উবায়দুর রহমান খান নদভী
শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক
ছোট মনের মানুষ নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত। মহানবী (সা:) বলেছেন, কৃপন বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। অনেকে বোঝে না যে কৃপন কাকে বলে। বাংলাদেশে নিজ দৃষ্টিকোন থেকেই মানুষ একে অপরকে কৃপন আখ্যা দেয়। অনেক সময় লোভী ও অপব্যয়কারী ব্যক্তিরা মিতব্যয়ী বা হিসেবী মানুষকে কৃপন বলে দোষারোপ করে। অভাবী বা ঋণগ্রস্ত মানুষকেও বাইরের লোকেরা কৃপন আখ্যা দেয়। যারা স্বল্প আয়ের মানুষ বা দরিদ্র কিন্তুু আল্লাহর দেয়া ভাগ্যকে মেনে নিয়ে সন্তুষ্টচিত্তে চলেন, যাদের চালচলন বা চেহারা দেখে বোঝা যায় না যে তারা অভাবী দরিদ্র, তাদেরও মানুষ কৃপন বলে ফেলে। এ জন্য কৃপন কারা তা জানা প্রয়োজন। শরীয়তের দৃষ্টিতে কৃপন ওই ব্যক্তি যে শরীয়ত নির্ধারিত আর্থিক ইবাদতগুলো সম্পাদন করে না। যেমন, জাকাত দেয়না, সাদকা করেনা প্রয়োজনে মানুষকে সহায়তা করে না, নিজ ব্যক্তি, পরিবার সমাজ ও ধর্মের প্রতিও শরীয়ত নির্দেশিত দায়িত্ব পালন করে না। এ ধরনের কৃপন সম্পর্কেই বলা হয়েছে যে, সে বেহেশতে যাবে না। (আল হাদীস)।
যারা জাহান্নামে যাবে তাদের ফেরেশতারা প্রশ্ন করবেন, কোন্ দোষে তোমরা জাহান্নামে এলে? জবাবে জাহান্নামীরা বলবে, আমরা নামাজ পড়তাম না। অসহায়কে খাদ্য দিতাম না, অভাবীদের সাহায্য করতাম না। (আল কোরআন) অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, মৃত্যুর সময় মানুষ বলবে, হে আল্লাহ, আমাকে আরেকটু সময় দিন। আমি দান সদাকা করে আসতে চাই। আমি নেক লোক হয়ে আসতে চাই। তখন জবাবে বলা হবে, মৃত্যুর নিধারিত সময় এসে গেছে এখন এক মুহূর্তও আগ পিছ করা হবে না। (আল কোরআন)।
প্রিয়নবী (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তির হাত খোলা না তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। অন্য হাদীসে এসেছে, দানশীল লোক ইবাদত কম করলেও অপর ইবাদতকারী ছোট মনের মানুষের চেয়ে বেশি মর্তবা পাবে। প্রিয়নবী (সা:) নিজে ছিলেন পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দানবীর। নিজে না খেয়ে থেকেও অর্জিত সম্পদ মানুষকে দিয়ে দিয়েছেন। ঘরে কিছু না থাকলেও বলেছেন, বাজার থেকে বাকিতে প্রয়োজনীয় বস্তু নিয়ে যাও। আমি পরে দাম পরিশোধ করব। এমনটি তিনি অমুসলিমদের জন্যও করেছেন। তার ৬৩ বছরের পার্থিব জীবনে তিনি কোনদিন কোন প্রকৃত অভাবি ও ভিখারিকে ‘না’ বলেননি। ঋণ করে হলেও দান করেছেন। হাদীস শরীফে এসেছে, প্রতিবছর রমজান মাস এলে প্রিয়নবীর দানের হাত বেশি করে খুলে যেত এবং তা প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও বেশি গতিময় হত। তার