মাওলানা এরফান শাহ
লেখক -গুলশান ট্রাজেডি
পৃথিবী দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কথায় বলে প্রয়োজন আবিস্কারের জননী। এক সময় মানুষ খাদ্যের বিনিময়ে কেনাকাটা করত। পরর্বতীতে স্বর্ণ ও রুপার মুদ্রা চালু হয়। অতপর ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রচলন হয়।
বহনের সুবিধার্থে কাগজী মুদ্রার ব্যবহার শুরু হয়েছে। এখন আরো এগিয়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে উন্নত মাধ্যম অনলাইন ব্যাংকিং, আই ব্যাংকিং ও ইলেকট্রনিক্স মানি তথা এটিএম কার্ড, ভিসা কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার শুরু হয়েছে। প্রযুক্তি যে আজ উন্নতির চরম শিখরে পৌছেছে তা কিন্তু ধারাবাহিক সাধনা ও গবেষণার ফসল।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন লওহে মা’ফুজ থেকে জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে রাসূল (সাঃ) উপর নাযিল হয়েছে। রাসূল (সাঃ) থেকে সাহাবায়ে কেরাম শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। অতপর প্রয়োজন দেখা দেয়ায় হযরত ওসমান (রাঃ) এর জামানায় সর্ব প্রথম আল-কুরআন কাগজে লিপিবদ্ধ করা হয়। যুগের পরির্বতন হয়েছে। এখন চলছে কম্পিউটার যুগ। এখন শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যম হচ্ছে কম্পিউটার। প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ও স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার-প্রসার হচ্ছে। কম্পিউটার এখন তথ্য, প্রযুক্তি, গ্রন্থ ও লাইব্রেরী তথা জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভান্ডারে পরিণত হয়েছে।
বর্তমান সময়ে আলোচিত ও প্রশংসিত অরাজনৈতিক দ্বীনি সংগঠন “হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ” ও “কওমি মাদরাসা”। জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী বিশাল এক সামাজিক সংগঠন ও স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করার জন্য রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। আর ভোট হচ্ছে একান্ত ব্যক্তিগত ও মনস্তাত্তিক বিষয়। যার মন যে জয় করতে পারবে, সেই তার সর্মথন লাভ করবে।
প্রবাদবাক্য “যেমন কর্ম তেমন ফল”। কথায় বলে “ মানুষ অনুগ্রহের গোলাম”। সরকার যদি কওমি মাদরাসা, আলেম-উলামা ও তাওহিদী জনতার উন্নতি ও মঙ্গল কামনা করেন, তাহলে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও আলেম-উলামারাও সরকারের ধারাবাহিকতা, মঙ্গল ও ভাল চাইবেন এটিই স্বাভাবিক। এ কথাটি আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে বলেছেন এভাবে “ভাল কাজের প্রতিদান উত্তম পুরুস্কার ব্যতিত আর কি হতে পারে”? আল- কুরআন-৬০:৫৫।
কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকগণ কি এদেশের নাগরিক নয়? তাহলে তারা কেনো রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবে? এই বাস্তব সত্যটি কেউ উচ্চারণ করেন না! কেউ জনগণের টেক্সের টাকায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে আর কেউ একই দেশের নাগরিক হয়েও নূন্যতম নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবেন তা কোন ধরনের গণতন্ত্র, রাজনীতি ও মানবাধিকার? অবহেলিত ও বঞ্চিতদের পক্ষে আন্দোলন ও সংগ্রাম করার নামই হচ্ছে গণতন্ত্র ও রাজনীতি।
দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবি, সুশীল সমাজ ও বামপন্থীদের রাজনীতি ও সমাজনীতি হচ্ছে ঠিক তার উল্টো পথে! তেলে মাথায় তেল দেয়া আর বাস্তবতাকে অস্বীকার করা। রাষ্ট্রের বিশাল এক জনগোষ্ঠিকে অবহেলিত রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। গ্রিকদেবী থেমিস নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক আলোচনা, সমালোচনা ও গবেষণা হয়েছে। অনেক মতামত, প্রবন্ধ ও কলাম লেখালেখি হয়েছে। অনেক বক্তব্য, সেমিনার ও সেম্পোজিয়াম হয়েছে। অনেক যুক্তি, তর্ক ও বিতর্ক হয়েছে। পক্ষে বিপক্ষে বহু মিছিল, মিটিং ও সমাবেশ হয়েছে। জল অনেক দূর গড়িয়েছে।
