ইসমাইল পাশা
তুর্কি লেখক ও বিশ্লেষক
সন্ত্রাসবাদ সমর্থন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্টের অভিযোগে গত ৫ জুন কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরবসহ কয়েকটি মুসলিম দেশ। এই সঙ্কটের মধ্যেই দোহাকে ১৩ দফা শর্ত দিয়েছে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন দেশগুলো। এ সব শর্ত মানার জন্য ১০ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। কুয়েতের মধ্যস্থতায় দেয়া এসব শর্তে তুরস্কের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বন্ধ করার শর্তটিও রয়েছে। আর তুরস্কের কাছে আবেদন করা হয়েছে যাতে তুরস্ক কাতারে তার সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দেয়। কাতারকে বিচ্ছিন্ন করার প্রেক্ষাপটে তুরস্কের কাতারের পাশে দাঁড়ানোকে বড় ধরনের ‘বিশৃঙ্খখলা’ আখ্যায়িত করা হয়েছে।
উপসাগরীয় অঞ্চলের সংকটের প্রাথমিক কারণ ছিল, ২৫ মে কাতারের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘কাতার নিউজ এজেন্সি’কে হ্যাক করে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির একটি বক্তব্য প্রকাশ করা। যেখানে ইরানের ব্যাপারে আরব দেশগুলোর নীতির সমালোচনা করা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না বলে মন্তব্য করা হয়।
এই মিথ্যা প্রচারিত বক্তব্যর ওপর ভিত্তি করে অবরোধ আরোপকারী দেশগুলো বলে, নিশ্চয় কাতার উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি)ভুক্ত দেশগুলোর সমালোচনা করছে। আর যেহেতু মিথ্যার রসি ছোট ছিল তাই খেলাটা দ্রুতই পরিস্কার হয়ে গেল। অবরোধ আরোপকারী দেশগুলো কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করার জন্য পুরোনো নথি-পত্র খুঁজতে লাগল।
কাতারকে অভিযুক্ত করা হলো, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন ‘হামাস’কে সহযোগিতা করার অভেযোগে। হামাস ইহুদিবাদী দখলদারদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু অবরোধ আরোপকারী দেশগুলো হামাসকে একটি সন্ত্রাসী দল মনে করে।
যাই হোক কাতারের কাছে তাদের দাবি, তুর্কি সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দেয়ার। বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালিদ বিন আহমাদ আল খলিফা তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টুইটারে বলেছেন, “কিছু আঞ্চলিক ক্ষমতা ভুল করবে যদি মনে করে হস্তক্ষেপই সমস্যার সমাধান দেবে। সেসব দেশের জন্য উচিত, “বিদ্যমান আঞ্চলিক পদ্ধতি”কে সম্মান জানানো। কারণ সেটাতেই আগত সমস্যার সমাধান মিলবে”।
তিনি আরও বলেন, “কাতারের সঙ্গে বিরোধ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত; এটি সামরিক নয়। কিন্তু বিদেশি সৈন্য ও সাঁজোয়া যান আনা সামরিক উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে।”
বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টুইটবার্তায় ‘আঞ্চলিক শক্তি’ বলতে তুরস্ককে বুঝেয়েছেন, আর “বিদ্যমান আঞ্চলিক পদ্ধতি” বলতে তিনি গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি)কে বুঝিয়েছেন। কিন্তু অদ্ভুদ ব্যাপার হলো, একই মন্ত্রী দুই সপ্তাহ আগে তুরস্ক সফরের সময় বলেছেন, কাতারে সামরিক ঘাটি উপসাগরীয় সব দেশের নিরাপত্তার জন্যই। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, আঙ্কারা সংকট নিরসনে যে পটভূমিতে চলছে, তার বালিগুলো বিক্ষিপ্ত। তার বক্তব্য ও বিবৃতি বিশ্বাসযোগ্য করাতে তাড়াহুড়া করা উচিত নয়।
তুরস্কের কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দেয়া ও দোহা ও আঙ্কারার মাঝের সামরিক সহযোগিতা বন্ধ করে দেওয়ার যে ধারাটি এই দাবিগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো, তা শুধু অবরোধ আরোপকারীদের একটি দেশের চাহিদার ভিত্তিতে। এতে তারা ইঙ্গিত করছেন মিশরেরর দিকে। কথাটি খু্বই আশাবাদী ও কিন্তু বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। কারণ মিশরের জন্য অসম্ভব যে, তার একটি আকাঙ্ক্ষা সৌদি আরব ও আমিরাতের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে। বরং বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার টুইটাবার্তার মাধ্যমে একথা নিশ্চিত করছে, কাতারকে অবরোধকারী সবগুলো দেশই কাতারে তুরস্কের সামরিক ঘাটি নিয়ে বিরক্ত।
তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় কাতারের মাটিতে তুরস্কের সামরিক ঘাটিতে এই বিরক্তির কারণ কী? অথচ এই কাতারেই রয়েছে মার্কিন সামরিক ঘাটি, ব্রিটিশ সামরিক ঘাটি, ফরাসি সামরিক ঘাটি। সেগুলোর প্রতি কারো কোনো আপত্তি নেই কেন?
এর কারণ হয়তবা, এই দেশগুলো আর উপদ্বীপে কোনো তুর্কি সামরিক ঘাটি চায় না। কারণ তাতে তাদের ধারণা মতে এ অঞ্চলে উসমানি সম্রাজ্য ফিরে আসার আশংকা রয়েছে।
দ্বিতীয় সম্ভাবনা এও হতে পারে, এই চারটি দেশ কাতারে সামরিক হস্তেক্ষেপের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আলে সানিকে সড়িয়ে দিয়ে অন্য আরকজনকে তার স্থানে বসাতে চান তারা। কিন্তু কাতারে তুর্কি সামরিক ঘাটি নির্মাণ ও সৈন্য প্রেরণ তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধান প্রতিবন্ধক।
২০১৪ সালে দ্বিপাক্ষিক একটি চুক্তির ভিত্তিতে কাতারে নির্মিত হয় তুর্কি সামরিক ঘাটি। এটি সম্পূর্ণ কাতার ও তুরুস্কের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তা বন্ধ করে দেয়ার শর্ত কাতারের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ এবং তার আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর শামিল। কেননা দোহা তার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সামরিক ও বেসমারিক পর্যায়ে সহযোগিতা ও চুক্তির ক্ষেত্রে স্বাধীন। অন্য দেশের উচিত তার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানো।
সামরিক ঘাটি বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে তুরুস্কের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তায়্যেব এরদোগান ঈদের নামাজের পর দেয়া তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘নিশ্চয় তুর্কি সৈন্য প্রত্যাহার কারার আবেদন ও তুর্কি ঘাটি বন্ধ করে দেয়ার আবেদন উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে হস্তক্ষেপের শামিল। এই আচরণ তুরস্কের প্রতি সম্মানের অভাব হিসেবে বিবেচিত। আর এটি স্পষ্ট যে, তুরস্ক কাতারকে সহযোগিতা বন্ধ করবে না এবং তার ঘাটিও বন্ধ করবে না যতক্ষণ না কাতার আাবেন করে।
আরবি ২১ থেকে প্রবন্ধটি অনুবাদ করেছেন মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব
ইজারার মাধ্যমে বিনিয়োগের হুকুম ও নীতিমালা
কওমি মাদরাসার নতুন শিক্ষাবর্ষ: কোথায় কখন ভর্তি