সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

সূরা ইয়াসীন ও কালিমায়ে শাহাদাত পড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মুফতি ওমর ফারুক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ওয়ালী উল্লাহ আরমান

গত ২ জুলাই রবিবার দুপুরে ঢাকার শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে মারা গেছেন ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল মুফতী ওমর ফারুক৷ মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৩২ বছর৷ প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় মৃত্যুকালীন তার মুখে সর্বশেষ উচ্চারিত হয়েছে সূরায়ে ইয়াসীন এবং কালিমায়ে শাহাদাত৷ সে হিসেবে নিঃসন্দেহে বলতে পারি তিনি ইর্ষণীয় সৌভাগ্যের মৃত্যু লাভ করেছেন৷

৩০ জুন শুক্রবার জুমার পর প্রচণ্ড পেটে ব্যথা নিয়ে ওমর ফারুক আড়াইহাজার ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে যান৷ চিকিৎসক এক্সরে এবং পরীক্ষা করে তার নাড়িতে সমস্যার কথা বলে উন্নততর চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন৷ কিন্তু ইনজেকশনে ব্যথা অনেকটা উপশম হবার কারণে ওমর ফারুক নারায়ণগঞ্জ অাড়াইহাজার তিলচণ্ডি নয়াপাড়ায় অবস্থিত গ্রামের বাড়িতে চলে যান৷

পরদিন শনিবার সকালে পুনরায় বুকে/পেটে ব্যথা নিয়ে স্থানীয় ক্লিনিকে গেলে তারা তাকে ঢাকা রেফার করেন৷ ওমর ফারুকের মামা এবং মা তাকে দ্রুত শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে আসেন৷

চিকিৎসকরা পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে তার লিভারে জমে যাওয়া কালো রংয়ের পানি বের করেন৷ এতে ওমর ফারুক কিছুটা স্বস্তি বোধ করে রাতেই স্থানীয় দুয়েকজনকে ফোনে সুস্থতার কথা জানান৷ কিন্তু সাংগঠনিকভাবে জমিয়তের কেউই তার অসুস্থতার সংবাদ জানতে পারেনি৷

রবিবার ফজরের পূর্বে ফারুক তার বাবাকে ফোন করে বলেন, “আপনার কষ্ট করে ঢাকা আসার প্রয়োজন নেই৷ আমি সুস্থ হয়ে গেছি৷ এখান থেকে রিলিজ দিলে মামার বাসায় বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে বাড়িতে চলে অাসবো ইনশাআল্লাহ৷"

পরেরটুকু ওমর ফারুকের এক নিকটাত্মীয়ের ভাষায়; “সকাল ১১টায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাকে আইসিইউতে নিয়ে যান৷ সাড়ে বারোটার দিকে ফারুক উঠে বসেন। আইসিইউর যন্ত্রপাতি বিশেষত অক্সিজেন মাস্ক খুলে একাই টয়লেটে যান৷ এস্তেঞ্জা-ওযু করে পুনরায় বেডে শুয়ে পড়েন। সামনে বসে মা তার যন্ত্রণাকাতর চেহারায় দেখে বলেন, বাবা! তুমি কালিমা পড়তে থাকো৷ ফারুক জবাব দেন, মা! আমি সূরা ইয়াসীন পড়ছি, শেষ করে কালিমা পড়ব এবং যথারীতি তিনি কালিমা পড়েনও৷

দুপুর ১টার দিকে তাকে কাকরাইল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য লিফট যোগে নিচে নামানো হয়। কিন্তু জীবিত ওমর ফারুক আর এ্যাম্বুলেন্সে উঠতে পারেন না। হুইল চেয়ারে থাকা অবস্থায় তার মাথা একদিকে ঝুঁকে পড়লে সাথে থাকা ডাক্তার পালস চেক করে মর্মান্তিক কথাটি বলে দেন, ওমর ফারুকের জীবনাবসান হয়ে গেছে৷ তিনি চলে গেছেন আসল বাড়ির পথে। হাসপাতালের পরিবর্তে এ্যাম্বুলেন্স তার মরদেহ নিয়ে আমরা গ্রামের পথ ধরি৷"

আড়াইহাজারের স্থানীয় মাদরাসায় হিফজ শেষে শরহে বেকায়া [ছানুবী উলইয়া] জামাত পর্যন্ত জামিয়া ইসহাকিয়া মানিকনগর মাদরাসায় পড়ার পর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় দাওরায়ে হাদীস এবং ইফতা পড়েন৷ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে আড়াইহাজারে মেয়েদের জন্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে তিনি একইসাথে সাংগঠনিক, তালীমি এবং সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত করেন৷

ওমর ফারুক নিজ কর্মদক্ষতা এবং সক্রিয়তার গুণে ২০০৩ এ ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ মানিকনগর মাদরাসা শাখা সেক্রেটারী এবং মহানগর নির্বাহী সদস্য, ২০০৪ এ মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, ২০০৫ এ মহানগর সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৬ এ পুনরায় কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়৷

২০০৮ এর কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০১১ তে প্রথম এবং ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বারের মতো কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী নির্বাচিত হওয়াটা তার সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা এবং কর্মতৎপরতার মূল্যায়ন বলা চলে৷

শীর্ষ জমিয়ত নেতৃবৃন্দের একান্ত স্নেহ ও আস্থাভাজন এবং কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কর্মী/সমর্থকদের প্রিয়জন হিসেবে আগামিতে আরও গুরুদায়িত্ব পালনের প্রস্তুতিলগ্নে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ডাকে তিনি দুনিয়াকে আলবিদা বলে ‘আসল বাড়ি' তথা চিরশান্তি সুখের ঠিকানা জান্নাতে চলে গেছেন৷

ওমর ফারুক চির তরে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, রেখে গেছেন তার একনিষ্ঠ, নিঃস্বার্থ, সংগ্রামী জীবনাদর্শ। অব্যক্ত ভাষায় আমাদের বলে গেছেন, এই সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী। আমি যে পথে যাচ্ছি তোমাদেরও সে পথেই যেতে হবে... ওমর ফারুকের আকস্মিক মৃত্যুতে সমাপ্তি ঘটেছে ছাত্র জমিয়তের ইতিহাসের একটা অধ্যায়ের৷ এক মুহূর্তে তিনি বর্তমান থেকে অতীতের পাতায় চলে গেছেন৷ কিন্তু জমিয়ত কর্মী হিসেবে তিনি যে কীর্তি রেখে গেছেন, প্রতিটি কর্মীকে তা রাস্তা দেখাবে৷

আমার চোখের সামনে যে ওমর ফারুককে ঘুরে বেড়ায় সে শান্তসৌম্য, বিনম্র, কর্তব্য পরায়ণ, দায়িত্ব সচেতন আত্মোৎসর্গী এক তরুণ আলেমের ছবি৷ তার বিদায়ে আমরা এমন এক সহকর্মী ছোটভাইকে হারিয়েছি, যার উপর যেকোনো দায়িত্ব তুলে দেয়া যেতো নিশ্চিন্তে পরম আস্থার সাথে৷

লেখক: সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