রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


যে কারণে ইসলামের ছায়াতলে আর্জেন্টাইন দম্পতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মো. রাহুল আমীন: রেহো ক্যালকুইন এবং সোফিয়া গঞ্জালেস আর্জেন্টিনার আদিবাসী ‘মাপুচি’ জনগোষ্ঠীর সদস্য। এই দম্পতি তাদের জীবনের বেশিরভাগ সময়ই ‘শেইমানিজম’ ঐতিহ্যের অনুসরণ করেছেন। একপর্যায়ে তারা খ্রিস্টান মিশনারিদের মাধ্যমে বাইবেলের সঙ্গে পরিচিত হন।

ক্যালকুইন এবং গঞ্জালেস তাদের আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক হিসেবে বাইবেল পড়ার পর খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু খ্রিস্টধর্মগ্রহণ করার পর তাদের মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়; যেগুলোর জবাব বাইবেলে ছিল না।

পরে তারা তুরস্কের ইস্তাম্বুল সফরে গিয়ে কোরআন ও ইসলামের সংস্পর্শে আসেন এবং কোরআনের মধ্যে তাদের দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পান এবং তা তাদেরকে ইসলামের পথে পরিচালিত করে। এই দম্পতি ২০১১ সালে ইসলামে ধর্মান্তরিত হন।

‘মাপুচি’ উপজাতির প্রায় ৪,৫০,০০০ জন সদস্য বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। শেইমানিজম উপজাতিরা খুবই পরিশ্রমী ও শক্তিশালী। তাদের অধিকাংশই একটি ‘সাধারণ’ বিশ্বাসে বিশ্বাসী।

ক্যালকুইন তাদের সেই ‘সাধারণ’ বিশ্বাস সম্পর্কে বলেন, ‘ইসলাম পারস্পরিক বিনিময় নীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমার পূর্ববর্তী বিশ্বাসের জায়গা হচ্ছে, আমি যেসমাজে বাস করি সেখানে আমি তার একটি অংশ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সেন্ট ‘সেসটেরসের’ শিক্ষা অনুসরণ করি; যার ভিত্তি হচ্ছে প্রকৃতি, মানুষ ও প্রত্যেক প্রাণী বিশেষকরে ঈশ্বরের প্রতি সম্মান। আমাদের পূর্বের বিশ্বাসে বলা হয়েছে কেবল একজন ঈশ্বর আছে। সেখানে এমন কোন শব্দ, পেইন্টিং বা ভাস্কর্য নেই; যা ঈশ্বরকে বর্ণনা করতে পারে। ঈশ্বর হচ্ছেন সব কিছুর মালিক; যা তিনি সৃষ্টি করেছেন। ইসলামের অনেক আগে থেকেই এই বিশ্বাস বিশ্বজুড়ে অনুসরণ করা হয়েছে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ইসলামে অচেনা কোন কিছু ছিল না। আমাদের পূর্ববর্তী বিশ্বাস এবং ইসলামের মধ্যে অনুরূপ মিল আমাদের ধর্মান্তর এবং মুসলমান হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’

ক্যালকুইন তার ৭ বছর বয়সী মেয়ে সম্পর্কে বলেন, ‘সে তাদের ইসলামকে অনুসরণ করেই বেড়ে ওঠছে।’

তিনি বলেন, ‘ইসলাম মানুষকে তাদের পছন্দের মর্যাদা দেয়। ইসলামের পথ হচ্ছে স্বাধীনতার পথ।’

তিনি জানান, তাদের মাপুচি জনগোষ্ঠীর মানুষেরা সমান সুযোগ ফিরে পেতে শত শত বছর ধরে লড়াই করে আসছে। তিনি বলেন, ‘তারা তাদের মূল্যবোধ রক্ষার জন্য লড়াই করছে; এই মূল্যবোধের সঙ্গে ইসলামি মূল্যবোধের অনেক মিল রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, সকল প্রাচীন সংস্কৃতি ইসলামের একটি অংশ। ইসলাম একটি বড় এবং মর্যাদাপূর্ণ ধর্ম; যাতে সব কিছুর উপস্থিত রয়েছে।’

সত্যের অন্বেষণ ক্যালকুইনকে ইসলামের পথে পরিচালিত করেছে। ইসলামের ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব এবং সংহতি তাকে মুগ্ধ করেছে। তার পূর্বের বিশ্বাসসমূহে এসব কিছুর অভাব রয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি জানান, তিনি ইসলাম সম্পর্কে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং তিনি যেখানেই যান সেখানেই ইসলামের বিস্ময় সম্পর্কে মানুষ বলেন।

তিনি জানান, তাদের তুরস্ক সফর থেকে আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস ছিল, আমরা তুরস্ক গিয়ে ইসলাম সম্পর্কে আরো অনেক জানতে পারব। আর আমরা আমাদের সমাজ থেকে ইসলামি সংস্কৃতি সম্পর্কে যা শিখেছি তা তাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারব।’

অনুরূপভাবে সোফিয়া গঞ্জালেস জানান, তার কন্যার জন্য একটি পথ অনুসরণ করা প্রয়োজন। গঞ্জালেস বলেন, ‘আল্লাহ ও ইসলামের নবীর শিক্ষা সম্পর্কে আমার মেয়ের জানা প্রয়োজন। নামাজ আদায়ের জন্য যা যা প্রয়োজন আমি তাকে সেগুলোই শেখাচ্ছি।’

গঞ্জালেস হিজাব পরেন এবং প্রথম প্রথম মানুষ তাকে প্রশ্ন করত যে, কেন তিনি এসব পোশাক পরেন।

তিনি বলেন, ‘তারা মনে করত আমাকে হিজাব পরতে বাধ্য করা হয়েছে। অতঃপর আমি তাদেরকে এটি পরার কারণ জানাই। পরবর্তী সময়ে তারা আমার পছন্দকে সম্মান জানায় এবং আমাকে গ্রহণ করেন।’

ভবিষ্যতে তারা একটি মুসলিম দেশে বাস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

গঞ্জালেস বলেন, ‘আমরা একটি মুসলিম দেশ চলে যাবার কথা চিন্তা করছি। আমরা মুসলিম দেশগুলোর সবকিছুই ভালোবাসি। তারা আমাদের দেশ থেকে পুরোই ভিন্ন।’

ইস্তাম্বুলে তাদের ছোট্ট এক সফর সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে গঞ্জালেস বলেন, ‘ইস্তাম্বুল একটি চমৎকার শহর। এটি বিশ্বের কেন্দ্রের মত। ইস্তাম্বুল এমন একটি শহর যা বিশ্বের অনেক সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের ধর্মীয় বিয়ের অনুষ্ঠান ইস্তাম্বুলে হয়েছিল। আমরা আবারো এখানে ফিরে আসতে চাই।’

তুরস্ক ভিত্তিক ডেইলি সাবাহ অবলম্বনে 


সম্পর্কিত খবর