হাতে সম্পদ থাকলে তিনি মানুষকে এমন দানই দিতেন যে, এ লোকটির আর অভাব থাকত না। যেমন একবার তিনি এক সাহাবীকে একটি বড় স্বর্ণের চাকা দিয়ে দিয়ে ছিলেন আরেক সাহাবীকে এক মাঠ ভর্তি ছাগল দিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও তিনি তার নিজ ও নিজ আহলে বাইত বা একান্ত পরিজনদের জন্য অভাব ও দারিদ্র্যকেই বেছে নিয়ে ছিলেন। তা কেবল উন্নত মানবিক বোধ জাগ্রত রাখার জন্য এবং কেয়ামত পর্যন্ত অভাবী উম্মতের সাথে সাযুজ্য ধরে রাখার জন্য। তার প্রিয় ওলী দরবেশ পীর ফকির শ্রেণীর জন্যও তিনি তার বেছে নেয়া দারিদ্র্যকেই পছন্দ করেছেন। এসবের বদলা তিনি পরকালে জন্য রেখে দিয়েছেন প্রিয়নবী (সা:) ইরশাদ করেছেন, দান সদাকা বালা মুসীবত রোধ করে। দান আল্লাহর ক্রোধ নির্বাপিত করে। দান ও জাকাত সম্পদকে ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচায়। সম্পদ থেকে জন্ম নেয়া বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে এবং সম্পদকে পবিত্র করে। জাকাত শব্দের অর্থই পবিত্র করা।
আমাদে সমাজে অর্থ সম্পদ যাদের কম তারাই বেশি দান খয়রাত করে। যাদের কোনরকম জাকাত ফরজ হয়েছে বেশির ভাগ সময় তাদেরই দেখা যায় জাকাত দিতে। কিন্তু যাদের ধন সম্পদ অফুরন্ত তারা দান করে না বললেই চলে। অনেকের উপার্জন হালাল নয় অথবা হালাল-হারাম মিশ্রিত তারা জাকাত দেন না। যারা হালাল উপায়েই বিত্তবান তারাও জাকাত দেয়ার বেলায় উদাসীন। নিয়ম মত হিসাব করে সঠিকভাবে জাকাত দেন এমন লোকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। যদি সবাই সঠিকভাবে জাকাত দিতেন তাহলে ৮ বছরে বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূর হয়ে যেত বলে ইসলামী অর্থনীতিবিদদের ধারণা।
ইসলামী অর্থব্যবস্থার অন্যতম চালিকাশক্তি জাকাত। শরীয়া অর্থনীতি ও জাকাত বিশেষজ্ঞদের বিবেচনায় বাংলাদেশের জাকাতযোগ্য ফসল, অর্থ-সম্পদ ইত্যাদির জাকাত বের করা হলে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নত দেশের রূপ পরিগ্রহ করবে। সামাজিক শান্তি-শৃংখলা হবে অতুলনীয়। অবশ্য সাধারণ ব্যবস্থাপনায় এ লক্ষ্য সফল হবে না। জাকাত ব্যবস্থাপনা করতেহবে সম্পূর্ণ শরীয়তসম্মত অর্থরিটির তত্ত¡াবধানে। রমজানের আরেকটি অনুসঙ্গ হচ্ছে সদাকাতুল ফিতর। অধিক মানুষ এটি দিতে পারে এর নিম্ন পরিমাণটি ক্ষুদ্র হওয়ায়। এবার যেমন ৬০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত ফিতরার নিম্ন ও ঊর্ধ্ব পরিমাণ। রমজান মাসে অনেকে জাকাত দেন কেবল ১ টাকায় ৭০ টাকার সওয়াব পাওয়া যায় বলে। যা উৎসাহিত করার মত বিষয়।