ইসলামিক স্কলাররা কেনো গ্রিকদেবীর বিরোধীতা করছেন, তা না বুঝে আর না জেনে, সুশীল সমাজ ও সেক্যুলারপন্থীরা বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতা করছেন। হাইকোর্টের মত ঐক্যের প্রতিক, স্পর্শকাতর ও আস্থার একটি জায়গায় অহেতুক, অনাকাংখিত ও বিতর্কিত একটি বিষয় জিংয়ে রেখে কৌশলে জাতিকে বিভক্ত, বিভাজন ও দূর্বল করা হচ্ছে।
বিগত ১১ এপ্রিল গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও অঙ্গীকার আলেম সমাজকে আশান্বিত করেছিল। সেই ওয়াদা ও প্রত্যাশা পূর্ণ না হওয়ায় আলেম সমাজ হতাশ, হতবাক ও বাকরুদ্ধ। মনেরাখা দরকার আলেম-উলামারা ব্যক্তি স্বার্থে নয়, হীন স্বার্থে নয়, পার্থিব উদ্দেশ্যে নয় বরং ঈমানের স্বার্থে, ইসলামী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির স্বার্থে গ্রিকদেবীর বিরোধীতা করছেন।
এখানে ধর্মীয় বিশ্বাস, অনুভূুতি ও মূল্যবোধ জড়িত। তবে আলেম-উলামা, তাওহিদী জনতা ও ধার্মিক শ্রেণীর অহিংস আন্দোলন, নীরব প্রতিবাদ ও সামাজিক সংগ্রাম প্রমাণ করে এখানে কোনো ধরনের রাজনীতি, গোঁড়ামি ও বাড়াবাড়ি নেই। এটি আদর্শিক সংগ্রাম, মনস্তাত্তিক
প্রতিবাদ ও ঈমানী দায়িত্ব। বলা হয়ে থাকে “বন্যরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে”। বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান সম্প্রদায় দূর্গা, মূর্তি ও দেব-দেবীর পূজা অর্চনা করে। হিন্দুদের মন্দির, বৌদ্ধদের পেগোঢ়া ও খৃস্টানদের গির্জায় তাদের নিজ নিজ ধর্মের প্রতিমা, মূর্তি ও দেব-দেবী থাকবে, পূজা-অর্চনা ও প্রার্থণা চলবে এ নিয়ে কারো অভিমত, আপত্তি ও দ্বিমত নেই। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। এটিই ধর্র্মীয় স্বাধীনতা, এটিই ধর্মনিরপেক্ষতা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা দিতেন এভাবে “ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়”। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মকে অস্বীকার করা নয়, শূকরের মাংস, মদ ও গাজাঁ খেয়ে যারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন, তারা পারভারটেড তথা বিকৃত, পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী”।
ধর্মনিরপেক্ষতার দাবীদার রাষ্ট্রে বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতিমা, দেবী ও মূর্তিকে প্রকাশ্যে প্রদর্শন, রূপায়ন ও পদায়ন কোন প্রকার ধর্মনিরপেক্ষতা? দেবী থাকবে গির্জায়, মূর্তি থাকবে মন্দিরে আর ভাস্কর্য থাকবে যাদুঘরে। নাম হচ্ছে গ্রিকদেবী থেমিসের মূর্তি আবার বলা হচ্ছে এটি মূর্তি নয় এটি ভাস্কর্য। শিল্পকর্মকে ভাস্কর্য বলাহয়ে থাকে তা সকলে অবগত। অভিধানে মূর্তিকেও ভাস্কর্য বলা হয়। যদি প্রশ্ন করা হয় কিসের ভাস্কর্য? কিসের মূর্তি? কিসের প্রতিচ্ছবি? তখন এর জবাবটা কি হবে? প্রত্যেক শিল্পকর্ম, মূর্তি ও ভাস্কর্যের যে একটা প্রতিশব্দ বা নাম আছে সেই সত্যটা গ্রিকদেবী প্রেমিকরা স্বীকার করতে চান না।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল “সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা”। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধোঁয়া তোলে সমাজের পরতে পরতে হিংসা- বিদ্বেষ ছড়ানো, জাতিকে বিভক্ত করা, দেশকে দূর্বল করাই কি চেতনাধারীদের টার্গেট, ব্যবসা ও উদ্দেশ্য?
