ইফতেখার জামিল: কাসেম বিন আবুবাকারকে নিয়ে যে প্রশ্নগুলো উঠছে, সে প্রশ্নগুলো বিস্তৃতভাবে গল্প-সাহিত্যকেই করা যায়। গল্প-সাহিত্যের কোন স্থিতি নাই। কাসেম বিন আবুবাকার থেকে হুমায়ুন, সুনীল-সমরেশ থেকে একটু পিছিয়ে রবীন্দ্র-বিভূতিভূষণ। অথবা বিশ্ব সাহিত্যে মানফালুতি, তলস্তয় বা নসিম হিজাজি। অথবা বিমূর্ত, সাইকো, যৌন বা সাইন্স ফিকশন। পথের কোন যতি নেই। আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেই, বঙ্কিমের উপন্যাস বড়জোর আরাইশো-তিনশো কপি ছাপা হতো। বটতলার পুথি ছাপা হতো হাজারে হাজার। কীভাবে বিচার করবেন?
বাংলাদেশে সাইমুম সিরিজ ব্যাপক জনপ্রিয়। ইসলামপন্থী লেখকের লেখা। পুরো সিরিজের খোলাসা বলি। লেখক দেখিয়েছেন, বিশ্বব্যবস্থা বলে কিছু নেই। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নায়ককে সম্মাননা দেন। গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের সাথে নায়কের হরদম উঠাবসা।আমেরিকা ও আহমদ মুসা মিলে পিস প্রজেক্টে কাজ করেন। আরও হাস্যকর হচ্ছে, আমেরিকান, ফ্রেঞ্চ ও রাশান রাজকন্যার সাথে নায়কের বিয়ে দেন।আমার কাছে মনে হয়, আবুল আসাদের মধ্যে আত্মপরিচয় সঙ্কট আছে।নয়া বিশ্বব্যবস্থার বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট ছিলোনা।আর বিয়েগুলোর বিষয়ে নাই বলি।পশ্চিমারা যদি আবুল আসাদের সন্ধান পায়, তাহলে তাকে পিস প্রজেক্টের জন্য সম্মাননাও দিতে পারে। হেফাজতের ঘটনার পরে কিছু উপন্যাস হয়েছে। একটার নাম হেফাজত কন্যা। এগুলোকে সাহিত্য কীভাবে বলবেন?
হয়তো কলকাতার উপন্যাস পড়তে বলবেন। মুশকিল হচ্ছে, সুনীল-সমরেশসহ কলকাতার উপন্যাসগুলোর একটা বড় অংশ পড়ার অযোগ্য। বিশেষত সুনীলকে আমার মনে হয় তিনি মানুসিক রোগী ছিলেন। একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে এত পরকীয়া-উপন্যাস লেখা সম্ভব না। যে সমাজে এইসব উপন্যাস ক্রিয়া করে, সেই সমাজ কীভাবে সুস্থ সমাজ হতে পারে? আপনি হয়তো বলবেন, এরা ভালো নয়। রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস পড়ো। রবীন্দ্রনাথদের নিয়ে আমাদের সমাজে যে মিথ চালু আছে, সেটা বেশ হাস্যকর।
একবন্ধু কদিন আগে একটা নাটকের কথা বলল। তিশার। সে রবীন্দ্র নায়িকা বিনোদিনী হতে চায়। একজন বাংলার শিক্ষকের প্রেমে পড়ে সে পোশাকে ও ভাষায় বাঙ্গালী হতে চায়।মুশকিল হচ্ছে, ইয়ং বেঙ্গলের জীবন বাংলাদেশী মুসলমানদের জন্য আদর্শ হয় কীভাবে? হিন্দু জাতীয়তাবাদ, পশ্চিমা মূল্যবোধ এবং রোহিণী-বিনোদিনীর মত অস্থির চরিত্র।অপুর মতো অবিশ্বাসী,নেতি ও পশ্চিমা দৃষ্টি তো আমরা বহন করিনা।
আপনি নিশ্চয় বলবেন, সাহিত্যকে নৈতিক দৃষ্টিতে দেখতে হয়না বাপু।মানবিক দৃষ্টিতে দ্যাখো। আচ্ছা, তাহলে আপনিই কীভাবে কাশেম বিন আবু বকরদের নিন্ম ও অনৈতিক সাহিত্য বলেন। বটতলার সাহিত্যের ক্যাটাগরি বের করেন। ইয়ং বেঙ্গলদের সাহিত্য দিয়ে আমার পাঠ্যক্রম ভরে রাখেন। জনগণ তো তাদের পড়তে রাজী না। এটা ঠিক যে, গল্প-সাহিত্য নিছক নৈতিক, রাজনৈতিক ও আদর্শিক হতেই হবে সেটা আমিও বলছি না। তবে, নৈতিক, রাজনৈতিক ও আদর্শিক ব্যাখ্যা দেবার ভান ধরবেন না। এটা ভণ্ডামি।
প্রশ্ন করুন। প্রশ্নের বিকল্প নেই।
দেশি মিডিয়ায় উপেক্ষিত কাসেম বিন আবু বকরকে যেভাবে মূল্যায়ন করলো বিশ্ব মিডিয়া