জাতির আধ্যাত্মিক রাহবার উলামায়ে কেরামকে আমরা শুধু একজন দাঈ হিসেবেই চিনি। তাদের বিস্তৃত জীবনের বাইরের অংশটুকুই আমরা জানি। কিন্তু একজন বাবা হিসেবেও তারা যে ছিলেন অতুলনীয় এবং পরিবার গঠনেও যে তারা আমাদের আদর্শ হতে পারেন তা হয়তো কখনো ভেবে দেখিনি। আমাদের ভাবনার আড়ালে থাকা সেসব শ্রেষ্ঠ বাবাদের পাঠকের সামনে তুলে ধরছে ourislam24.com।
ধারাবাহিক স্মৃতিচারণের ৭ম পর্বে থাকছেন আঞ্জুমানে তা'লীমুল কুরআন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শাইখুল কোররা মাওলানা আলী আকবর সিদ্দিক রহ.। প্রিয় বাবাকে নিয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন তারই ছেলে মাওলানা ইমদাদুল হক নোমানী
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জামিল আহমদ।
শাইখুল কুররা মাওলানা আলী আকবর সিদ্দিক মুহতারাম আব্বা রাহ. ছিলেন একনিষ্ঠ একজন খাদিমে কুরআন। প্রতিষ্ঠা করেন আঞ্জুমানে তা’লীমুল কুরআন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কুরআন শিক্ষাবোর্ড। সারাদেশে ষোলশ’রও বেশি শাখা কেন্দ্রে সহিহ-শুদ্ধ কুরআন শিক্ষার খিদমত চলছে। দেশের বাইরেও বিভিন্ন দেশে আঞ্জুমানের কাজ চলছে। আব্বা রাহ.-এর ব্যস্ততার সবটুকু ছিলো আঞ্জুমানকে নিয়ে। মৃত্যু পর্যন্ত কুরআনের খেদমতে নিরলস কাজ করে গেছেন। এতো ব্যস্ততার মধ্যেও বাবা সবকিছুর খবর রাখতেন। আজকাল আমরা পুরো টিম মিলে যা করতে পারি না; বাবা তা একাই পারতেন। ফ্যামেলির খবরে তার কমতি হতো না। আমরা সন্তোষজনক সময় পেতাম বাবার কাছ থেকে। বিশেষ করে আমার ছেলে-মেয়ের খবরও নিতেন আগ্রহভরে।
বাবা দীনের কাজে ব্যস্ত থাকায় তার সাথে ভিন্ন বিষয়ে কথা বলার ফুরসত থাকতো কম। যখনই বাবার কাছে বসতাম আঞ্জুমান নিয়ে কথা বলতেন। সারাবিশ্বে কুরআনের আক্ষরিক নিরক্ষরমুক্ত করার সুদূরপ্রসারী প্ল্যান নিয়ে কথা বলতেন। আমি মনযোগ দিয়ে তাঁর কথাগুলো শুনতাম। আর তার হৃদয়ের আকুলতা অনুভব করতাম। একজন মানুষের কতোটা ইখলাস থাকলে এমন চিন্তা করা যায়? জাতিকে নিয়ে আন্তরিক হওয়া যায়। তাও কুরআনের তালিম নিয়ে। বাবার মেজাজ ছিলো সবসময়ই ফুরফুরে। কখনো রুক্ষতা বা বিরক্তির ছাপ তার মাঝে প্রকাশ পেতো না। আদর্শিক একটা গাম্ভীর্যতা তার মাঝে ছিলো।
বাবা সবসময়ই আমাদের বড় করে প্রতিষ্ঠা করতে চাইতেন। তবে তা দীনে ইলমের সঙ্গে। ছেলে-মেয়েদের কুরআনের সহিহ তালিমের খেদমত করার জন্য প্রশিক্ষিত করে তোলার ফিকির করতেন সর্বদা। বিশেষ করে তাঁর মিশন ও ভিশন যেনো কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। আমরা ৮ ভাই-বোন। চার ভাই চার বোন। আল্লাহর ইচ্ছায় ও বাবার প্রচেষ্টায় সবাই আলেম-কারী হাফয হয়েছে। বোনরাও বিশেষ করে রমজান মাসে কুরআন শিক্ষার কাজে ব্যস্ত থাকে। বাবা হিসেবে শাইখুল কুররা শুধু আমাদের জন্য নয়; পুরো জাতির জন্য এক নিয়ামত।
বাবার উৎসব বলতে কিছু ছিলো না; যা ছিলো আঞ্জুমানকে নিয়ে। কোথাও নতুন একটা কুরআন শিক্ষার কাজ শুরু হলে বাবা খুশি হতেন। উৎসবমুখর হতো তাঁর চারপাশ। মূলত এটাই ছিলো বাবার উৎসব। ঈদে আমরা সবাই একসাথে হতে পারতাম। সবাইকে একসাথে কাছে পেলে বাবা খুশি হতেন। আমরাও বাবাকে নিয়ে আনন্দে থাকতাম। বাড়িতে যে ক’দিন থাকতেন হাসিখুশি মেজাজে কাটাতেন।
বাবার আদর না আমি পেলে এতুটু আসতে পারতাম না; তাঁর নির্মল স্নেহছোঁয়ায় বড় হয়েছি। একইভাবে আন্তরিক শাসন না থাকলেও এ পর্যায়ে এসে ঠিক থাকতে পারতাম না। আদর আর শাসনের মিশেলে বাবা ছিলেন আমাদের জন্য বর্ণিল পথিকৃৎ।
বাবাকে নিয়ে আমার আলাদা স্মৃতি নেই। বাবার পুরো জীবনটাই ছিলো স্মৃতিময়। তাঁর জীবনের নির্দিষ্ট একটা বিষয়কে টেনে আনা দুষ্কর। তারপও কিছু স্মৃতি আছে যা ভুলেও ভুলার নয়। হৃদয়কে নাড়া দেয় হরদম। বাবার মিশন ছিল মাহে রমজান কেন্দ্রীক। তাই এ মাসের প্রতিটি কাজে-ফিকিরে বাবার স্মৃতি ভেসে ওঠে হরদম হৃদয়ের মণিকোঠায়।
আগের পর্বগুলো
ঈদের সময় বাবা আমাদের সব যন্ত্রণা সহ্য করতেন
‘বাবার চিঠি পাঠানো দেখে ছাত্ররা বলতো এমন সন্তানপাগল লোক আর দেখিনি’
বাবার মৃত্যুর পর কোনো বিরোধ লাগলে তা নিষ্পত্তির জন্য পারিবারিক কমিটি করে গেছেন
বাবা হিসেবে শায়খ ছিলেন অতুলনীয়