সুপ্রিম কোর্টের সামনে বাংলাদেশের মানচিত্র আড়াল করে গ্রিকদেবী থেমিসের যে ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল তা অপসারণ করা হয়েছে। আর আমরা সমস্বরে চেছাতে লাগলাম চেতনা গেল! চেতনা গেল! হায়রে স্বাধীনতা! হায়রে চেতনা! মানচিত্র আচ্ছাদিত করলে চেতনা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যায়! আর থেমিসের ভাস্কর্য অপসারণ করলে চেতনা ভুলন্ঠিত হয়! এ কেমন চেতনা? মানচিত্র বড় নাকি থেমিসের ভাস্কর্য? কোথায় আমাদের বিবেক? কোথায় দেশপ্রেম? কোথায় জাতীয়তাবাদ? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লাগাম কি এখন মৃণাল হকের হাতে?
শিল্পী মৃনাল হককে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা শোনা যাচ্ছে। আমি ঐসব বিতর্কে যেতে চায় না। হাইকোর্টের সামনে থেকে গ্রিকদেবীকে সরানোর সময় উনি বলেছেন যে, উনার মা মারা যাওয়ার পরেও নাকি তিনি এভাবে কাদেঁননি। তার কথায় প্রমাণ করে সে একজন অমানবিক ব্যক্তি, নকল শিল্পী ও আত্মপ্রতারক।
যার শিল্পকর্ম নিয়ে এত হৈচৈ তার মান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ডীন চারুশিল্পী নেছার হোসেন বলেছেন, অপরিকল্পিত ভাবে নির্মাণ করায় অনেক ভাস্কর্য ঢাকা শহরে সৌন্দর্য নষ্ট করেছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলা উচিত। বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মনিরুজ্জামান বলেছেন, ঢাকা শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কোথায় কোন ধরনের ভাস্কর্য নির্মাণ করা যায় তা গবেষণা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
মৃনাল হক যেখানেই ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন সেটা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। তার শিল্পকর্ম বিকৃত, কুরুচিপূর্ণ, বির্তকিত ও নিম্নমানের।
১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তৎকালীন সেক্যুলারপন্থী, বামপন্থী ও প্রগতিবাদীরা বঙ্গন্ধুকে পাকিস্তান না যাওয়ার পরামর্শ দেন। সিদ্ধান্তে অনড় জাতির জনক সব বাধাঁ উপেক্ষা করে লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করেন। লাহোরে গেলে দিল্লী নাখোশ হবে তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা এমন পরামর্শ দিলে বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তা নিয়ে বলেছিলেন “আমি পরের হাতে তামুক খাই না”।
রাজনীতির সেই মহানায়ক পিতার যোগ্য উত্তরসূরী, সুযোগ্য কন্যার মত নিজস্ব চিন্তা ও চেতনায় এগিয়ে চলেছেন, সচেতন ও বিচক্ষন ব্যক্তিত্ব, সফল রাষ্ট্রনায়ক ও বিশ্বনেতা, জননন্দিতনেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন বাংলাদেশ এক আজব দেশ! এখানে জাতীয়, আর্ন্তজাতিক ও গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে দেশের প্রধান দু’ দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি একমত হতে পারেন না।
তবে জাতির সৌভাগ্য, নজির বিহীন ও প্রসংশার কথা হাইকোর্ট থেকে গ্রিকদেবী থেমিসের মূর্তি অপসারণের পক্ষে প্রধান তিন দল একমত পোষন করেছেন। উল্লেখ্য সরকার প্রধান, উলামা-মাশায়েখ ও প্রধান তিনদল একমত পোষন করা সত্ত্বেও কেনো সেই বিতর্কের পরিপূর্ণ অবসান হল না, তা এখন জনগণের মনে একবড় কৌতুহলী, বিষ্ময়কর ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন?
