লাবীব আব্দুল্লাহ : এই সপ্তাহ বা আগামী সপ্তাহে কওমি মাদরাসার ভর্তি কার্যক্রম শেষ হবে৷ শুরু হবে দরস৷ শিক্ষাবর্ষ ১৪৩৮-৩৯ হিজরি৷ নতুন শিক্ষাবর্ষে তালেবে ইলমদের সরব পদচারণায় মুখরিত মাদরাসার আলোকিত প্রাঙ্গণ৷
ভর্তির সময় অনেক মাদরাসায় অভিভাবকের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক৷ অনেক মাদরাসায় সরাসরি তালেবে ইলম ভর্তি হচ্ছেন, অভিভাবক কোনো খোঁজও রাখেন না৷ অনেক অভিভাবক জানেন না জামাত বা ক্লাসের নাম৷ জানেন না মারহালা বা শ্রেণির নামও৷ জানেন না কিতাবের নামও৷
অভিভাবক বিশ্বাস করেন মাদরাসাকে৷ বিশ্বাস রাখেন শিক্ষকের উপর৷ বিশ্বাস রাখেন সন্তানের সিদ্ধান্তে৷ কোনো কোনো তালেবে ইলম অভিভাবককে ভুল তথ্য দিয়ে ভর্তি ফি, বোর্ডিং ফি অতিরিক্ত আনে৷ অনেক তালেবে ইলম দামি মোবাইল সেট কিনে অভিভাকরের কষ্টের টাকা নষ্ট করে অথচ প্রয়োজনীয় কিতাবটাও কিনতে আগ্রহী নয়৷
তাই, তালেবে ইলমের সার্বিক উন্নতির স্বার্থেই অভিভাবককে মাদরাসার সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে৷ তালেবে ইলমকেও আমানতদারির সাথে অভিভাবককে সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে হবে৷ মাদরাসাকেও উদ্যোগী হতে হবে অভিভাবকদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষার৷
মাদরাসা কর্তপক্ষ, অভিভাবক এবং তালেবে ইলম এই তিনের সমন্বয় থাকলে তালেবে ইলমদের আদর্শ জীবন গড়তে সহজ হবে৷ এই সমন্বয়ের জন্য প্রয়োজন অভিভাবক সম্মেলন করা৷
প্রস্তাবনা ১. মাদরাসার দরস শুরুর সময়, পরীক্ষার ফলাফের সময় বা অন্য যেকোনো ছুটির সময় দেখে অভিভাবক সম্মেলন করা যেতে পারে৷
২. অভিভাবক সম্মেলনের সূচি তৈরি করে একটি মানসম্পন্ন কার্ডও করা যেতে পারে৷ যেখানে কে কী আলোচনা করবেন তার উল্লেখ থাকতে পারে৷ যেমন সন্তান প্রতিপালনে অভিভাকের দায়িত্ব কর্তব্য, দীনি শিক্ষা কেন প্রয়োজন? কওমি মাদরাসা কী ও কেন? দারুল উলুম দেওবন্দ: ইতিহাস ঐতিহ্য অবদান, আধুনিক শিক্ষা এবং দীনি শিক্ষা এই জাতীয় আরও কোনো বিষয়ের উপর আলোচনা করা যেতে পারে৷ প্রয়োজনে এই জাতীয় বিষয়ে লিখিত প্রবন্ধ বিতরণ করা যেতে পারে অভিভাবক সম্মেলনে।
৩. অভিভাবক সম্মেলনে উন্নত খাবার পরপিবেশ করা যেতে পারে৷ খাবারের আগে খাবারের সুন্নতসমূহ আলোচনা হতে পারে বা এই জাতীয় কোনো বই হাদিয়া হিসেবে দেওয়া যেতে পারে৷ সবাই যেনো খাবার খেতে পারেন তার জন্য আয়োজন গোছালো করা উচিৎ৷
৪. অভিভাবক সম্মেলনে কোনো কালেকশন না করে মাদরাসার পরিকল্পনা ও প্রয়োজন লিখিতভাবে প্রদান করা যেতে পারে যা উন্নত খামে ভরা থাকবে৷ অভিভাবক যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে নিজ উদ্যোগে সহায়াতও করবেন৷
