সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং বাম আর নাস্তিক বাহিনীর মাতম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যায়নুদ্দিন সানী

প্রধানমন্ত্রী এবার বোমা ফাটিয়েছেন। বাম আর নাস্তিকমহলের অবস্থা বেশ করুণ। মাতম চলছে। সাথে মৃদু হুমকি, ‘আমাদের ভোট কম, তবে কখনও কখনও কম ভোটেরও প্রয়োজন পড়ে।’ তবে আওয়ামীদের ছেড়ে যাওয়ার তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এখনো আশায় আছে, ‘যদি আবার ডাকে।’ প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনায় মুখর তিন মন্ত্রীর মনে হয় না চামড়া তেমন পাতলা। সো, পদত্যাগ প্রত্যাশা করছি না। জাস্ট দেখার বিষয় হচ্ছে, কীভাবে তারা ব্যাপারটাকে হেসে উড়িয়ে দেন।

বাম আর নাস্তিক বাহিনীর ধারণা ছিল, আওয়ামী নেত্রী আসলে তাদের দিকেই আছেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক্সটেন্ডেড ভার্সানই হচ্ছে ‘নাস্তিকতা’ এমন তত্ত্ব প্রধানমন্ত্রীও বিশ্বাস করেন। কেউ হয়তো তাকে ভুল বুঝিয়েছে, আর তাই তিনি হেফাজতকে তোষামোদ করছেন। মোটামুটি এই বিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে তারা ইসলাম, নবী, কোরআন সবকিছু নিয়ে কটাক্ষ শুরু করেছিল। এর আগে যদিও প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, এসব তিনি পছন্দ করছেন না, পর্নো লেখা মানে ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, তারপরও নাস্তিক বাহিনীর টনক নড়েনি কিংবা বলা যায় আশা হারায়নি। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, যেহেতু প্রায় কাছাকাছি মতাদর্শের মানুষ আমরা (দ্য সো কল্ড মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি) তাই তিনি তাদের ত্যাগ করবেন না। অ্যাট লিস্ট তাদের ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হেফাজতকে কাছে টানবেন না। নিশ্চিত ছিল, ধর্ম নিয়ে যা খুশি বলিই না কেন, তিনি একেবারে মুখ ফেরাবেন না।

এমন অবস্থায় ঘটে থেমিস আর সেই সঙ্গে হয় হেফাজতের সঙ্গে গণভবনে আলাপ। বাম আর নাস্তিক বাহিনী যথারীতি ‘গেল গেল’ রব তুলল। ‘ছি ছি…’ মিছিল দিয়ে কেসও খাইল। তাতে প্রধানমন্ত্রীর তেমন কোনো সাড়া আসছে না দেখে সেই পুরনো গল্প সামনে আনল, ‘প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বোঝানো হচ্ছে, আর তার আশপাশে রয়েছে কিছু চাটুকার, তারাই এসব করছে, ব্লা ব্লা ব্লা’। ওদিকে হেফাজতের সঙ্গে আলাপচারিতার পরে প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে তেমন কিছু বলছিলেন না। ‘পছন্দ হয়নি’ই ছিল শেষ কথা। এরপরে তো থেমিস সরল। তবে কেন, তা ঠিক বোধগম্য হলো না। নান্দনিকতার কারণে? না হেফাজতের দাবির প্রেক্ষিতে? কিছুটা ধোঁয়াশা থেকেই গেল। প্রশ্ন আরও একটা ছিল, থেমিস নামক ভাস্কর্য প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর আসল বক্তব্য কী? স্পেশালি যদি তা নান্দনিক হয়, তখন? সেই উত্তর এলো। অবশেষে কেশেছেন এবং বেশ ঝেড়েই কেশেছেন। স্পষ্টভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, খান কয়েক সেকুল্যার, বামপন্থী উনার খুব একটা দরকার নাই। এদের জন্য তিনি হেফাজতের বিশাল বাহিনীকে চটাবেন না। ওদের ভোট আসবে কি না, তা এই মুহূর্তে জরুরি না, আপাতত জরুরি বিষয়, ‘সাঁকো নড়ানোর কোনো সুযোগ সৃষ্টি হতে না দেওয়া।’ প্রয়োজনে বাম বাহিনীর উপর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করতেও তিনি দ্বিধা করবেন না।

