এ এস এম মাহমুদ হাসান : সম্প্রতি আরটিভিতে সম্প্রচারিত হলো নাটক রেইনবো। নাকটটি ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নাকটির আলোচনা ও সমালোচনা এক তুঙ্গে। রেইনবো নাটকের মূল উপাদান সমকামিতা ও সমকামীদের প্রতি ভালোবাসা। সমকামিতাকে বৈধতা দিয়ে তৈরি চিত্রনাট্যটি অবলিলায় প্রচারিত হলো বাংলাদেশের মত রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার দেশে। নাটকে সমলিঙ্গের সাথে যৌনতায় শুধু উৎসাহ দেয়া হয় নি; বরং তাকে একটি একে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করার একটি ঘৃণ্য প্রচেষ্টাও লক্ষ্য করা গেছে।
পশ্চিমা বিশ্বের নষ্টামি ও বিভৎস বিকৃত চরিত্রের সমর্থনে প্রস্তুত এ নাকট এ দেশের মিডিয়া প্রচারিত হওয়ায় হতবাক হয়েছেন দেশের সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাটকটি নির্মাণ করেছেন আশফাক নিপুন। নাটকের স্পন্সর দেশের শীর্ষ টেলিকম কোম্পানি গ্রামীণফোন।
ফজিলতে পাশ না করলে এবার থেকে দাওরা পরীক্ষা দেয়া যাবে না
বিতর্কিত এ নাটকে সমকামীদের প্রতি সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। দেখানো হয়েছে, একজন আদর্শবান স্ত্রীর দায়িত্ব হলো স্বামী যদি সমকামী হয় তাহলে সে তার সমকামী স্বামীর সমকামী বন্ধুকে নিয়ে একসাথে সংসার করবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নাটকটিকে নিয়ে চলছে ব্যপাক সমালোচানা। ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে অনেকের মনে। সমালোচনাকারীরা বলছে, সমকামিতা পৃথিবীর সব ধর্মে নিষিদ্ধ। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক জাতি এ অপরাধের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসের পথে চলছে পশ্চিমা বিশ্ব। পশ্চিমা বিশ্বের নির্লজ্জ সমকামিতা দেশগুলোর চারিত্রিক অধঃপতনের কারণ। সমকামিতার কারণেই সেখানে পারিবারিক ব্যবস্থা আজ বিলুপ্তির পথে। এমন ধ্বংসাত্মক একটি বিষয় কোনো সুস্থ বিবেকবান মানুষ সমর্থন করতে পারে না।
পবিত্র কুরআনেও আল্লাহ তায়ালা সমকামিতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং সমকামিতায় লিপ্ত হওয়ায় পূর্ববর্তী একটি জাতির ভয়াবহ পরিণতির কথা তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। এ দেশের অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ বিরোধী সমকামিতার প্রচার ও প্রশ্রয় কোনোটাই চায় না এ দেশের মানুষ। শুধু ইসলাম ধর্ম নয়; পৃথিবীর কোনো ধর্মই সমকামিতা সমর্থন করে না। তাই সাধারণ অর্থে এ দেশের আপামর জন সাধারণ রেইবোর মতো নাকট প্রচারে হতাশ ও ক্ষুব্ধ।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনেও সমকামিতা নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোনো পুরুষ, নারী বা জন্তুর সাথে প্রকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করেন, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এ ধারায় বর্ণিত অপরাধীরূপে গণ্য হবার জন্য যৌন সহবাসের নিমিত্তে অনুপ্রবেশই যথেষ্ট বিবেচিত হবে।
[Section 377. Unnatural offences-- Whoever voluntarily has carnal intercourse against the order of nature with any man, woman or animal, shall be punished with imprisonment for life, or with imprisonment of either description for a term which may extend to ten years, and shall also be liable to fine.
Explanation-- Penetration is sufficient to constitute the carnal intercourse necessary to the offence described in this section.]
এই ধারার অধীনে সমলিঙ্গ মানুষের মধ্যে পরস্পর যৌন-সহবাস, পায়ুকাম এবং পশ্বাচার (পশুর সাথে নর বা নারীর পায়ু বা যোনিপথে সংগম) শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এধরনের অপরাধ স্বেচ্ছায় করলেও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
সমকামিতা শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নিষিদ্ধ নয় বা নৈতিকতার মাপকাঠিতেই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য নয়। বরং তা দেহের রোগ-ব্যাধির উৎসও। বিশ্বের কোনো সুস্থ সমাজে এই বিকৃত, নোংরা কালচারের বৈধতা নেই।
দেশের সাধারণ মানুষের চেতনা ও মূল্যবোধ বিরোধী একটি নাটক প্রচারের ছাড়পত্র পেল সে প্রশ্নই এখন সর্বত্র। ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় আইনে যা নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাকে উৎসাহ দেয় এমন নাটক প্রচারের অনুমোদন কিভাবে পায়?
বিশ্লেষকগণ মনে করেন, এক শ্রেণির অসাধু, বিকৃত, রুচিহীন মন মনসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠা নাট্যকার ও চিত্র পরিচালকরা হীন স্বার্থে এসব কাজ করে যাচ্ছে। তারা এ দেশের হাজার বছরের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ধ্বংস করে পশ্চিমা সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।
তারা আরও বলেন, সমকামীদের প্রতি এমন সহমর্মিতা প্রদর্শন করা হলে তা সামাজিক অধঃপতনকে তরান্বিত করবে।
এখন দেশের সচেতন মহলের দাবি হলো, এমন বিকৃত মানসিকতা ও চরিত্রে নির্মিত রেইনবো নাটকের ছাড়পত্র দেয়ায় সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
-এআরকে