সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর
কবি
সমস্যা যেটা হয়েছে, ধর্ম হিসেবে ইসলাম ততোটা উৎসবমুখর নয়। কারণ, ইসলাম পুরোটাই একটা স্পিরিচুয়াল ধর্ম। ঐশ্বরিক। ঈশ্বরতুষ্টির জন্য এখানে আচরিক ফেস্টিভ্যালের চেয়ে মানবাত্মার আত্মনিবেদনকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। স্রষ্টা এবং সৃষ্টির মধ্যে সম্পর্ক অনেকটা ওয়ান টু ওয়ান শো; ম্যান টু গড এবং গড টু পার্সোনাল মেনকাইন্ড! সামষ্টিক উপাসনা কেবলই ধর্মীয় নৈকট্য জোরদারের বিষয়। ফলে, ইসলামে ফেস্টিভধর্মী উপাসনা একেবারেই নগন্য।
অন্যদিকে হিন্দুধর্ম পুরোটাই উৎসবকেন্দ্রিক। পুজোপাঠ থেকে শুরু করে মৃতের সৎকার, কৃষি থেকে নিয়ে জ্ঞানার্জন, গুরুভক্তি থেকে সূর্যোদয়— সব আচরিক কাজেই উৎসব বিরাজমান। যেহেতু হিন্দুধর্ম একটি লৌকিক ধর্ম, কোনো ঐশ্বরিক ধর্ম নয়— এ কারণে ধর্ম প্রণয়নের সময় যুধিষ্ঠিরগণ আর্য-দ্রাবিড়ীয় মানুষের জন্য প্রচুর ফেস্টিভ্যালের ব্যবস্থা রেখেছেন। মহাভারত, রামায়ণ, ভগবত গীতায় দেবতুষ্টি মানেই মুহুর্মুহু পুজো এবং পুজো মানেই নাচা-গানা-ডিশটিং ডিশটিং ব্যাপার ননস্টপ চলতেই থাকবে।
উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলমান সহাবস্থানের ফলে দুই ধর্মের নানা আচার-রীতি দুই ধর্মের মধ্যে মাল্টিপ্লাই হয়ে গেছে। হিন্দুধর্মের যেখানে খামতি আছে সেখানে ইসলামের আচার রিপ্লেস হয়েছে, আবার ইসলাম যেটাকে পরিপুষ্ট করেনি সেখানে দ্রাবিড়ীয় মুসলিমরা হিন্দুদের রীতি লটকিয়ে দিয়েছে।
শবেবরাত-শবেকদর ব্যাপারটাও এমনই হয়ে গেছে। মুসলিম উপাসনায় ফেস্টিভ্যালের কোনো ভিত্তিই নেই। এই দুই মহিমান্বিত রাতেও নেই। এ রাত দুটো কেবলই ম্যান টু গড রিলেশনের ব্যাপার। কিন্তু ওই যে বললাম— ইসলামে সামষ্টিক ফেস্টিভ্যালের কমতি আছে! এই কমতির জায়গাটা দখল করেছে হিন্দুধর্মের ফেস্টিভনেস। বাতি, রুটি, পটকা, হৈহুল্লোড়, খানা-পিনা ঢুকে গেছে স্রষ্টা ও সৃষ্টির ঐকান্তিক আরাধনার মধ্যে। এসব রাতের আগমন মানেই মুসলিম সমাজে অটোমেটিক উৎসবের আমেজ চলে আসে।
কিছুদিন পর হয়তো এই ফেস্টিভনেস কেবলই উৎসবে পরিণত হবে। আমরা স্যোস্যাল নেটওয়ার্কে একজন আরেকজনকে গ্রিটিংস পাঠাবো—
HAPPY SHAB-E-BARAT...
HAPPY SHAB-E-QADAR!
পাদটীকা:
নিষ্পাপ মেয়ের প্রতি অবিচারের অপমান সহ্য করতে না পেরে হযরত আলী ও তার মেয়ে আইশা ক্ষোভে অভিমানে ট্রেনের চাকার নিচে আত্মাহুতি দিলেন। বাঙালি সেই খবরে বড় একটা রা করেনি। আপন জুয়েলার্সের সোনালি কেবিনে স্থূল অর্থে দুই মেয়ে ধর্ষিত হওয়ায় গতি-প্রগতিশীল সকলেই পাজামা টাইট করে বেঁধে রাস্তায় নেমেছেন। ধর্ষকদ্বয় গ্রেফতারও হয়েছে। শাবাশ বাঙালি!
মানবপ্রজাতি বরাবরই সেক্স ভালোবাসে, সেক্সে উত্তেজনা বোধ করে। হোক সেটা সেক্সুয়াল গাল-গপ্পো, ভিডিও ক্লিপ কিংবা ধর্ষণের প্রতিবাদ।
সেক্স বিষয়টা আলোচ্যসূচিতে থাকলেই হলো, সেটা কল্পনায় রেখে ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করতেও এক ধরনের নিষিদ্ধ সুখ সুখ অনুভূতি লাভ হয়।