কওমি মাদ্রাসা প্রশ্নেও স্পষ্ট উত্তর দিয়েছেন। কারো বুদ্ধিতে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেননি। এটাকে তিনি একটি ভবিষ্যৎ সমস্যা হিসেবেই ট্রিট করেছেন আর আপাতঃ সমাধান হিসেবে তাদের সনদের একটা গতি করেছেন। কথা প্রসঙ্গে কিছুটা ইঙ্গিতে হলেও বুঝিয়ে দিয়েছেন, সুলতানা কামাল প্রশ্নে তার অবস্থান। ইন অ্যা নাট শেল, সবার জন্যই স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, হেফাজত চটানো কোনো কার্যক্রমে তার কোনো সমর্থন থাকবে না আর এরপরও যদি ব্যাপারটা তারা চালু রাখে আর তখন হেফাজত চটে গিয়ে আক্রমণ করলে, তিনি বামদের জন্য প্রতিরক্ষাব্যূহ রচনা করবেন না। বাম আর নাস্তিক বাহিনীকে যদি লড়তেই হয়, নিজ ক্ষমতায় লড়তে হবে।

পুরো কাহিনী মোটামুটি এখানেই শেষ। তবে স্টোরির বেশ কিছু সাবস্টোরি বা সাবপ্লট আছে। প্রথম সাবপ্লট হচ্ছে, খবরটা প্রায় সব প্রধান মিডিয়া ব্ল্যাক আউট করে। কেন? তাদের যুক্তি হচ্ছে, এটা ছিল ঘরোয়া আলোচনা। সো, এই আলোচনার বক্তব্য বাইরে প্রচারের জন্য না। ইনকিলাবের প্রতিনিধি সম্ভবত কাহিনী ব্রেক করে। সাথে জাগো নিউজ। এরপরে ডয়েচে ভেলে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই চালাকিটা কেন? প্রধানমন্ত্রীর এই অবস্থান দেশবাসীকে না জানিয়ে কী ম্যাসেজ দিতে চাইছিল প্রধান মিডিয়া? প্রধানমন্ত্রী এখনো বাম আর নাস্তিকদের ফেভারে? কিন্তু কেন?

দ্বিতীয় সাবপ্লট হচ্ছে, তিন মন্ত্রীকে যেভাবে তিনি অপমান (অপমান আমার মতে, উনারা অপমান নাও ভাবতে পারেন) করলেন এবং তা উনাদের উপস্থিতিতে, তা কি বড় কোনো ঘটনার পূর্বাভাস? না কেবল মৃদু সাবধানতাবাণী? তিনজনের মধ্যে দুজন অন্য ঘরানার। একজন নিজের, তাও আবার পুরনো, পাল্টি মারা বাম। ক্ষয়িষ্ণু বামকে সঙ্গে রাখা হয়েছিল, যেন ভোট ডিভাইড না হয়। সেটা ২০০৯-এ প্রয়োজন হলেও ২০১৪তে তেমন জরুরি ছিল না। তারপরও সঙ্গে রেখেছিলেন এবং মন্ত্রীত্বও দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্যও ছিল, উনারা সরকারের বিরুদ্ধে ‘স্পিকটি নট’ হয়ে থাকবেন আর বিরোধী দলের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে যাবেন।

এদিকে বিএনপির বর্তমানে যা অবস্থা, এই দুই মন্ত্রীর সেই প্রয়োজনও বেশ অনেকটাই ফুরিয়েছে। তারপরও তাদের রাখা হয়েছে, কারণ তাদের ঘাড় থেকে নামালেই তারা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। মাঝে মাঝে তারা সরকারের বিরুদ্ধে দু-চার কথা বললেও আওয়ামী নেত্রী তেমনভাবে ধমক দেননি। ব্যাপারটাকে ‘ফর গ্র্যান্টেড’ ভেবে ইদানিং তাই তারা মৃদু বিবেক সাজবার চেষ্টা করছিলেন, স্পেশালি হেফাজত ইস্যুতে। বেশ কিছুদিন তা সহ্যও করলেন আওয়ামী নেত্রী। তবে উনার যা স্বভাব, তাতে, সমালোচনা তিনি একটা লিমিটের বাইরে অ্যালাউ করেন না। এবং সম্প্রতি তার সেই লিমিট এই দুই মন্ত্রী ক্রস করছিলেন। একটা মৃদু ‘চটকানা’ দেওয়া তাই জরুরি হয়ে গিয়েছিল। আই থিঙ্ক দে গট দেয়ার ম্যাসেজ।

