আওয়ার ইসলাম : দিনের পর দিন একসঙ্গে হাতে হাত রেখে বসবাস বড় হয়ে ওঠা। হঠাৎই সে যাপনচিত্রে ধর্মীয় উন্মাদনার দাগ। আগুন-হিংসা-উত্তেজনা। কটাদিন বসিরহাট যেন এই বাংলার নাড়ির যোগ থেকে ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। অবশেষে ছন্দ ফিরছে। ফিরছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তার মধ্যে বসেই বিগত দিনগুলির ময়নাতদন্তে নেমেছেন সাধারণ মানুষ।কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল, এখনও ভেবে পাচ্ছেন না শাহজওয়ান, রঞ্জিতরা। আর একযোগে আঙুল উঠছে বহিরাগতদের দিকেই।
শাঁখের আওয়াজ আর আজানের শব্দে কোনওদিন ঠোকাঠুকি লাগেনি মাগুরখালি, বাদুড়িয়ায়। প্রবীণ বাসিন্দারা মনেই করতে পারছেন না যে, এরকম ধর্মীয় উন্মাদনা কোন ছিদ্রপথে এসে ঢুকল তাঁদের বসিরহাটে। সম্প্রীতি শব্দটার অর্থ আলাদা করে শিখে বড় হননি এ এলাকার যুবকরা। স্বাভাবিকভাবেই তা আত্মস্থ হয়েছে। অনুভব করেছেন প্রত্যেকে। আচমকাই সব ওলটপালট। এক ফেসবুক পোস্টের জেরে বসিরহাট হয়ে উঠল গোটা দেশের উন্মাদনার মুখ। জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলিতে হইচই। রাজনীতি? হতে পারে। কিন্তু কলঙ্কের দাগ মুছতে উঠেপড়ে লেগেছেন বাসিন্দারা। রাখঢাক না করেই জানাচ্ছেন, সেইসব বহিরাগতদের কথা, দলে দলে যাঁরা বাইকে করে এসে চড়াও হয়েছিলেন গ্রামবাসীদের উপর। কেননা বিভাজন লালন করে বেঁচে থাকার কথা তো কোনওদিন ভাবেনওনি বসিরহাটের বাসিন্দারা।
জীবন হালদার নামে জনৈক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, “আমরা তো ওদের উৎসবে যাই। ওরা আমাদের দুর্গাপুজোয় আসে। দিনের পর দিন এই দেখে এসেছি। তাহলে এখন এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আসছে কোথা থেকে?” আঙুল উঠছে সেই বহিরাগতদের দিকেই। ঠিক কতজন এসেছিলেন তা মনে করতে পারছেন না বাসিন্দারা। তবে ফেসবুকে পোস্ট করা ওই কিশোরের আত্মীয়র বাড়িতে যখন তারা আগুন লাগায়, তখন জল হাতে ছুটে এসেছিলেন স্থানীয় মসজিদের সঙ্গে যুক্ত যুবকরাই। রঞ্জিত মণ্ডল নামে এক যুবক তো জানাচ্ছেন, যখন তাঁকে ঘিরে ধরে বহিরাগতরা প্রশ্ন করতে শুরু করে তখন এগিয়ে এসেছিলেন তাঁর মুসলিম সহপাঠীরাই। শাহজাহান মণ্ডলরা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, রঞ্জিত কোনও অন্যায় করেননি। তাঁকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। মাওলানা ইয়াসিন সাহেব জানাচ্ছেন, তিনি জীবনে এরকম কোনদিন দেখেননি। তুচ্ছ কারণে যে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে, তা তাঁকে বিস্মিত করেছে। তাঁর দাবি, স্থানীয়দের অন্ধকারে রেখে বহিরাগতরা এসেই তাণ্ডব কর চলে গেল।
বসিরহাটের অলিতে গলিতে কান পাতলে এখন ভুরি ভুরি এরকম নমুনা উঠে আসছে। আবার হাতে হাত মিলিয়ে বাঁচার শপথ নিয়েছেন সকলে। শুধু মধ্যিখানের কটাদিন যেন জেগে থাকল দুঃস্বপ্নের মতো। তবে আর নয়। বহিরাগতরা এসে যাতে আর তাঁদের সংহতি নষ্ট করতে না পারে, এবার সে প্রতিজ্ঞাতেই বুক বেঁধেছেন বসিরহাটের বাসিন্দারা।
-এজেড