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, মানব জাতির পথপ্রদর্শক, মহামানব, রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর একটি অমর বাণী আমাদের বির্তকিত বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন এভাবে “যেখানে সন্দেহ ও বিতর্ক আছে তা পরিত্যাগ কর, আর যেখানে সন্দেহ ও বিতর্ক নেই তা গ্রহণ কর- তিরমিজিঃ২৪৪২। সৃষ্টিকর্তার মনোনিত ধর্ম ইসলাম। দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান।
ইসলামী শরীয়ায় সীমা লংঘন, অতিরঞ্জন তথা বাড়াবাড়ির কোনো সুযোগ নেই। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় কেবল মানব জাতির সার্বিক কল্যাণ, ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির নিশ্চয়তা প্রদান করে। বিশ্বের পরাশক্তি গুলোর অব্যাহত জুলুম ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ মানবতা যখন শান্তিময় আদর্শের দিকে ছুটে আসছে তখন ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে প্রমাণ করার জন্য একটি গোষ্ঠী কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখা করে চরমপন্থী দর্শন প্রচার করছে।
তরুণদের একাংশকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করে অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত করছে। অতঃপর সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে বিশ্বব্যাপী নিরীহ মুসলমানের রক্ত ঝরানো হচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীরা একদিকে ধর্মীয় বিধি-বিধান সম্পর্কে অনভিজ্ঞ এমন কিছু ধর্মভীরু যুবকদের টার্গেট করে, পবিত্র জিহাদের ভুল ব্যাখা দিয়ে চরমপন্থার প্রতি উস্কানী দিচ্ছে। অন্যদিকে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের অজুহাত তোলে বিশ্বের বিভিন্ন উদীয়মান মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে মুসলিম দেশ গুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, মানুষ খুন করে, বোমাতঙ্ক সৃষ্টি করে খেলাফত প্রতিষ্ঠার মনগড়া ব্যাখার সাথে ইসলামের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম জঙ্গিদল “হাগানা”। ইহুদীরাই ১৯২০ সালে হাগানা গঠন করে। হাগানার উদ্দেশ্য দু’হাজার বছরের পুরনো বসতি ফিলিস্তিনী জনগণকে তাদের নিজস্ব ভুমি থেকে উচ্ছেদ করা।
মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল এ ষড়যন্ত্র মুসলমানের বিরুদ্ধে শতাব্দীকাল ধরে করে চলেছে। আইএসের সাথে ইসরাইলের দহরম মহরম প্রমাণ করে ইসরাইলই জঙ্গিপ্রজনন কেন্দ্র। পৃথিবীতে আজ যত জঙ্গিদল সৃষ্টি হয়েছে বলাযায় তা ‘হাগানার’ শাখা-প্রশাখা।
ইসরাইলী সাবেক সামরিক গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল হার্জজি হ্যালেভি একটি সম্মেলনে সিরিয়ান সরকার বিষয়ক ইসরাইলের দীর্ঘ অবস্থানের কথা প্রকাশ করে বলেছেন, “ইসরাইল আই এসকে পছন্দ করে”। তিনি সম্মেলনে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, “ইসরাইল চায় না যে, আই এস সিরিয়ায় পরাজিত হোক”।
আই,এস জ্বরে আজ সারা বিশ্ব আক্রান্ত অথচ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ইসরাইল টেনশনমুক্ত। যেখানে ইসরাইলের সাথে সকল মুসলিম রাষ্ট্রের সাপে-নেউলে সম্পর্ক সেখানে সন্ত্রাসী সংগঠন আই,এসের সাথে ইসরাইলের মানিকজোড় প্রমাণ করে সন্ত্রাসবাদ নিঃসন্দেহে ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ!
পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেনঃ “যে ব্যক্তি কোনো মু’মিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে তার শাস্তি জাহান্নাম”। রাসূল (সাঃ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করবে সে জান্নাতের সুগন্ধিও লাভ করতে পারবে না, যদিও জান্নাতের সুগন্ধি চল্লিশ বৎসরের দূরত্বে থেকে লাভ করা যায়”-বুখারী। রাসূলে আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “তোমরা সরল পথে থাকো, মধ্যমপন্থা ধরো, রাতের কিছু অংশে ইবাদত করো, আর তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, তাহলে গন্তব্যে পৌছেঁ যাবে”-বুখারী।
