বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদকে সপরিবারে উচ্ছেদ করার পর গুলশানের সেই বাড়িতে আবার অভিযান শুরু করেছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের লোকজন।
আজ (রোববার) সকাল নয়টার দিকে রাজউকের লোকজন সেখানে যান।
গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খান নুরুল ইসলামের ভাষ্য, রাজউকের সঙ্গে পুলিশের লোকজনও আছেন। এদিকে, বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান জানিয়েছেন অভিযান এখনো চলছে।
আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করা গুলশান–২ নম্বরের ১৫৯ নম্বর বাড়িটি ৭ জুন ছাড়তে হয় মওদুদ আহমদকে। রাজউকের সম্পত্তি শাখা বাড়িটি বুঝে নেয়। বাড়ি থেকে মালামাল সরানোর কাজ চলার মধ্যেই ওই দিন সন্ধ্যায় একটি প্রাইভেট কারে করে মওদুদ আহমদ সেখান থেকে চলে যান। ওই বাড়ির মালামাল গুলশান-২-এর ৫১ নম্বর সড়কের ২ নম্বর বাড়ির ছয়তলা ভবনে মওদুদ আহমদের নিজস্ব একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওই সময় বাড়িটি নিয়ে কী করা হবে—জানতে চাইলে রাজউকের পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার অলিউর রহমান কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছিলেন। আইনগতভাবেই বিষয়টি এগোবে বলে তিনি জানান।
গত ৪ জুন গুলশানের বাড়ির মালিকানা বিষয়ে করা রিভিউ খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
গত বছরের ২ আগস্ট মওদুদ আহমদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির নামজারির নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজউকের আপিল গ্রহণ করেন আপিল বিভাগ। গত ৩০ আগস্ট এ মামলার ৮০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে পরে রিভিউ করেন মওদুদ।
এক আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট ওই বাড়ি মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করার জন্য হাইকোর্ট রায় দেন। রাজউক এ রায়ের বিরুদ্ধে ‘লিভ টু আপিল’ দায়ের করে ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ আপিল বিভাগ রাজউককে আপিলের অনুমতি দেন। এরপর চলতি বছর এ মামলার শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাড়িটি নিয়ে দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ রাজধানীর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তাঁর ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
২০১৪ সালের ১৪ জুন এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেন বিচারিক আদালত। এর বিরুদ্ধে তাঁদের আবেদন গত বছরের ২৩ জুন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ‘লিভ টু আপিল’ করেন মওদুদ আহমদ। এ আবেদনের শুনানি শেষ হওয়ার পর রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার দুটি বিষয়ে রায় দেন আপিল বিভাগ।
দুদকের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাড়িটির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির (রাজউক) কাছ থেকে এক বিঘা ১৩ কাঠার এ বাড়ির মালিকানা পান এহসান। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী অস্ট্রীয় নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন এহসান। তাঁরা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।
এর পর ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট মওদুদ তাঁর ইংল্যান্ডপ্রবাসী ভাই মনজুরের নামে একটি ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেন বলে মামলায় অভিযোগ করে দুদক।