সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

স্মৃতির আয়নায় মাওলানা ওজিউল্লাহ বিন আমজাদ আলী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হানিফ আল হাদী

আজ পাঁচ শাওয়াল ১৪৩৮। স্মৃতির ডায়েরিটা উল্টে এক বছর পিছনে গেলাম। ১৪৩৭ হিজরির এই দিনে (সোমবার, ১১ জুলাই ২০১৬) একটি শহিদি মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেছিল কাকরাইল মসজিদের সামনের ফুটপাথটি।

পুলিশ রিকোজিশনের ব্রেকফেল-করা বাসের ধাক্কায় দিদারে এলাহী লাভ করেছিলেন মাওলানা ওজিউল্লাহ বিন আমজাদ আলী নামের এ যুগের অবাককরা দুনিয়াবিমুখ এক মুবাল্লেগ আলেম। যার জীবনের পরতে পরতে রয়েছে শিক্ষণীয় ঘটনার সমাহার। দুনিয়ায় বেঁচে থাকার উপায়-উপকরণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সারা জীবনে কোন পেশা গ্রহণ করেন নাই, এমন আরেকটি নাম না শুনেই তো দাড়িতে পাক ধরল! জানি না, বাকি হায়াতে শুনব কি-না?

কুমিল্লা নূর মসজিদ মারকাজ মাদরাসায় মিজান জামাতে দাখেলা নিয়ে তা‘লিমের পাশাপাশি দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সাথে যে সম্পৃক্ততা শুরু হয়; জীবনের শেষ অবধি তা শুধু চক্রবৃদ্ধি হারের ন্যায় বৃদ্ধিই পেয়েছে, এতটুকুও কমেনি। মেহনতের দরিয়ায় কভু ভাটা পড়েনি। ৪৫-৪৬ বছর (নূর মসজিদ-এ দাখেলা পাওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত) শুধু জোয়ারের পানি যেমন ফুলে, তেমনি ফুলেছে হজরত মাওলানার “খাদেমী-তাবলিগী” জীবন।

হজরতজী মাওলানা এন‘আমুল হাসান ও হজরত মাওলানা সাঈদ খান সাহেব রহ.-এর খেদমতে কেটেছে জীবনের ১৭-১৮ বছর। এছাড়াও হজরত মাওলানা কারী তৈয়ব, শাইখুল হাদিস হজরত মাওলানা জাকারিয়্যা, মুফতি ওবায়দুল্লাহ, মাওলানা হারুন (মাওলানা সা‘দ সাহেবের আব্বা), মাওলানা এজহারুল হাসান, হজরত মাওলানা আতাহার আলী, হজরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. এদের মতো মহান ব্যক্তিদের খেদমতের সৌভাগ্যও তিনি লাভ করেছেন।

ছাত্র জীবনে সাত বছর (হেদায়েতুন্নাহু-দাওরা) নিজামুদ্দিন মারকাজে রুটি বানানোর খেদমতও তাকে হাতছানি দিয়েছে তিনি লাব্বাইক বলেছেন। নাহবেমির শেষে রমজানে সাহারানপুরে বিশ দিন সময় লাগানো দিয়ে শুরু হয়ে দাওরার পর এক সালের তাশকিলের মাধ্যমে পূর্ণ সমর্পণ। বিদেশ সফরই করেছেন প্রায় শতবার। ২১ বার হজ ও ২০০ বারের অধিক ওমরা করেছেন।

সালের সফর শেষ হওয়ার পর থেকে মদিনা ও কাকরাইল মারকাজে মুকিম হিসেবেই কাটিয়েছেন সারা জীবন। ইন্তেকালও করেছেন মুকিম হিসেবে, কাকরাইলের গেইটে। শেষ রমজানেও মুগদাপাড়া এক মাদরাসার ছাত্র জামাতে জিম্মাদার হিসেবে চিল্লার সফরে ছিলেন। চিল্লা থেকে ফিরে আর বাড়িও যান নাই। দাওয়াত ও তাবলিগের নিসবতে মদিনায় ও তুরস্কে কারাবন্দিত্বের সুন্নাতও জিন্দা করেছেন। তুরস্কের দ্বিতীয় সফরে পাহাড়ে উঠিয়ে ২৮০০ ফুট উপর থেকে ফেলে দেওয়ার পরও যে সামানাপত্রসহ তিন সাথীসহ অক্ষত ছিলেন। এ ঘটনা যখনই মনে পড়ে আমার শরীর শিউরে উঠে।

