আতাউর রহমান খসরু : ধর্ম হিসেবে ইসলামই সর্বপ্রথম নারী শিক্ষায় উদারনৈতিক সমতার কথা বলেছে। ইসলাম নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য নারী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে। তবুও ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে নারী বিদ্বেষের যতো অভিযোগ।এটাও সত্য উপমহাদেশে ইসলামি শাসনের পতনের পর উপযুক্ত পরিবেশ ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় মুসলিম সমাজে নারী শিক্ষার হার যথেষ্ট কম ছিলো। মুসলিম পরিবারে নারী শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র ছিলো তার পরিবার। পারিবারিক পরিমণ্ডলেই সে ইসলামি শিক্ষা ও শিষ্টাচার গ্রহণ করতো।
কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এ শিক্ষা যে যথেষ্ট নয় তা উপলব্ধী করতে পারেন অনেকেই। তারা মুসলিম নারীর জন্য একটি নিরাপদ শিক্ষালয় গড়ে তুলতে উদ্যোগী হন। তারা নারীর জন্য গড়ে তোলেন স্বতন্ত্র ও নিরাপদ শিক্ষাকেন্দ্র মহিলা মাদরাসা। নারী শিক্ষার ইসলামী ধারায় অবদান রেখে যাচ্ছেন এমনই একজন মুফতী তাজুল ইসলাম জালালী। ১৯৯৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দারুল কুরআন মহিলা মাদরাসা। আওয়ার ইসলামকে তিনি বলেছেন, তার মাদরাসা প্রতিষ্ঠার অভিজ্ঞতা।
প্রচলিত ধারার ছেলে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা না করে কেনো মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে গেলেন জানতে চাইলে মুফতি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘নারীরা মায়ের জাতি। সন্তানের প্রথম বিদ্যালয়। তাই নারী শিক্ষিত হলে জাতি শিক্ষিত হয়। বিশেষত নারী ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে জাতি একটি আদর্শ জাতি গঠন করা সম্ভব। তাই মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করি।’
প্রাণীর ছবি এঁকে আমি হয়তো কাইয়ুম চৌধুরী হতাম না, কিন্তু কুরআনের হরফ এঁকে আরিফুর রহমান হয়েছি
তবে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার অভিজ্ঞতা খুব মধুর ছিলো না। মুফতী তাজুল ইসলামের ভাষায়, ‘শুরুর দিকে অনেকেই বাঁকা চোখে দেখেছে, বাজে মন্তব্য করেছে। কিন্তু কাউকে আঘাত করি নি। বরং বোঝাতে চেয়েছি।’
বোঝাতে কি পেরেছেন? ‘হ্যা, অনেকটাই পেরেছি। এখন সবাই মহিলা মাদরাসার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন। যারা এক সময় বিরোধিতা করতো এবং মন্দ কথা বলতো তারাও আমাকে এখন ধন্যবাদ জানায়।’ বলেন মুফতী তাজুল ইসলাম।
প্রায় বিশ বছরের এ প্রচেষ্টায় কোন বিষয়টি তিনি প্রধান্য দেন, ‘আমি মেয়ের শিক্ষায় যেমন গুরুত্ব দেই, ঠিক তেমনি গুরুত্ব দেই তার দীক্ষার প্রতি। মেয়েদের আমি যেমন দীনি শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে একটি যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদানের চেষ্টা করি, তেমন একটি মেয়ে যেনো পারিবারিক ও ব্যক্তি জীবনে সুখী হতে পারে সে শিক্ষা ও শিষ্টাচারের প্রতি গুরুত্ব দেই। বাবা মায়ের সঙ্গে, স্বামী ও শ্বশুর-শ্বাশুরীর সঙ্গে কেমন আচরণ করবে তা শেখানোর চেষ্টা করি। আর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই তাদের নিরাপত্তার প্রতি। একটি যেনো কিছুতেই বিপদগ্রস্থ না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখার চেষ্টা করি।’
শুধু নিজে চেষ্টা করেন না মুফতী তাজুল ইসলাম। তার সঙ্গে তার মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষিকাগণও চেষ্টা করেন আদর্শ মানুষ গড়তে। মুফতি তাজুল ইসলাম বলেন, আমি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করি তিনি পড়ালেখায় কতোটা ভালো এবং একই সঙ্গে শিক্ষক হিসেবে কতোটা দক্ষ। ভালো ছাত্র হলেই সে ভালো শিক্ষক হবেন না নয়। তাই আমি উভয় দিকই লক্ষ্য করি। আমি মনে করি, মহিলা মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগে আখলাক-চরিত্রকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।