যুবাইর ইসহাক: আরবি সনের নবম মাসটি হলো রমযান। রজব শাবানের পর রামযান আসে। রামযান একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। সারা বছরের মধ্য উত্তম মাস, শ্রেষ্ঠ মাস। পুরো মাসে বৃষ্টির মতো রাহমাত বর্ষণ হতে থাকে। জান্নাতের দরজসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। অপরাধীদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়। পাপীদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এ মাসটি মুসলমানদের জন্য উপহার সরূপ। রামযান মুসলমানদের মাঝে উপস্থিত হয় রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে। শান্তি-সুখের পয়গাম নিয়ে।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণীত, মহানবী সাঃ বলেন, যখন রামযানের প্রথম রাত আসে তখন শয়তান ও দুষ্ট জীনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ঘোষণাকারী ঘোষণা করতে থাকে, হে পূণ্যকামী অগ্রসর হও, হে পাপী থেমে যাও। আর প্রতি রাতে অসংখ্য পাপীকে (জাহান্নাম থেকে) মুক্তি দেওয়া হয়।
রামযান মাসটি তিনভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ রাহমাতের, দ্বিতীয় ভাগ মাগফিরাতের, শেষ ভাগ নাজাতের। এ মাসটি তাকওয়া অর্জনের মাস। ক্ষমা প্রার্থনার মাস। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাস। সবুর সংযমের মাস। আত্মশুদ্ধি চরিত্র গঠনের মাস। রাসুল স. এ মাসকে সবুরের মাস বলেছেন। এ মাসটিতে পুরো বছরের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেন পুরো বছর ভালো ব্যবহার ও উত্তম চরিত্রের সাথে কাটানো যায়।
রামযান মাস পুরো বারোটি মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, এ মাসে মানবজাতীর ইহকাল ও পরকালের মুক্তির ঐশী বাণী কুরআন নাজিল করা হয়েছে। রামযান মাসের মধ্যে রয়েছে লাইলাতুল ক্বদর, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।
হযরত আনাস ইবনে মালেক রাঃ থেকে বর্ণীত। তিনি বলেন, একবার রামযান মাস এলে রাসুল (সাঃ) বললেন, এ মাস তোমাদের উপস্থিত হয়েছে এতে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে; সে সর্ব প্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। চির বঞ্চিত মানুষ অন্য কেউ আর তার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয় না।
রাসুল (সাঃ) রামযানের প্রস্তুতি রজব মাস থেকে নেওয় শুরু করতেন। রজম মাস শুরু হওয়ার পর থেকে বলতেন, ’হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে রজব ও শাবানে বিশেষ রহমত দান করুন, এবং রামযান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’
পুরো রামযান আমরা রোজা আদায় করি। রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের দ্বিতীয়টি। এটি প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ । আল্লাহ পবিত্র কোরআন মাজিদে উল্লেখ করেছেন, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল।
রোজা আদায়ের মাধ্যমে আমরা আত্মশুদ্ধির শিক্ষা পাই। সহানুভূতির শিক্ষা পাই। অন্যের প্রতি ভালবাসার শিক্ষা পাই। নৈতিক ইচ্ছা শক্তি অর্জন করতে পারি। মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা লাভ করি। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। রোজা আমাদের স্বার্থত্যাগী সংযমী করে তুলে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণীত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক বনী আদমের নেকীকে দশ গুণ থেকে সাত’শ গুণে বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ বলেন, কেবল রোজা ব্যতিত। কেননা রোজা আমার জন্যই আর আমি নিজেই দিব তার প্রতিদান। সে আমার জন্যই আপন প্রবৃত্তিও ও পানাহার থেকে বিরত থাকে।
রামযান আমাদের জন্য উপহার। রামযানের প্রতিটি মুহুর্ত আমাদের জন্য গনিমত। প্রতিক্ষণ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি সময় আল্লাহর স্মরনে, কোরআন তেলাওয়াত করে, নফল নামায পড়ে কাটানো প্রয়োজন। শুধু সারদিন না খেয়ে থাকাকে রোজা বলা হয় নি। সাথে অনর্থক কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণীত। তিনি বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি (রোজা রেখে) মিথ্যা কথা ও মিথ্যা আচরণ পরিহার করে না, তার খানা-পিনা ত্যাগ করা (রোজ রাখা) আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।
তাই আমাদের রামযানে পবিত্র রক্ষা করা প্রযোজন। এবং জীবনে রামযানে শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
রমজানের পবিত্রতা ও তাৎপর্য প্রতিফলনে রাষ্ট্রপতির আহবান