শাহনূর ইসলাম শাহীন
কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক
বনু আসাদ মদিনার একটি প্রসিদ্ধ গোত্র। মক্কা বিজয়ের পূর্বে বনু আসাদ গোত্র কুরাইশদের পক্ষাবলম্বন করে তাদের সর্বাত্বক সহযোগিতা করত। এরা সর্বদা মদিনার মুসলমাদের বিরোধিতায় লিপ্ত থাকত। ভন্ড নবী তুলায়হা ইবনে খুয়ায়লিদ ছিল বনু আসাদ গোত্রেরই লোক। নবম হিজরী সনে এ গোত্রটি ইসলাম গ্রহণ করে। ইসলাম গ্রহণের পর আসাদ গোত্র একবার রাসূল (স.) এর দরবারে একটি প্রতিনিধি দল পাঠায়। প্রসিদ্ধ গোত্র হিসেবে তাদের অহংকারী মেজাজ তখনো দূর হয়নি।দাম্ভিকতার সুরে তারা রাসূল (স.) কে বলল, আপনি কিন্তু অভিযান পাঠিয়ে আমাদেরকে পরাস্ত করে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেননি বরং আমরাই স্বতঃস্ফুর্ততার সাথে ইসলাম গ্রহণ করেছি।
তাদের এমন অহংকারী মনোভাবের পরিপেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা সূরা হুজুরাতের ১৭ নং আয়াত অবতীর্ণ করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা মনে করে ইসলাম গ্রহণ করে আপনাকে ধন্য করেছে। হে নবী আপনি বলে দিন, ইসলাম গ্রহণ করে তোমরা আমাকে ধন্য করেছ এমনটি ভেবো না; বরং ঈমানের দিকে পরিচালিত করে আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম অনুগ্রহ করেছেন। যদি তোমরা সত্যবাদি হয়ে থাকো।
বনু আসাদ গোত্রের প্রতি ঐ প্রতিনিধি দলের কাছে রাসূল (সা.) একটি চিঠি প্রেরণ করেন। প্রেরিত চিঠির ভাষ্য ও বিষয়বস্তু অনুসারে স্পষ্ট হয় যে, তারা রাসূল (স.) এর নিকট একটি দাবি পেশ করেছিল। সেটা হলো, তারা চেয়েছিল তাদের প্রতিবেশী কোনো এক গোত্রের কুয়ো, জমিজমা ও ফসলি ভূমিতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু রাসূল (স.) তাদের দাবি নাকচ করে দিয়ে চিঠির মাধম্যে লিখিত ফরমান পাঠিয়ে দেন।
রাসূল (স.) তার প্রেরিত চিঠিতে লিখেন,
আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (স.) এর পক্ষ থেকে বনু আসাদের প্রতি-
তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমি তোমাদের নিকট এই মর্মে আল্লাহর প্রশংসা করছি যে, তিনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই।
পর সমাচার,
তায় গোত্রের কুয়োসমূহ ও তাদের জমিজমা এবং তাদের ভূমিতে বিনা অনুমতিতে তোমাদের কেউ কোনো ক্রমেই প্রবেশ করবে না। যে আমার অনুগত থাকবে না তার ব্যাপারে আমার কোনো দায়িত্ব নেই। তাদের প্রতি আমার নিযুক্ত প্রশাসক কুযায়া ইবনে আমর (রা.) সবকিছু দেখাশুনা করবে।
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (স.)
(তাবাকাতে ইবনে সাদ : ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৩। তথ্যসুত্র : বিশ্ব দরবারে মদিনার চিঠি পৃষ্ঠা ২০৮।)
আমাদের সমাজে প্রায়ই দেখা যায় একজন আরেকজনের সম্পদ জোর করে দখলে নিয়ে ভোগ বিলাসে মত্ত হয়। এক্ষেত্রে সমাজের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ জবর দখলকারীর পক্ষাবলম্বন করে দখলকারীকে সহযোগিতা করে। কখনো কখনো প্রভাবশালীদের প্রকাশ্য ছত্রছায়ায় আবার কখনো তাদের নিরব অনুসমর্থনে ভোগ বিলাসীরা দখলদারিত্বে উন্মুখ হয়ে পড়ে। এমনও হয় নিরীহ মানুষের সম্পদের উপর মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য জবরদখল করে এবং তাতে গর্হিত পর্ন্থায় প্রভাবশালীদের নিকট অন্যায়ভাবে নিজের দাবি প্রতিষ্ঠা করে। একটা পর্য্যায়ে ক্ষমতাশীলদের হস্তক্ষেপে ভুক্তভোগির সম্পদে নিজের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করে। সামাজিক আপোস মীমাংসার নাম করে সমাজের প্রতিনিধিত্বহীন নিম্ন শ্রেণীর লোকদেরকে বাধ্য করা হয় নিজের সম্পদ ছেড়ে দেয়ার জন্য।
বনু আসাদ গোত্রের প্রতি রাসুলুল্লাহর (স.) প্রেরিত চিঠিতে সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী ক্ষমতাবান, প্রভাবশালী নেতৃবর্গের জন্য রয়েছে শিক্ষামূলক দিক-নির্দেশনা। রয়েছে শান্তি এবং মুক্তির ফয়সালা। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রতিফলিত হোক বিশ্ব মানবতার রোল মডেল বিশ্ব নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স.) এর অনুপম আদর্শ। মুক্তি পাক মানুষ, মুক্তি পাক মানবতা।
[স্বীকৃতির বিষয়ে আলেমদের ইজমা হয়েছে; বিরোধিতা করা বোকামি]
[যমজ ভাই-বোন যখন স্বামী-স্ত্রী!]
এসএস/