মুহাম্মদ রাকিব হাসান : জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুন নুর ঢাকার অন্যতম দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ জামিয়ার ধারাবাহিক সাফল্য ঈর্ষণীয় বলা যায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যেমন ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে জামিয়ার পরিধি, ঠিক তেমন ছড়িয়েছে তার সুনাম ও সুখ্যাতি। ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার অন্যতম সমাজসেবক আলহাজ এম এ গফুরের উদ্যোগ ও বিশিষ্ট আলেমে দীন মুফতি মনিরুজ্জামানের মেধা ও শ্রমে মাদরাসা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সামনে এগিয়ে চলেছে।
বেফাক বোর্ডে অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফলে জামিয়া বাইতুন নুরের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বিস্ময়কর বলা চলে। প্রতিবছরই জামিয়ার বোর্ড স্ট্যান্ডের পরিমাণ বাড়ছে প্রায় দ্বিগুণ হারে। জামিয়ার শিক্ষাসচিব মুফতি আবু বকর সুহাইলের বর্ণনা মতে এ বছর বায়তুন নুরের ৮০ জন শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। গত বছর ছিলো ৫৬ জন, তার আগের বছর ছিলো ৩৭ জন এবং তার আগে ছিলো ২১ জন।
মুফতি সুহাইলের কাছে জানতে চেয়েছিলাম ধারাবাহিক অগ্রগতির রহস্য কী? তিনি বলেন, আমাদের জামিয়ার প্রিন্সিপাল সবসময় বলেন, মাদরাসার শিক্ষক যদি যোগ্য ও দ্বীনদার হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরাও যোগ্য হয়ে গড়ে উঠবে। এই কারণে তিনি যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেন, যার ফলে ছাত্ররাও যোগ্য হয়ে গড়ে উঠছে এবং তাদের ফলাফল ভাল হচ্ছে।
জামিয়ার প্রিন্সিপাল শুধু যে, যোগ্য শিক্ষক খোঁজেন ও নিয়োগ দেন তা নয়; বরং তিনি আল্লাহর কাছে দোয়াও করেন অনেক। যেনো জামিয়ার সার্বিক উন্নতি; বিশেষত রেজাল্ট ভালো হয়। জামিয়ার সুনাম-সুখ্যাতি বৃদ্ধি পায়। শুধু রেজাল্ট যেনো ভালো হয় এজন্য তিনি এ বছর ওমরা করেছেন। বায়তুল্লাহ শরিফে যেয়ে দোয়া করেছেন।
শিক্ষায় কখনো আপোষ করেনি বলেই রাহমানিয়ার ঈর্ষণীয় ফলাফলের ধারাবাহিকতা রক্ষা পেয়েছে
শুধু পরীক্ষা নয়, সার্বিক প্রস্তুতিই জামিয়াতুস সুন্নাহ’র সাফল্যের রহস্য
এছাড়াও আমরা ফলাফল ভাল করার লক্ষে বছরের শুরুতেই বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। যেমন ধরুন, বছরের শুরুতে বেফাকভুক্ত প্রতি জামাতের জন্য একজন করে অভিজ্ঞ শিক্ষক (বেফাক নেগরান) নির্ধারণ করা হয়। যিনি বছরেরে শুরু থেকে ছাত্রদের পেছনে মেহনত করেন। হাতের লেখা সুন্দর করা, আরবিতে পরীক্ষা দেয়া, এককথায় রেজাল্ট ভাল করার জন্য যিনি সার্বক্ষণিক ছাত্রদের পেছনে মেহনত করেন। এ ক্ষেত্রে বেফাক নেগরান হিসেবে এমন শিক্ষককেই বাছাই করা হয় বেফাক পরীক্ষায় যার সাফল্য রয়েছে।
তাছাড়াও সকল শিক্ষকদের পরামর্শের মাধ্যমে ফলাফল ভাল করার জন্যে আরো অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
আমাদের এখানে বাছাই করে মেধাবী ছাত্রদেরই ভর্তি নেয়া হয়।আর আমার ধারণা, মেধাবী ছাত্র ও শিক্ষকদের যৌথ প্রচেষ্টায় আমাদের সফলতার আরেকটি বড় কারণ।
মুফতি আবু বকর সুহাইল এ বছর বেফাকে বাইতুন নুরের সাফল্যও তুলে ধরেন, এ বছর বেফাক পরীক্ষায় ৮০ জন মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। তারা হলো, হিফজ বিভাগ থেকে একজন সারাদেশে ২য় স্থান অর্জন করেছে, ইবতেদিইয়্যা (তাইসির) ৫৬ জন পরিক্ষার্থীর মধ্য থেকে সারাদেশে ৩য় স্থানসহ ৪৭ জন মুতাওয়াসিসতা (নাহবেমীর) জামাতে সারাদেশে ১ম ও ৭ম স্থানসহ ২৫ জন।সানুবিয়্যা উলয়্যা (শরহে বেকায়া) জামাতে ৭ জন মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে।
বেফাক বোর্ডের সুফল অনেক। কিন্তু কারো কারো অভিযোগ বোর্ড পরীক্ষা শিক্ষার্থীরা গাইড ও নোটমুখী হয়ে যাচ্ছে। মুফতি সুহাইলও সমস্যাটি বোধ করেন। তার মতে, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের এখানেও আলোচনা হয়। এজন্য আমরা যেটা করি, গাইড/নোট এড়িয়ে চলি। ছাত্রদের নোট থেকে দূরে রাখা হয়।’
কেনো আপনারা গাইড পছন্দ করেন না? ‘গাইড শুধু কওমি মাদরাসায় না অন্য সকল শিক্ষাব্যবস্থায়ও নিন্দনীয়। যারা গাইড ব্যবহার করে ভাল ফলাফলের প্রত্যাশা করে, তারা কোনদিন ভাল করতে পারে না। গাইডের ব্যাপারে অনেক ভুল ধারণা আছে ছাত্রদের মধ্যে।আপনি দেখবেন, যারা শুধু গাইড নির্ভর তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গাইড পড়ে পাশ করা যায়। ভালো ফলাফল করা যায় না। সারা বাংলাদেশে যারা ভালো করেন তারা গাইড এড়িয়ে চলেন।’
তাহলে ছাত্ররা বেফাকের প্রস্তুতি নিবে কীভাবে? তিনি বলেন, ‘আমরা যা করি তা হলো, বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সামনে রাখি। শিক্ষকদের বিগত সালের প্রশ্ন সরবারহ করা হয়। পড়ানোর সময় প্রশ্নটি সামনে আসলে কীভাবে তার উত্তর দিতে হবে তা বলে দেয়া হয়।’
মুফতি সুহাইলের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ভর্তির সময় শিক্ষার্থী নির্বাচনে ‘কোটা সিস্টেমে সীমিত ছাত্র নেয়’ ভালো না সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া? তিনি চমৎকার উত্তর দেন। বলেন, ‘আমি উভয় দৃষ্টিভজ্ঞিকে ইতিবাচকভাবে দেখি। সকলের জন্য ইলমে দীন শেখার দ্বার উন্মুক্ত রাখা আবার কিছু যোগ্য মানুষ তৈরি করার জন্য বিশেষ পন্থা অবলম্বন করা। আমি এই দুই দৃষ্টিভঙ্গিই পজিটিভ।
যদি একটাকে রাখা হয়, সাধারণভাবে সকলকেই ভর্তি করা কিংবা বাছাই করে ভাল ছাত্রদের সুযোগ দেয়া, তাহলে এক শ্রেণির শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই উভয়দিকটা বিবেচনায় রাখায় শ্রেয়।
-এআরকে