জাকির মাহদিন
ধর্মীয় বিধি-বিধান, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রাধান্যের ভিত্তিতে সাজানো ‘কওমি মাদরাসা শিক্ষা’ পাক-ভারত উপমহাদেশে এক ঐতিহ্যবাহী ও ভিন্নমাত্রিক শিক্ষা কারিকুলাম ও শিক্ষাব্যবস্থার নাম। যখন এর উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছিল তখন এটা ছিল শিক্ষাক্ষেত্রে এক আমূল বিপ্লব।
আজ থেকে কয়েকশত বছর পূর্বে সারা দুনিয়া যখন ধর্ম, বিশ্বাস, ন্যায়নীতি ও আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে নাস্তিক্যবাদ, সংশয়বাদ, ভোগবাদ ও বিবর্তনবাদে ক্রমাগত ডুবে যাচ্ছিল, ইংরেজ শাসনের দাপটে এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামি রাষ্ট্রগুলোও স্রোতে টিকে থাকতে পারেনি, তেমনি এক নাজুক পরিস্থিতিতে পাক-ভারত উপমহাদেশের নবী সেনানীগণ এক বিপ্লবাত্মক শিক্ষাকারিকুলাম ও শিক্ষাব্যবস্থার উদ্ভাবন করেন। আবার অনেক নবীসেনানী সুদূর মক্কা-মদিনা থেকেও হিজরত করে এ অঞ্চলে চলে আসেন।
এভাবে এ উপমহাদেশ পায় এক নতুন আলোকবর্তিকা এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গেই বলতে হয়, বিভিন্ন কারণে সময়ের ব্যবধানে এ শিক্ষাবিপ্লব সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পিছিয়ে পড়ে। এটা আমরা যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করব তত ভালো। তার মানে এ নয় যে আজকের বাংলাদেশে শিক্ষা, সম্পদ, শাসন, উন্নয়নে এর কোনো অবদান নেই। বরং শিক্ষাক্ষেত্রে এটাই ছিল বাঙালির হাতেখরি। আর শিক্ষাই হচ্ছে মানবজাতির সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ভিত্তি।
আমি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। ইতিহাস কমবেশি সবাই জানেন। তা নিয়ে টুকটাক বিতর্ক থাকবে এও স্বাভাবিক। কিন্তু এ নিয়ে জাতীয় বিতর্ক-বিভক্তি ও জাতীয় সম্পদ-শক্তির ক্ষয়-ক্ষতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
গণমাধ্যম, সামাজিক ও মানবতাবাদী কার্যক্রম এবং রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন-সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবার স্বতঃস্ফ‚র্ত অংশগ্রহণ একটি জাতির অস্তিত্বের শর্ত। এটা পূরণ না হলে সমগ্র জাতিকে কেউ অস্বীকার করলেও বলার কিছু থাকবে না।
তাই সচেতন সমাজগবেষক, লেখক, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, সংসদ সদস্যসহ জাতীয় ও রাষ্ট্র্র্র্রীয় সকল গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গের সর্বসম্মতিক্রমে ঐতিহ্যবাহী কওমি শিক্ষাকারিকুলাম ও শিক্ষাব্যবস্থাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির আওতায় আনা হয়েছে। এতে কোনো পক্ষেরই বিন্দুমাত্র ভুল বোঝাবুঝির সামান্যতম সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।
বাংলাদেশ আজ শাসনতান্ত্রিক ও ভূখণ্ড গত দিক থেকে চার যুগ ধরে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। একে ফুলে ফলে সুশোভিত করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রচলিত ইসলামি লেখালেখি ও সাহিত্যাঙ্গনে হুমায়ুন আইয়ুব এক উজ্জ্বল নাম। তারই দিকনির্দেশনা ও দক্ষ সম্পাদনায় আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম মাত্র এক বছরেই ব্যাপক পরিচিতি ও সর্বজন গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে ধন্য হয়েছে।
বিশেষ করে কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি আদায়ে সকল সমালোচনা উপেক্ষা করে আওয়ার ইসলামের সাহসী ভূমিকা ও ক্যারিশমাটিক সাংবাদিক হুমায়ুন আইয়ুবের সামনে থেকে নেতৃত্বদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
কিছুদিন ধরে টিভি টকশোয় কথিত সুশীল ও বামদের কর্তৃক ‘কওমি মাদরাসায় জাতীয় পতাকা উড়ানো’ নিয়ে যে বিতর্কের সূত্রপাত, তার অনেক আগেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন হুমায়ুন আইয়ুব।
কারণ স্বীকৃতির আগে-পরে কী কী প্রশ্ন আসতে পারে তা তিনি আগেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন এ বিষয়ে বেফাক মহাসচিব মরহুম মাওলানা আব্দুল জব্বার সাহেবের সাক্ষাৎকার আনতে।
এছাড়া জনাব ফরীদ উদ্দীন মাসউদ ও আহমদ শফী সাহেবের সম্পর্কের বরফ শীতল করতে তার নির্দেশনায় আমাকে দৌড়তে হয়েছে।
ভেতরে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছেন রোকন রাইয়ান, সাথে বার্তা সম্পাদক ওমর ফারুক ফেরদৌস। মোটকথা স্বীকৃতির বিষয়টি নিয়ে ‘টিম আওয়ার ইসলাম’ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঘরে-বাইরে কাজ করেছে তা আমাদের মিডিয়ার ক্ষেত্রে মাইলফলক।
লেখক: সম্পাদক, পাক্ষিক দেশ দর্শন