হজরত মাওলানা সাঈদ খান সাহেব রহ.-এর ইন্তেকালের পর হজরত মাওলানার সাথে স্বপ্নযোগে একদিন মোলাকাত হয়। তিনি জামার উপর ধবধবে সাদা একটি ছদরিয়্যাহ (কটি) পরা ছিলেন। ছদরিয়্যার দুই পকেটে দুই হাত দিয়ে এক পকেট থেকে দুটি নোট বুক যাতে আলমী সাথীদের নাম লেখা ছিল, অন্য পকেট থেকে কিছু ডলার বের করলেন। হজরত মাওলানাকে দিয়ে বললেন, এই নাও, সারা দুনিয়ার সাথীদের নাম দিয়ে দিলাম।দাওয়াত নিয়ে তুমি সফর করতে থাক। আর এগুলোও (ডলার) রাখ সফরে কাজে লাগবে। এই স্বপ্নের পর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত হজরত মাওলানা অধিকাংশ সময় সফরেই ছিলেন।

হজরত মাওলানা প্রায় সময় বলতেন, “বান্দার দানে কুলায় না/আল্লাহর দান ফুরায় না।” মুসতাজাবুদ্ধসঢ়; দাওয়াহ এই বুজুর্গ নিজ এলাকায় রাস্তাঘাট পাকা, কালভার্ট তৈরি, বিদ্যুৎ আনার ব্যবস্থা, একাধিক মাদরাসা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করাসহ বিভিন্ন প্রকার খেদমতে খালকের সাথেও জড়িত ছিলেন। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সন্তান/জামাতারাও (চার ছেলে তিন মেয়ে) দেশে-বিদেশে দাওয়াতের মেহনত, বিভিন্ন প্রকার দ্বীনি কাজ ও খেদমতে খালকের সাথে জড়িত রয়েছেন।

বড় ছেলে মুফতি সালমান আহমাদ মেহনতের সাথে খুব করে লেগে আছেন। দীনিয়্যাত বাংলাদেশের প্রধান (স্কুলগামী বাচ্চাদের দ্বীন শিক্ষার যুগান্তকারী এক সিলেবাস) আলনূর কালচারাল সেন্টার বাংলাদেশ শাখার নির্বাহী পরিচালক ছাড়াও একাধিক মাদরাসা-মসজিদ প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। যা বাবার দু‘আ কবুলের নিদর্শন।

এক রাতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ওজিউল্লাহ! আব্দুল কাদের (ময়মনসিংহের পুরানা মেহনতের সাথী। তখন কাকরাইলে অবস্থান করছিলেন) শীতে কষ্ট পাচ্ছে। সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠে নিজের চাদর হাদিয়া দিয়ে দিয়েছেন আব্দুল কাদের ভাইকে। সত্যিই বড় ঈর্ষণীয় সৌভাগ্য। এসব মনীষীর ত্যাগের বিনিময়েই আজ সারা বিশ্বে দাওয়াতের মেহনত চালু হয়েছে। কোটি আল্লাহভোলা বান্দা তার মাওলার পরিচয় পাচ্ছে। অজস্র পাপীতাপী সুন্নাতী জিন্দেগির শীতল ছায়ায় ফিরে আসছে। ইয়া আল্লাহ! হজরত মাওলানাসহ পূর্ববর্তীদের মেহনত কবুল করুন। আমাদেরও রাখুন সরল সঠিক পূণ্যের পথে। আমিন।

লেখক : প্রবন্ধকার, অনুবাদক, ভাষা প্রশিক্ষক

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