আওয়ার ইসলাম: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে বৃহস্পতিবার (১ জুন)। এটি হবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পূর্ণাঙ্গ বাজেট।
জনসাধারণের ওপর নানা উপায়ে নতুন কর ও ভ্যাট আরোপ করেই তৈরি করা হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। জানা গেছে, এবার বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে চার লাখ দুইশ ৬৬ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে এই পর্যন্ত ১০ বার জাতীয় বাজেট দিয়েছেন, একটানাই আটবার; তার মধ্যেই আগামী বাজেটকে এগিয়ে রাখছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি বলছেন, আগামী বৃহস্পতিবার সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট উপস্থাপিত হচ্ছে, সেটাই হতে যাচ্ছে, তার ‘সেরা’ বাজেট।
এই মেয়াদ পার করার পর আর মন্ত্রী হবেন না বলে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন ৮৩ বছর পেরিয়ে আসা মুহিত। তাতেও আরও একটি বাজেট তার দেওয়া বাকি থাকবে কিন্তু ভোটের আগে আগামী বছরের সেই বাজেটে যে কিছু করতে পারবেন না, তার স্বীকারোক্তিও এরই মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন তিনি। ফলে নিজের মতো করে কিছু করার, তা এই বাজেটেই করতে হচ্ছে মুহিতকে। ফলে এটাই হবে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট।
এ বছর ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) অনুমোদন করা হয়েছে। সামনের বছর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে এবার পরিধি বাড়ানো হতে পারে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সুবিধাভোগীদের জন্য। একইসঙ্গে বাড়ানো হবে এ খাতের বরাদ্দ। উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে এবারের বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে সরকারের অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সামাজিক ও মানবসম্পদ উন্নয়ন। এ বছর বাজেটে বেশি বরাদ্দ পাবে বিদ্যুৎ খাত। একইভাবে গুরুত্ব পাবে মানবসম্পদ খাত। উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ রাখা হবে পদ্মা সেতুসহ সরকারের মেগা প্রকল্প খাতে। তবে বাড়ানো হতে পারে ব্যক্তিখাতের করমুক্ত আয়সীমা।
বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
শেখ হাসিনা সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট হলেও এটি হবে অর্থমন্ত্রীর টানা নবম বাজেট। এর আগে আবুল মাল আবদুল মুহিত এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরের জন্য দুই বার জাতীয় বাজেট পেশ করেছিলেন।
এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা শাহেদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞিপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিবারের ন্যায় এবারও ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। ওই দিন অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা, বাজেটের সংক্ষিপ্তসার, বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি, সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি, মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি, বিকশিত শিশু: সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা: হালচিত্র ২০১৭, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা, জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন, সংযুক্ত তহবিল-প্রাপ্তি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা -২০১৭, মঞ্জুরি ও বরাদ্দের দাবি (অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন), বিস্তারিত বাজেট (উন্নয়ন), মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট সংক্ষিপ্তসার ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ জাতীয় সংসদ থেকে সরবরাহ করা হবে। একইসঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রণীত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যাবলী (২০১৬-১৭) জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে।
বাজেটকে আরও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইট এ বাজেটের সব তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল যেকোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাঠ ও ডাউনলোড করতে পারবেন। দেশ বা দেশের বাইরে থেকে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফিডব্যাক ফরম পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ পাঠানো যাবে। প্রাপ্ত সব মতামত ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতীয় সংসদ কর্তৃক বাজেট অনুমোদনের সময়ে ও পরে তা কার্যকর করা হবে।
ব্যাপকভিত্তিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি কয়েকটি ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাবে বাজেট সংক্রান্ত তথ্য। এসব ওয়েবসাইটের মধ্যে রয়েছে— www.bangladesh.gov.bd, www.nbr.gov.bd, www.plancomm.gov.bd, www.imed.gov.bd, www.pressinform.portal.gov.bd, www.pmo.gov.bd।
বাজেট উপস্থাপনের পরদিন শুক্রবার (২ জুন) বিকাল ৩টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
এসএস/