মাহমুদ সিদ্দিকী
মানবিক ক্রোধ, বোধ, দ্রোহ, প্রেম, দহন, বিমানবিকতা এবং আধ্যাত্মিকতা, সবকিছুর সম্মিলন যে ভুবনে ঘটে তার নাম কবিতা। এ সবকিছু ভেতরে লালন করেন যিনি, অতপর ভাবনা ও যাতনাসহ সুনিপুণ শব্দকারিগরের ন্যায় শব্দ পিটিয়ে-পিটিয়ে ভাবনাকে কবিতার মোহনিয়া শরীরে গড়েন, তিনি কবি।
কবিতায় আধ্যাত্মিকতা অনেক প্রাচীন বিষয়। জালালুদ্দিন রুমি, শেখ সাদিরা কবিতায় আধ্যাত্মবাদকে অনেক উর্ধ্বে নিয়ে গেছেন। রুমি-সাদির আধ্যাত্মবাদ এশিয়া-ইউরোপে সর্বজনবিদিত এবং নন্দিত। ইউরোপের তরুণরাও আজকাল রুমির আধ্যাত্মিক বাণীসম্বলিত টিশার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়।
আরবি-উর্দু-ফারসি কবিতায় আধ্যাত্মিক প্রেমের উপস্থিতির প্রতুলতা থাকলেও বাংলা কাব্যে অপ্রতুল। ফররুখ ইসলামি রেনেসাঁর কবি হতে পারলেও আধ্যাত্মিক কবি নন। বলা যায়, বাংলা কাব্যে এই জায়গাটায় শূন্যতা রয়ে গেছে। এই শূন্যতা হয়ত একদিন তরুণদের হাত ধরেই পূর্ণতা লাভ করবে।
বাংলা কবিতায় আধ্যাত্মিকতা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত আড়ালে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন তরুণ কবি সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর। সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর একজন প্রতিভাধর শিল্পী। কাজ করেছেন বিভিন্ন মাসিক সাহিত্য কাগজে। তার সম্পাদনায় বর্তমানে নবধ্বনি সাহিত্য কাগজ বের হয়। ছিলেন জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকা লিখনীর সহ-সম্পাদক।
আধ্যাত্মিকতা ও প্রেম নিয়ে তার দীর্ঘদিনের নিভৃত কাজের ফসল সদ্যপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'ইয়া আফরোজা ইয়া আফরোজা।' গুণী প্রচ্ছদশিল্পী কাজী যুবাইর মাহমুদের করা প্রচ্ছদে 'ইয়া আফরোজা ইয়া আফরোজা' প্রকাশ করেছে 'ফেস্টুন।' বইটির গায়ের মূল্য ১৮০ টাকা।
কাব্যগ্রন্থটির পাঠ-উন্মোচন হয়েছে গত ৮ এপ্রিল রাত বারোটার কিছু আগে, একটু ভিন্নভাবে। গ্রন্থটির পাঠ-উন্মোচন হয়েছে নৌকায় চড়ে পিদিমের স্বল্প আলোয় নদীর মৃদু ঢেউয়ে দুলতে দুলতে। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, চাঁদে-মেঘে লুকোচুরি খেলা, বাতাসে উড়ছে এলো চুল। সুবিশাল আকাশের নিচে নদীর মৃদু ঢেউয়ে দুলছে ক'জন কাব্যরসিক তরুণ, হাতে 'ইয়া আফরোজা ইয়া আফরোজা', সাথে প্রাণচঞ্চল কবি। আধ্যাত্মিক কাব্যগ্রন্থের পাঠ-উন্মোচনের জন্য যুৎসই সময় এবং স্থান। কবি এর নাম দিয়েছেন 'নৌকান্মোচন।'
অনাড়ম্বর প্রাণপ্রাচুর্যে পূর্ণ এক কাব্যিক পরিবেশে 'ইয়া আফরোজা ইয়া আফরোজা'র পাঠ-উন্মোচনে কবিতাপাঠ শুরু করে তুহিন খান। রোদেলার চশমা দিয়ে আবৃত্তি শুরু হয়ে নদীর ঢেউয়ে দুলতে দুলতে, সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে দীর্ঘ সময় কেটে যায়। কবিতাপাঠে মুগ্ধ হয়ে শ্রোতাদর্শক হর্ষধ্বনি তোলে- ইয়া আফরোজা! ইয়া আফরোজা!!
'ইয়া আফরোজা ইয়া আফরোজা'র প্রথম পাঠ-প্রতিক্রিয়া লিখেছেন নিভৃতচারী আভিসন্দর্ভিক নেসারুদ্দীন রুম্মান। সেখানে তিনি বইটির বেশকিছু দিক তুলে ধরে লিখেছেন-
● আধ্যাত্মিকতাকে জাগতিক প্রেমের সাথে এবং জাগতিক প্রেমকে আধ্যাত্মিকতার সাথে এক অভিনব উপায়ে জুড়ে দেওয়া হয়েছে 'ইয়া আফরোজা ইয়া আফরোজা'-য়।
● মনভোলানো আবেগের এই কবিতাবইয়ে আছে উজ্জ্বল সুপাঙক্তেয় পঙক্তিও।
● কবিতা সবার কম হয়ে উঠে, কিন্তু 'ইয়া আফরোজা ইয়া আফরোজা'—নর-নারী-ক্লীব, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, প্রেমী ও গরপ্রেমী, ধার্মিক ও বকধার্মিক, মোল্লা ও নিমমোল্লা, সাধু ও শয়তান—সবারই হয়ে উঠতে পারে।
● 'ইয়া আফরোজা ইয়া আফরোজা' একটি প্রেমিকবান্ধব ও প্রেমিকাঘনিষ্ট কিতাব। প্রেমসফল ও প্রেমবিফল সকলের জন্য 'ইয়া আফরোজা ইয়া আফরোজা' সকাতর ও স্রান্দমগ্ন।
● সকলের শোকেস-শেলফ, শিথান-পইথান, জাম্বিল, পড়ার টেবিল এবং কোমল-কাষ্ঠ সকল হাত ভরে উঠুক 'ইয়া আফরোজা ইয়া আফরোজা'-য়।
আশা করা যায়, 'ইয়া আফরোজা ইয়া আফরোজা' বাংলা কাব্যসাহিত্যে প্রেম ও আধ্যাত্মিকতায় উল্লেখযোগ্য সংযোজনের স্বীকৃতি পাবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা এবার উপন্যাসে
আরআর