তবে সবচেয়ে শকিং ম্যাসেজ এসেছে সুলতানা কামালের জন্য। ইনফ্যাক্ট এই বিষয়ে ‘নাখোশ’ প্রতিক্রিয়া দেওয়া ছাড়া তার তেমন কোনো উপায় ছিল না। সুলতানা কামাল যা বলেছেন তা সরাসরি সমর্থন করা ঝুঁকিপূর্ণ। আর কথাগুলো কথার প্রেক্ষিতে খ- খ- ভাবে এসেছে, যা মুখে মুখে ছড়ানোর ফলে এখন ঠিক যে শেপ নিয়েছে তা হচ্ছে, ‘মূর্তি না থাকলে মসজিদও থাকবে না’। এই বক্তব্য ডিফেন্ড করা সুইসাইডাল। ব্যাপারটার একটা নিষ্পত্তি করার জন্য সম্ভবত পর্দার আড়ালে আলাপ চলছে। এই টপিককে আর বাড়তে না দেওয়ার ব্যাপারে মনে হয় একটা ডিল হয়ে গেছে। সঙ্গে সুলতানা কামালকেও সম্ভবত ওয়ার্নিং দেওয়া হয়ে গেছে, ‘মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ।‘ যেহেতু উনি অনেক বেশি মাত্রায় আওয়ামী ঘেঁষা, তাই সম্ভবত এ যাত্রা পার পেয়ে যাবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই পার পাবেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট শহীদ মিনারে যেভাবে নিজেদের শহীদ করলেন, সেটাও বেশ মজার এক সাবপ্লট। উনারা এখনও সম্ভবত গজামের যুগে বাস করছেন। ধরে নিয়েছেন, ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা অসাম্প্রদায়িক শক্তির সমাবেশ, এমন শিরোনামে যোগ দিতে দলে দলে জনতা আসবে। কিন্তু তারা যেটা ভুলে গেছেন, তা হচ্ছে, এমন জনতা তার ডাকেই আসে, যাদের তারা বিশ্বাস করে। গজামকে তখন জনতা বিশ্বাস করেছিল। আওয়ামী লেজুরবৃত্তি করে যেভাবে তারা নিজেদের আওয়ামী বি টিম প্রমাণ করেছেন, তাতে সাধারণ জনতাকে তারা আর কখনই পাবেন না। হয় আওয়ামীদের পায়ে ধরে আনতে হবে আর নয়তো ভাড়া করে লোক জুটাতে হবে। নৈতিক কারণে তাদের সাথে যুক্ত হতে চাওয়া লোক তারা আর কখনই পাবেন না।

লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, হোয়াট অ্যাবাউট হেফাজত? এ ব্যাপারে আওয়ামী সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আপাতত হেফাজতের মাথায় হাত বুলিয়েই ঠান্ডা রাখার নীতি মেনে চলা হবে। কতদিন থাকবে? নট সিওর। আবার পেছনে পাতানো খেলা চলছে কি না, তাও হলফ করে বলা সম্ভব না। যা মনে হচ্ছে, তাদেরকে প্রায়ই ছোটখাট এবং মৃদু বিতর্কিত কিছু দাবি করতে দেওয়া হবে আর যতটা সম্ভব সেটা মেটানো হবে। অনেকটা থেমিস স্টাইলে। থেমিস প্রশ্নে, পুরোপুরি না হলেও, দে আর দ্য উইনার। সামনে থেকে সরানো হয়েছে। পেছনে রাখা হয়েছে, কারণ একেবারে সরালে, হেফাজতের পূর্ণ বিজয় হতো। সেটা আবার আওয়ামীদের জন্য কলঙ্কের কারণ হয়ে যেত। সো, দিস কম্প্রোমাইজ ফর্মুলা।

আমার ধারণা, একেবারে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া হবে না। পরে কোনো এক সময় আবার আন্দোলন হবে, আর তখন আবার মাঝামাঝি কোথাও লটকে রাখা হবে আর হেফাজতকে বলা হবে, ‘কিছুদিন অফ যাও কিংবা অনেক হয়েছে, এবার অন্য টপিক দেখ।’ আপাতত আওয়ামী প্রত্যাশা হচ্ছে, এই টপিকটা যেন দ্রুত শিরোনাম থেকে সরে যায়। স্পেশালি সুলতানা কামাল ইস্যু যেন আবার নেক্সট তসলিমা নাসরিন ইস্যুতে টার্ন না করে, সে প্রচেষ্টা আওয়ামীদের থাকবে। খুব কঠিন না। ‘টক শো’ আর শিরোনাম, এই দুই জায়গা থেকে সরে গেলে, বাঙালি যেকোনো টপিক ভুলতে সময় নেয় না। দুম করে শেষ হবে না, ফেজ আউট হবে। আপাতত এঞ্জয় করার মতো ব্যাপার হবে ফেসবুক আর ব্লগে চলা বাম আর নাস্তিকদের মাতম আর হেফাজতের ঈদ উদযাপনের দিন। টিল দেন, টা টা।

সুত্র: আমাদের অর্থনীতি।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