উদারতা দান ও সৌজন্যই মনুষত্বের বড় প্রতীক। এ দেশে অসংখ্য বড় লোক এমন আছেন যাদের অর্থ সম্পদ ও মানবিকতা ঈর্ষণীয়। এ ধরনের লোকের কথা হাদীস শরীফেও প্রিয়নবী (সা:) ইরশাদ করেছেন, বলেছেন, ঈর্ষনীয় ব্যক্তি সে যাকে আল্লাহ প্রচুর সম্পদ দিয়েছেন আর দু’হাতে খরচ করার মত অন্তরও দিয়েছেন।
বাংলাদেশের সব ধনী মানুষ যদি বড় মনের অধিকারী হতেন তাহলে অভাবী মানুষ শান্তি পেত। চরম দারিদ্র দূর হত। আল্লাহর গজব থেকেও জাতি রক্ষা পেত। ধনী মানুষ দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তি ও আজাব থেকেও রক্ষা পেতেন। কৃপন সাব্যস্ত হয়ে জাহান্নামেও প্রবেশ করতেন না। আমার পরিচিত কিছু লোক বাংলাদেশে এমনও রয়েছেন যারা পরিকল্পিতভাবে জাকাত দিয়ে, অন্যান্য দান বা সদাকা দিয়ে নিজ পরিজন, পরিবেশ, এলাকা ও জগতকে সাজিয়ে নিয়েছেন। পরিকল্পিত জাকাত দিয়ে নিজ এলাকার গৃহহীন মানুষদের ঘর বাড়ি করে দিয়েছেন, বহু ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছেন, ছোট ব্যবসা রিকশা গাড়ী করে দিয়েছেন। কেউ কেউ অফিসে লোক রেখেছেন পত্রিকার পাতায় চিকিৎসা আবেদন সংগ্রহ করে কেটে রাখার জন্য তাদের সবার খোঁজ-খবর নিয়ে টাকা পয়সা দেয়ার জন্য, দানের জন্য বিভাগ খুলে রেখেছেন রোগী অসহায় বিবাহ যোগ্যদের সাহায্যে করার জন্য। তাদের মনে শান্তি, তৃপ্তি ও নিরাপত্তাবোধ স্থাপিত হয়েছে। আশা করা যায় পরকালেও তারা পুণ্যবান ব্যক্তি হিসাবেই আল্লাহর দরবারে নীত হবেন। একবার জনৈক ব্যবসায়ী জাকাত দেয়ার জন্য এলাকায় স্লিপ বিতরণ করলেন, সময় মত বাছাইকরা লোকজন তার ইন্ডাস্ট্রির ভেতর জড়ো হলেন। সবাইকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে টাকা পয়সা দেয়ার পর দেখা গেল স্লিপ দেয়া হয়নি এমন অনেক লোকও ভেতরে চলে এসেছেন। ভদ্রলোক তখন তাদের সবাইকেই সাধারণ চাঁদা দিয়ে বিদায় করলেন যার পরিমাণ তার জাকাতের কাছাকাছি। পরে বিষয়টি শুনে আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছি, এ টাকাগুলোই আপনার নিজের কাজে লাগল। যেসব রেখে চলে যাবেন সেসব আপনার নয়। প্রিয়নবী (সা:) বলেছেন, মানুষের নিজস্ব সম্পদ তিনটি। ১. যা সে খায় ২. যা সে পরিধান করে আর ৩. যা সে পরকালের জন্য পাঠায়। অর্থাৎ দান সদাকা করে দেয়।
এ বাবত মানুষ খুব কমই বিনিয়োগ করে থাকে। সিংহভাগ সম্পদই মানুষ দুনিয়ায় রেখেই খালি হাতে চলে যায়। আর দুর্ভাগ্যজনক হল এই যে, এর হিসাব ও দায়ভার তার কাঁধেই থেকে যায়। যদিও তা ভোগ করে অন্যরা। সম্পদ আল্লাহর দান। মানুষকে সীমিত সময়ের জন্য তা দেয়া হয় তাকে পরীক্ষা করার জন্য। সে এ সম্পদ পেয়ে কেমন আচরণ করে। আল্লাহ চাইলে কপর্দকহীন মানুষকেও এক নিমেষে বড়লোক করতে পারেন। বিত্তশালীকে পারেন এক পলকে ধ্বংস করে দিতে।