৫. অভিভাবক সম্মেলনে পুরনো অভিভাবকদের কোনো অভিযোগ থাকলে অভিযোগ বক্স রাখা যেতে পারে৷ অথবা অভিভাবক তাদের পরামর্শের কথা গঠনমূলকভাবে বলবেন সম্মেলনে৷
৬. অভিভাবক সম্মেলনে বিশুদ্ধভাষী উপস্থাপক রাখা৷ যারা যে বিষয়ে আলোচনা করবেন তা পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা বেশী দীর্ঘ আলোচনা বা একই কথা বার বার বলা বিরক্তির কারণ হতে পারে তাই সীমিত সময়ে আয়োজন শেষ করা৷
৭. মাদরাসা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা৷ ফুল বা ফলের গাছে সুশোভিত রাখা যেন মাদরাসর পরিবেশ স্বাস্থ্যকর থাকে৷ অভিভাকরা যেনো নিজের বাসা থেকে মাদরাসার পরিবেশকে উন্নত মনে করেন৷
৮. অভিভাকর সম্মেলনে দেশের শীর্ষ আলেম শিক্ষাবিদ আলেমদের অতিথি আলোচক হিসেবে দাওয়াত দিলে আয়োজন হবে প্রানবন্ত৷
৯. ছাত্রদের কৃতিত্ব, পোষ্যদের ফলাফলপত্র বা রেজাল্ট কার্ড, দীনি বই, মাদরাসার ডায়েরি, মাদরাসার পরিচিতি, মাদরাসার বার্ষিক হিসাব অডিটসহ একটি খামে ভরে অভিভাবকদের হাদিয়া হিসেবে দেওয়া যেতে পারে৷
১০. প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকতে পারে৷ মুহতামিম, নাযেমে তালীমাত, নাযেমে দারুল ইকামা, নাযেমে মাতবাখ থাকতে পারেন উত্তর প্রদান প্যানেলে ৷ অভিভাবকগন আয়োজনে কোনো প্রশ্ন করলে সংশ্লিষ্টগন সুন্দরভাবে উত্তর দেবেন৷ অভিভাবক সম্মেলনের অনেক উপকার৷ যেসব মাদরাসাগুলো প্রতি বছর অভিভাবক সম্মেলন করে আগ্রহীগন সেই আয়োজনগুলোতে হাজির হয়ে ধারণা নিতে পারেন৷ বাস্তব অভিজ্ঞতা হবে৷
মাদরাসাগুলো সাড়ে চৌদ্দ শত বছর থেকে দীনি ইলমের আলো বিতরণ, বিচ্ছুরণ করে যাচ্ছে বিশ্বময়৷ দেশ -জাতি রাষ্ট্র উপকৃত হচ্ছে কওমি মাদরাসার অবদানে৷ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রয়োজন দীনি শিক্ষার দূর্গ কওমি মাদরাসার৷ এই মাদরাসা সম্পর্কে সচ্ছ ধারণা দেওয়া উচিৎ যারা নিজ হৃদয়ের টুকরোকে পাঠেয়েছেন আল্লাহর পথে৷ ফি সাবিলিল্লাহে৷ যারা "মুহাররার" আল্লাহর পথে৷
কওমি মাদরাসা সকল তথ্যসন্ত্রাসের মোকাবেলা করে একুশ শতকের চাহিদা পূরণে আরও কার্যকর, গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে এই প্রত্যাশা৷ দেশের ভালোবাসা, সুনাগরিক গঠন এবং ঈমান ও আযাদীর লড়াই অজেয় সৈনিক উপহার দেবে এই দুআ দরবারে ইলাহীতে৷ অভিভাবকগন সৌভাগ্যের অধিকারী যারা শত সমস্যার পরও নিজ সন্তানকে পাঠিয়েছেন কওমী মাদরাসায়৷ প্রতিটি মাদরাসায় বছরে কমপক্ষে দুইবার অভিভাবক সম্মেলন হবে এই আশা৷
-পরিচালক, ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