জোবায়ের রাজু
দূরের দিনের কথা। যখন অামরা ছোট্ট ছিলাম, ধর্মীয় উৎসব পবিত্র শব ই বরাত ছিল অন্য রকম এক নির্মল অানুষ্ঠানিকতা। সন্ধ্যায় অালো ফুপু একদল পোলাপান নিয়ে পুকুর ঘাটে নামতেন গোসল করতে। কসকো সাবান মেখে অামরা স্নাণ করতাম। পুকুরে ঝাঁপাঝাঁপি করলে অালো ফুপু দৃঢ় স্বরে বলতেন 'এতো দপাদপি নয়। অাজ পবিত্র রাত। গুণাহ হবে।' অামরা অালো ফুপুর কথা অামলে নিয়ে চুপচাপ পুকুর ঘাট থেকে উঠে অাসতাম।
তারপর সোজা মসজিদ বাড়ি। মুরুব্বিদের সাথে বিনম্র জিকিরে গলা মেলাতে উৎসাহী হয়ে উঠতাম। অাসলে সবার মনে তখন একটাই তৃপ্তিময় উদ্দেশ্য ছিল- জিলাপী। নামায শেষে মোনাজাতের পর মসজিদের ভেতরে অামাদের হাতে তুলে দেয়া হতো লোভাতুর অাস্ত জিলাপী। অাহা, সে জিলাপীতে কী অমৃত তৃপ্তি। পরাণ জুড়িয়ে যায় মুখে ভরে দিলে।
মধ্য রাতে অাম্মা মহা উল্লাস নিয়ে যখন চালের রুটি অার গরুর মাংশের পসরা সাজাতেন। তখন এক অমোঘ অাবেস নিয়ে সেসব উচ্চমার্গীয় খাবারে নিজেকে পুরোপুরি সমর্পন করতে অামার বিলম্ব হতো না। যেন এ খাবারগুলি ছাড়া শব ই বরাত পূর্ণ না।
সেদিন চলে গেছে। অামি এখন পরিণত একজন। অালো ফুপু দূর গাঁয়ের গৃহবধূ।
কতটা বছর শব ই বরাতের সন্ধ্যায় পুকুরে নেমে কসকো সাবান মেখে গোসল করা হয় না। জীবিকায় অাপাদমস্তক মগ্ন বলে।
অনেকদিনের কাঙ্খিত শব ই বরাতে এখন গোসল করি রাত দশটা কী সাড়ে দশটায়। পুকুরে নয়, সময়ের অাবর্তিত বাথরুমে। কোথায় সেই কসকো সাবান! তার বদলে এখন অামেরিকান স্প্রিং সাবান। কোথায় অামার সেই অালো ফুপু! অার কোথায় বা সেসব একদল পোলাপান!
তবুও শব ই বরাত অাসে পবিত্র রাত নিয়ে।জিলাপীর সেই লোভ এখন অার নেই। প্রজন্মের এই কৈশোরী চিল্লাচিল্লিতে শুনতে পাই অামার সেই একখানা জিলাপীর লালিত অাকুতি।
বিভিন্ন কারণে এখনকার এমন পবিত্র রাতে জিকিরে যোগদান হয় না। মসজিদ ঘর যখন ক্রমে ক্রমে জনশূন্য হতে শুরু করে, তখন মসজিদমুখি হই। নফল অাদায়ের সাধনায় ঘনিয়ে অাসে মধ্যরাত। দীর্ঘ মোনাজাতে তুলে উঠে দু হাত। তারপর বাসায় ফিরলে অাসে সেই অাগের মত চালের রুটি অার গরুর মাংশের উৎসব।
হে অাল্লাহ, অামাদের সবগুলি গুণা ক্ষমা করে দাও।