এ লেখাটি যখন লিখতে বসেছি, এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে লন্ডনে বহুতল ভবনের আগুন কত মানুষকে হতাহত ও অসহায় করে দিয়ে গেল এক মুহূর্তে। পার্বত্য এলাকায় পাহাড় ধ্বসে শতাধিক মানুষের প্রাণ চলে গেল বাংলাদেশে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের বিখ্যাত আপন জুয়েলার্স প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস হয়ে গেল, কেবল অসাবধানতার জন্য। অর্থবিত্ত পেলে কত কৃতজ্ঞ সংযত মানবিক ও দায়িত্বশীল হতে হয় তা জানা ছিল না এর মালিক পরিবারের অনেকের। একটি পাপ ও অন্যায় আচরণ তাদের মান সম্মান, সম্পদ ও অর্জন সবই ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। পিতা হয়ে একজন যখন দায়িত্বশীল হতে পারেননি তখন তার অসাবধানতার প্রতিফলন পুত্রের যথেচ্ছাচারের মধ্যে ঘটেছে। একটি অন্যায় সংযত ভাষায়, আর্দ্র অন্তরে, মানবিক হৃদয় দিয়ে মোকাবেলা করতে না পারায়, দম্ভ ও ঔদ্ধত্য সম্বল করে অস্বাভাবিক আচরন করায় সবকিছু হাওয়া হয়ে গেল নিমেষেই। শত কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ১৩ মন স্বর্ণ, কোটি কোটি টাকার হীরা হয়ত ফিরে পাওয়া যাবে কিন্তুু মান মর্যাদা, স্বস্তি ও শান্তি কী সহজে পাওয়া যায়? যেসব ক্ষতির ক্ষতিপূরণ নেই, সে ঈমান, আমল, বিশ্বস্ততা, শ্রদ্ধাবোধ কি টাকা দিয়ে কেনা যাবে? দীনদারী, তওবা, চরিত্র, নৈতিক মানবিকতা, দান-সদাকা, জাকাত যা দিতে পারত।
ব্যবসা, ঠিকাদারি, উত্তরাধিকার, অন্যায়ভাবে অর্জন নানাভাবেই মানুষ অর্থশালী হয়। জনগণ ও রাষ্ট্রের টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়। যদি এরা সব নিজেরাই কুক্ষিগত করে না রেখে বিপন্ন মানুষকে কিছু হলেও দান করত তাহলে হালাল টাকাও পবিত্র হত আর হারাম টাকার শাস্তি থেকেও তাদের রক্ষা পাওয়ার কোন পথ বের হতে পারত। বাংলাদেশের বহু ব্যবসায়ী আছেন যারা পূর্ণ হালাল পথে অর্থ কামাই করেননি। ইচ্ছা অনিচ্ছায় তাদের সম্পদে সুদ মিশে গেছে, ঠেকায় পড়ে ঘুষ দিয়েছেন, প্রচলিত সিস্টেম লস এর ব্যানারে মিথ্যা তথ্য, ফাঁকি বা শ্রমিক ঠকানোর মত বিষয়ও ঘটেছে। তারা যখন জাকাত দিতে চান, সাধারণ দান সদাকা করতে চান তখন কট্টরপন্থী কিছু ব্যক্তি তাদের নিরুৎসাহিত করে বলেন, হারাম মালের জাকাত নেই। এর সবই মানুষকে দিয়ে দিতে হবে। তারা কিন্তুু এটা ভাবেন না যে, এ লোক তো সব মাল বিলিয়ে দেবে না। তাছাড়া তার সব সম্পদ হারামও নয়। হয় তা মিশ্রিত কিংবা অস্পষ্ট। তাহলে সে তার হালাল অংশের জাকাত দিক। বাকি সম্পদ থেকে যতটুকু পারে দান করুক। হাশরের দিন যদি তার ৭০ ভাগ ফাইল থাকে হারাম ও পাপের অন্তত ৩০টি ফাইল হালাল ও পুণ্যের থাকুক। কিছু ফাইলে থাকুক এতিম, বিধবা, ঋণগ্রস্ত, বন্দী, অসহায়, অপুত্রক, বৃদ্ধ, রুগী, নির্যাতিত মানুষের সেবার কথা। থাকুক