শফিকুল ইসলাম সোহাগ: জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে কদর বাড়ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থাকা নিবন্ধিত চারটি ইসলামী দল ও জোটের। এগুলো হলো চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন, মুফতি ফজলুল হক আমিনী প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোট, হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত খেলাফত আন্দোলন ও শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
রাজনৈতিক সূত্রগুলোর তথ্যানুযায়ী, নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের আকার বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে নতুন জোট গঠন করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ জোটে নিবন্ধিত ইসলামী ফ্রন্টসহ অনেক অনিবন্ধিত ইসলামী দল রয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জোট ও ভোট নিয়ে নানা হিসাব কষছে দলগুলো। জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসকে কাছে টানতে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অন্যদিকে ভোটের মাঠে নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে পৃথক একটি নির্বাচনী জোট গঠনেরও চেষ্টা চালাচ্ছে এসব দল। এমনকি অন্য জোটের শরিক ও বাইরে থাকা ইসলামী দলগুলোকেও সম্ভাব্য জোটে ভেড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় যোগাযোগ করা হচ্ছে। এসব জোটে গেলে সম্মানজনকসংখ্যক আসন ছেড়ে দেওয়ারও আশ্বাস মিলছে। ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘আমরা ইসলামকে রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এতে যারা রাজি হবে, তাদের সঙ্গে জোট হতে পারে। পৃথক একটি ইসলামী জোট করার চিন্তা আমাদেরও আছে।’
জানা গেছে, সম্প্রতি জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে গঠিত ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’ ঘোষণার আগে তাতে যোগ দেওয়ার জন্য ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগ চালায়। তবে নানান শর্তের কারণে তাতে সাড়া দেয়নি এসব দল। এর পরও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে জাতীয় পার্টি।
বাবা হিসেবে শায়খ ছিলেন অতুলনীয়
সর্বশেষ ১১ জুন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ দলের ওলামা পার্টির ইফতারে ইসলামী দলগুলোকে সম্মিলিত জাতীয় জোটে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি তার ক্ষমতায় থাকার সময় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করাসহ ইসলামের জন্য বেশকিছু পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘আমরা ইসলামী দলগুলো নিয়ে আলাদা একটি প্লাটফরম তৈরি করতে চাই। জোট না হলেও নির্বাচনী সমঝোতা গড়ে তোলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এতে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলনসহ ছোট ছোট ইসলামী ও সমমনা বেশকিছু দলকে যুক্ত করার কথাবার্তা চলছে। তবে এখনো চূড়ান্ত কিছুই হয়নি। এ ছাড়া পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এককভাবে ইসলামী ঐক্যজোটের পক্ষ থেকে সব আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে এলেও এখনো ওই জোট থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। একইভাবে ক্ষমতাসীন জোট থেকেও নানাভাবে যোগাযোগ করা হয়। সম্প্রতি জাতীয় পার্টির জোট গঠনের সময়ও আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।’
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় অফিস ও বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল বলেন, ‘এরশাদের জোটে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও আমরা তাতে যাইনি। মহাজোটের পক্ষ থেকেও বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
তবে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃত্বে তাদের দলসহ বড় দুই জোটের বাইরে থাকা নিবন্ধিত তিন ইসলামী দল নিয়ে একটি জোট গঠনের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এই জোটগত নির্বাচন না হলে এককভাবে তারা শতাধিক আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, ‘বিএনপি বা মহাজোটে যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নেই। তবে সম্প্রতি ইসলামী ঐক্যজোটের উদ্যোগে একটি ইসলামী জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। এতে তাদের থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ’ তবে জোটগত না হলে এককভাবে অর্ধশতাধিক আসনে খেলাফত আন্দোলন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মুজিবুর রহমান হামিদী উল্লেখ করেন।
প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ প্রতিদিন থেকে নেয়া