণ নেই, তারা ডেসমোপ্রেসিন বা মেলিপ্রামিন ট্যাবলেট খেলে উপকার পেতে পারে।
প্রতিকার
কিছু নিয়ম সঠিকভাবে পালন করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে-
রোগীর মা-বাবাকে এ রোগ বিষয়ে সম্যক ধারণা দিতে হবে।
শোয়ার আগে (দিন অথবা রাত) বাচ্চাকে প্রস্রাব করিয়ে শোয়াতে হবে এবং সম্ভব হলে মাঝরাতে একবার প্রস্রাব করাতে হবে।
৭০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অ্যালার্মের ব্যবহার বেশ কার্যকর।
প্রস্রাবে ইনফেকশন থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে।
তবে সামগ্রিক চিকিৎসা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হওয়া উচিত।
এসএস/