মদের বোতলে ইসলামী লেবেল এঁটে দিলেই হারাম মদ কি হালাল হয়ে যাবে? কোনো মদ্যপ আল্লাহু আকবার বলে মদ পান করলে সেটাকে যেমন কেউ ইসলামী মদ বলবে না, তেমনি কোনো সন্ত্রাসী ইসলামের দোহাই দিয়ে আল্লাহু আকবার বলে মানুষ হত্যা করলে সেটাকে জিহাদ ভাবার কোনো অবকাশ নেই। শরীয়ত মূলত মসজিদকে পবিত্র রাখতে ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে নির্দেশ দিয়েছে। একে অপবিত্র ও নাপাক করা হারাম করেছে। পক্ষান্তরে আইএস এতে বোমা হামলা ও নাপাক করা বৈধ করেছে! জিহাদ মানে উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নয়। বরং ইসলাম, দাওয়াত ও জিহাদ এসব থেকে শ্রেষ্ঠতর, উন্নত ও পবিত্র।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের প্রাণ হরণ কিংবা জীবন নাশের চেয়ে বড় অপরাধ আর নেই। আত্মহত্যা মহাপাপ। কুরআনে আল্লাহপাক বলেনঃ “তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না”। জিহাদের ময়দানে আহত হয়ে তীব্র যন্ত্রনায় কাতর জনৈক সৈনিক আত্মহত্যা করলে রাসূল (সাঃ) তাকে জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করেন।
ইসলামের শিক্ষা কত উন্নত! বল প্রয়োগ করে ইসলামের প্রচার করতে বারণ করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য ইসলামের নামে আজ আতঙ্ক, হত্যা, হিংসা-বিদ্বেষ ও নিন্দা ছড়ানো হচ্ছে। ইসলামের নামে অশান্তি, ফিতনা-ফাসাদ ও ধ্বংসলীলা চালানো হচ্ছে। পবিত্র কুরআনে সূরা মায়েদার ৩২ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করা মানে পুরো মানব জাতিকে হত্যা করা এবং যে কারো জীবন রক্ষা করা মানে পুরো মানব জাতির জীবন রক্ষা করা”।
হাদিসে রাসূল সা. বলেনঃ “যে শাসক বা সরকারের কোনো কার্যকলাপ অপছন্দ করবে তার উচিত র্ধৈয্য ধারণ করা, যে রাষ্ট্রের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গিয়ে এক বিগত পরিমাণ সরে যাবে এ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে তার মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু হবে” -বুখারী। কতিপয় খারেজী সম্প্রদায় প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত হুযায়ফা (রাঃ) কে প্রশ্ন করেন, আমরা কি ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ করব না? তিনি বলেনঃ “ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ নিঃসন্দেহে ভাল কাজ। তবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ, অস্ত্রধারণ ও বিদ্রোহ ইসলামী শরীয়াহ সম্মত নয়”- ইবনু আবি শায়বা।
সুতরাং ইসলামের নামে কেউ হত্যাকান্ড চালালে তা কোনো ভাবে ধর্মসিদ্ধ নয়। এটি পথ ভ্রষ্টতা, বিকৃত মানসিকতা ও অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। রাষ্ট্রের আনুগত্য, সরকার ও আইন মানতে হবে। উগ্রতা ও চরমপন্থা ইসলামী শরীয়া অনুমোদন করে না।
যারা চরমপন্থা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পথ অবলম্বন করছে, তারা নিজের, দেশের ও ইসলামের সর্বনাশ করছে। পক্ষান্তরে মধ্যপন্থার অনুসারী হক্কানী ও রব্বানী উলামায়ে কেরাম উগ্রতা, চরমপন্থা ও জঙ্গিবাদের পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ ভাবে জনগণ ও সরকারকে উপদেশের মাধ্যমে যুগে যুগে মুসলিম মিল্লাতের অবক্ষয় রোধ করেছেন। অতএব মধ্যমপন্থায় হচ্ছে কুরআন-সুন্নাহ প্রর্দশিত সিরাতে মুস্তাকিম তথা সরল ও সঠিক পথ।
ইংরেজীতে টেররিজম, বাংলায় সন্ত্রাসবাদ, আরবীতে বলে ইরহাব। বাস্তবে তাদের নেই কোনো ধর্ম, নেই কোনো আদর্শ, নেই কোনো মাজহাব। টুইন টাওয়ার থেকে গুলশান, সচেতনতা ও একতায় পরিত্রাণ। গুলশান ট্রাজেডিতে নিহত হয়েছে বিবেক, কলুষিত হয়েছে মানবাত্মা, পরাজিত হয়েছে মানবতা। প্রকাশ পেয়েছে নৃশংসতা, দানবতা ও বর্বরতা। বর্হিবিশ্বে হয়েছে সুনাম ক্ষুন্ন, কলঙ্কিত হয়েছে দেশ, চলছে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ বেশ।
এভাবে হবে কি সব শেষ? না, না, না, আছে পরিত্রাণ, পড় আল-কুরআন, পেয়ে যাবে সমাধান। জান প্রকৃত ইসলাম, মিলবে স্বত্ত্বি পাবে শান্তি, হবে বিভ্রান্তির অবসান।
এসএস/