মাহমুদুল হক জালীস : রমজান ধৈর্যের মাস। সংযমের মাস। সাধনার মাস। আত্মিক উৎকর্ষের মাস। ইবাদতের মাস। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসকে ধৈর্যের মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন। সাধনার মাস বলে বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। ইবাদতের মহেন্দ্রক্ষণ বলে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন।
ধৈর্যধারণ করার মহৎ শিক্ষা নিহীত আছে সিয়াম সাধনার মধ্যে। যে শিক্ষা প্রতিটি মানুষের জাগতিক কাজ-কর্মে সাফল্যের নিয়ামক। বান্দা রাতের শেষাংশে সাহরি খাওয়ার পর থেকে রোজা পালন শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে সকাল পেরিয়ে সময়ের চাকা দুপুরে গড়িয়ে পড়ে। ক্রমে ক্রমে রোজাদারের ক্ষুধাও তৃষ্ণা বাড়তে থাকে। খাবারেরর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে পেটের তলানি। জিভের গোড়া একটু পরপর শুকিয়ে আসে। একটু তরল পানির জন্য রসনা অধীর অপেক্ষায় থাকে। এভাবেই দুপুরের ক্লান্তি পেরিয়ে আসে বিকেলের অবসন্নতা। বাড়ে তৃষ্ণা ও ক্ষুধার তীব্রতা।
এরপরও পরিস্থিতিতে আল্লাহর ভয়ে নিজেকে তখন খাবার থেকে বিরত রাখে প্রতিটি রোজাদার। সংযম অবলম্বনের দৃঢ়সংকল্প করে। বান্দাকে যেমন ঠিক দুপুরের সময় ক্ষুধার তাড়না পানাহার করার জন্য প্রলুব্ধ করেছিল। কিন্তু বান্দা তখন প্রভুর নির্দেশের কাছে নফসের বাসনাকে পরিত্যাগ করেছিল। কারণ নফসের তাড়না থেকে বান্দার মনে প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের চেতনা অনেক বেশি শক্তিধর। তাই তো ক্ষুধা ও তৃষ্ণার তীব্রতার মাঝেও প্রভু-ভক্ত রোজাদার ধৈর্যধারণ করে। সহ্য করে ক্ষুধার যাতনা। কষ্ঠের মাঝে ধৈর্যধারণ করার এই শিক্ষার পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসের নামেই রোজা।
পবিত্র কুরআনে অন্যস্থানে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা ধৈর্যধারণ করো, অটল-অবিচল থাক, আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে ধরে রাখো এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, তাহলে সফলকাম হবে।’
এমনিভাবে সূরা কাসাসে-ধৈর্যধারণকারী বান্দাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, ‘ধৈর্যের ফলে তাদেরকে একবার নয়- দুই বা ততোধিকবার প্রতিদান দেয়া হবে।’
কওমি স্বীকৃতি জাতীয় সংসদে পাস করতে প্রধানমন্ত্রীকে আল্লামা শফীর চিঠি; যা আছে চিঠিতে
সুতরাং এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে! যখন মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যধারণকারীদের সঙ্গে আছেন।’ তদ্রূপ সহিহ বুখারি ও মুসলিমে হযরত আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ধৈর্য থেকে অধিক উত্তম এবং বিস্তৃত কোন দান বান্দার জন্য হতে পারে না।’
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘ইমানদারের সকল কর্মই আশ্চর্যজনকভাবে তার জন্য মঙ্গলজনক হবে। তার কাছে কোনো নেয়ামত এলে সে শুকরিয়া জ্ঞাপন করবে এবং শুকরিয়া জ্ঞাপন করা তার জন্য উচিৎ। আবার যখন কোন বান্দার নিকট বিপদ ও মসিবত আসে এবং সে ধৈর্যধারণ করে এ ধৈর্যধারণ করা তার জন্য পরবর্তীতে সময়ে মঙ্গল বয়ে আনবে।’
আসলে ইহকাল ও পরকালে সফলতার কষ্টকর চারিত্রিক গুণের নামেই হল ধৈর্য। মানুষের জীবনে, বিপদে, মসিবতে, কষ্টে ও সংকটে, প্রতিযোগিতা ও প্রতিকুলতায় কিভাবে ধৈর্য ধারণ করতে হয়, তার পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা নিহীত আছে সিয়াম সাধনায়। আল্লাহ পাক সেই শিক্ষা গ্রহণ করার সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : গল্পকার ও প্রাবন্ধিক