আওয়ার ইসলাম : কওমি সনদের স্বীকৃতি অর্জনে অবদান রাখায় আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। গতকাল হাটহাজারী পার্বতী হাইস্কুল মাঠে হাটহাজারী ওলামা পরিষদের পক্ষ থেকে আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
সংর্বধনা সভায় আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ও দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি করে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের সমমান প্রদান করায় মহান আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করছি। দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। তিনি সনদ বিষয়ে প্রাপ্ত এই অর্জনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সকল চক্রান্ত নস্যাৎ করার জন্য ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে আরো দৃঢ় রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
হাটহাজারী ওলামা পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ শফীর সভাপতিত্বে হাটহাজারী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির ও মাওলানা মীর ইদ্রীস এর সঞ্চালনায় সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য রাখেন, মাওলানা আজিজুল হক আল-মাদানী, মাওলানা মোহাম্মদ রফিক নানুপুর মাদরাসা, মুফতি হাবিবুর রহমান নাজিরহাট বড় মাদরাসা, মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী বাবুনগর মাদরাসা, মুফতি জসিম উদ্দীন, মুফতি কেফায়েত উল্লাহ হাটহাজারী মাদরাসা, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুর মাদরাসা, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জাফর আহমদ বাথুয়া মাদরাসা, মুফতি মুহাম্মদ আলী মেখল মাদরাসা, মাওলানা আহমদ দিদার হাটহাজারী মাদরাসা, মাওলানা আনাছ মাদানী, মাওলানা কুতুব উদ্দীন, আব্দুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা কাজী নূরুল আলম, মাওলানা আব্দুর রহিম ইসলামাবাদী, মুফতি আব্দুল আজীজ রশিদিয়া মাদরাসা, মাওলানা হাবীবুল্লাহ নদভী, মাওলানা মুহাম্মদ নছিম, মাওলানা কাজী শফি উল্লাহ শাহ ওয়ালিউল্লাহ মাদরাসা, মাওলানা আবু তৈয়ব আব্দুল্লাহপুরী, মুফতি শিহাব উদ্দীন, মাওলানা মাহমুদ হোসাইন, মাওলানা হাবীবুল হক (বাবু), মাওলানা জাহাঙ্গীন মেহেদী, মাওলানা জাকারিয়া নোমান, মাওলানা এমরান শিকদার, মাওলানা কামরুল কাসেমী, মাওলানা হাবীবুল্লাহ্ গড়দুয়ারী, মাওলানা আনাস জমিরী প্রমুখ।
সংবর্ধনা সভায় বেফাক সভাপতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে গ্রিক দেবী থেমিস মূর্তি অপসারণ এবং সনদের স্বীকৃতি সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লীষ্টদের জোর তাগিদ দেন।
কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদের সরকারী মানগ্রহণ বিষয়ে গত ১১ এপ্রিল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ওলামায়ে কেরামের বৈঠক নিয়ে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে বলেন, বেফাকসহ অপরাপর কওমি মাদরাসা বোর্ডসমূহের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের আলোকেই সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক হয়েছে এবং দাওরায়ে হাদীসের সনদের মান গ্রহণে আমাদের পূর্বঘোষিত শর্তে সামান্যতমও ছাড় দেয়া হয়নি।
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন আমাদের পূর্ব ঘোষিত যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করেই যে সনদের মান প্রদান করা হয়েছে, তাতেই আমরা যে নীতিতে অবিচল অটল ছিলাম, সেটা স্পষ্ট হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সবসময় ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতার বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমি কাজ করে আসছি। এই ঐক্য গড়ে তোলার স্বার্থে অনেক সময় আমার নিজস্ব মতামত ও সিদ্ধান্তেও ছাড় দিয়ে থাকি। কারণ, ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতার ঐক্যবদ্ধ মজবুত অবস্থান ছাড়া বর্তমানের বহুমুখী ইসলাম বিদ্বেষী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা অনেক কঠিন।
আল্লাম শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, কওমি মাদরাসার সনদ নিয়ে বেফাক ও অন্যান্য আঞ্চলিক কওমি বোর্ডসমূহের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘ দিন থেকেই আমরা কাজ করে আসছি। আর সেই চেষ্টার সুফল হিসেবে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসায়ে বেফাকসহ অপরাপর ছয় বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ দীর্ঘ এক বৈঠকে মিলিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করে। তার সুফল হিসেবেই কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র ও স্বাধীন বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ও দারুল উলূম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরে সরকার নিয়ন্ত্রিত কোন কমিটি, কমিশন, বিদ্যমান কারিকুলাম পরিবর্তন ও মাদরাসা পরিচালনায় কোনরূপ সরকারী হস্তক্ষেপ ছাড়া কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদের মাস্টার্স (ইসলামি স্টাডিজ ও আরবি) এর সমমানের দাবী অর্জিত হয়।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী মহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে অনেক আগে থেকে। এসব ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা শতভাগ অক্ষুণ্ন রেখে সকলের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান বজায় রাখার বিষয়টিকে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছি সবসময়।
পরম করুণাময় আল্লাহর ইচ্ছায় বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাসমূহ শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনাসহ অন্যান্য সকল বিষয়ে পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। আর এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের ফলেই গত ১১ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ স্তর থেকেই উলামায়ে কেরাম সম্মানিত হয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী কওমি মাদরাসার গৌরবময় ঐতিহ্য ও ইসলামী শিক্ষার গুরুত্বের কথা স্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছেন।
তিনি দেওবন্দের উসূল ও কওমি স্বকীয়তা শতভাগ অক্ষুণ্ন রেখে আমাদের প্রত্যাশা মতে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদকে মাস্টার্স-এর সম-মান দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে স্থাপিত গ্রীক মূর্তি অপসারণের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি প্রদান, স্বাধীনতা সংগ্রামে কওমি উলামায়ে কেরামের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার উল্লেখসহ ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র হলে এদেশের মানুষ তা মেনে নিবে না।
সভায় হাটহাজারী, ফটিকছড়ী, রাউজান, রাঙ্গুনীয়া সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে লক্ষ্যদিক মানুষ মিছিল সহকারে সমবেত হয়। মিছিলে জনতা, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা- গ্রীক দেবী থাকবে না। আল্লামা শাহ আহমদ শফী এগিয়ে চলো- আল্লাহ্ আছে আপনার সাথে, শ্লোগান দিয়ে আকাশ-বাতাস ভারি করে তোলে।
-এআরকে