মসজিদ, মাদরাসা, ইফতার, সাহরি, ঈদের কাপড়, প্লাবিত হাওর, পাহাড় ধ্বস, প্রবাসফেরত আর্ত মানবতার সহায়তার কথা। বলা তো যায় না। মহান আল্লাহর রহমত ক্ষমা ও করুণার ফলে যদি পুন্যময় ১টি ফাইলই ভারি হয়ে যায়। যদি তিনি বান্দার হক না মেরে থাকেন তাহলে তো সকল গোনাহর ক্ষতিপূরণ দিয়ে আল্লাহ নিজেই বান্দাটিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিতে পারেন। জান্নাতে দাখিল করে তার জীবনকে সফল করতে পারেন। ক্ষতিপূরণ, তওবা ও দান খয়রাতের ফলে বিশেষ ব্যবস্থায় আল্লাহ কোন ব্যক্তির উপর বান্দার হকও ক্ষমা করতে পারেন।
আমার জানা মতে এমন সন্দেহজনক সম্পদের মালিক বহুলোক আলেমদের পরামর্শে সওয়াবের আশায় ভালো ফাইলও খুলেছেন। মসজিদে দান করছেন। নিজ এলাকায় অসংখ্য মসজিদ গড়ছেন। অসহায় রোগীদের দান করছেন। বিপদগ্রস্ত মানুষকে আয়ের পথ খুলে দিচ্ছেন। তালিকা করে ঘরে ঘরে চালের বস্তা, মাসের বাজার, পড়া লেখার খরচ, ওষুধপত্র ইত্যাদি দিচ্ছেন। বহুলোক গোপনে কোটি কোটি টাকা মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন, যার ফলে মানুষের দোয়া পান। এরফলে আখেরাতেও আল্লাহ তাদের গোনাখাতা মাফ করতে পারেন।
যেসব বড়লোক আল্লাহকে ভুলে গিয়েছেন। কারো কথায়ই তাদের মন নরম হয়না। টাকা পয়সা ও ক্ষমতার জোরে ধরাকে সরাজ্ঞান করছেন। বিদেশে এপার্টমেন্ট, বাড়ি, ব্যবসা করছেন। দেশে নামে বেনামে সম্পত্তি করছেন। গরিব মানুষের টাকা মেরে ঢাকায় ৪০ কোটির ফ্ল্যাট আর ১৫ কোটির গাড়ি অবলীলায় কিনে চলেছেন। বড় বংশ বড় পরিচয় বড় পদ পেয়েও এমন কি অঢেল সম্পদ থাকার পরেও কিছু লোক উন্মাদের মত টাকা পয়সা মেরে চলেছেন। কিছু দিন আগেও শূন্য পকেটে ঘুরতেন, এখান সেখান থেকে সালামি নিয়ে চলতেন আর এখন ৩ থেকে ৫ কোটি টাকার গাড়িতে চড়েন, বিঘা কে বিঘা জমি কিনছেন, চাকর বাকরের নামে শেয়ার ফ্ল্যাট ও বাড়ি-গাড়ি করছেন তারা জাকাত দেয়া তো দূর সাধারণ দানও করেন না। বড় বড় পার্টিতে কোটি টাকা ব্যয় করেন, বিদেশের ক্যাসিনোতে অগনিত টাকার জুয়া খেলেন। আল্লাহর পাকড়াও কিন্তুু যখন তখন তাদের উপর নেমে আসতে পারে। আজ না হোক দু’দিন পরে হলেও তারা ধরা অবশ্যই খাবেন। দুনিয়ায় হবে অবিশ্বাস, অশান্তি, অসম্মান, অনিরাপত্তা, পরিবার ধ্বংস, রোগব্যাধি ও অভিশপ্ত জীবন আর পরকালে তো কথাই নেই। কঠিন শাস্তি ও নরকাগ্নি তাদের প্রতিটি বেঈমানি ও গোনাহর বদলা হয়ে দেখা দেবে অনন্তকালের জন্য। যা থেকে মুক্তি নেই, সেখানে মৃত্যুও নেই। পবিত্র রমজানের শেষ দশকে আসুন সবাই সংযত হই। মন বড় করি। কৃত পাপ ও অপরাধ থেকে তওবা করি। আত্মসাৎ কৃত সম্পদ জনগণকে ফিরিয়ে দেই। জাকাত ফেতরা দিয়ে দেই। জমাকৃত সম্পদ থেকে একটি অংশ মানবতার জন্য ব্যয় করি।
একসঙ্গে মাওলানা নদভী’র পাঁচ বই