সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আশ্বস্ত, সুফল পেতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ। বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমদের অন্যতম। শায়খ যাকারিয়া রহ. ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক। কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত আছেন প্রায় শুরু থেকে। ১১ এপ্রিল গণভবনে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উলামাদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তিনিও। ছিলেন অতিথিদের প্রথম সারিতেই। বৈঠকের সবকিছুই দেখেছেন কাছ থেকে এবং পর্যবেক্ষণ করেছেন আপন অভিজ্ঞতায়। আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন তার পর্যবেক্ষণের ফলাফল। কথোপকথনে তার সঙ্গে ছিলেন আতাউর রহমান খসরু

আওয়ার ইসলাম : কওমি সনদের স্বীকৃতির ব্যাপারে কওমি ছাত্র ও শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণ হলো কী?

মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ : প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আমাদের প্রত্যাশার অনেক কিছুই এসেছে। বলতে গেলে প্রায় পুরোটাই এসেছে। এ ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের বোর্ডগুলোর ঐক্যবদ্ধ থাকা আবশ্যক।

আমাদের মধ্যে কোনো রকম অনৈক্য তৈরি হলে ঘোষণায় আশা প্রত্যাশাগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। আমার উপলব্ধি এমনই।

আওয়ার ইসলাম : তাহলে বলা যায়, আপনি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আপনি সন্তুষ্ট এবং আশাবাদী।

মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ : হ্যা, আমি অবশ্যই আশাবাদী। কেননা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদরাসা ও উলামাদের ব্যাপারে এমন কিছু কথা বলে যা অতীতের কোনো প্রধানমন্ত্রী বলেন নি।

আওয়ার ইসলাম : প্রধানমন্ত্রীর কোন কোন কথা আপনার ভেতর আশাবাদ তৈরি করেছে।

মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ : অনেক কথায়। যেমন,  তিনি বলেছেন, দারুল উলুম দেওবন্দ সম্পর্কে  আমি জানি। দেওবন্দের উলামাদের ত্যাগের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। একজন দেওবন্দি আলেম হিসেবে এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওনা।

দ্বিতীয়ত তিনি পৃথিবীর যেখানে যেখানে যান সেখানে কেউ ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাস মিলিয়ে ফেললে তিনি তার প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসের সঙ্গে ইসলামকে মিলিয়ে ফেলবেন না। সন্ত্রাসীদের ধর্মই সন্ত্রাস। আমাদের দেশে যারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যার কারণে বিপদগামী হচ্ছে তাদেরকে থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে রক্ষা করতে উলামাদের নিকট বার বার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেছেন, কওমি মাদরাসার মাধ্যমে এ দেশে শিক্ষার সূচনা হয় এবং কওমি মাদরাসা ছাড়া আমাদের শিক্ষা অসম্পূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী  আরও বলেন,  আমার জানা মতে কুরআন ও হাদিসের বিশুদ্ধ চর্চা ও শিক্ষা কেবল কওমি মাদরাসাতেই রয়েছে।

আওয়ার ইসলাম : উলামায়ে কেরামের মধ্যে কার বক্তব্য আপনার বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে?

মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ : হ্যা, উলামাদের মধ্যে যারা বক্তব্য দিয়েছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ দিতে হয়। সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। কারণ, তিনিই প্রথম বলেছেন শুধু স্বীকৃতি নয়; বরং আমরা গ্রিক দেবির মূর্তি নিয়েও বিচলিত। সারাদেশের মুসলমান ও উলামায়ে কেরাম জাতীয় ঈদগাহের পাশে দেশের সর্বোচ্চ আদলতের সামনে এ মূর্তি দেখতে চায় না। এ ব্যাপারে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী তখনি উপস্থিত মন্ত্রী মহোদয়কে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি তার বক্তব্যেও বলেছেন, আমাদের দেশে গ্রিক আসবে কেনো। আমি নিজেও গ্রিক মূর্তি পছন্দ করছি না। প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, এ মূর্তি সড়ানোর জন্য যা যা দরকার তিনি তাই তাই করবেন।

মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের পর আমাদের অন্যান্য মুরব্বিরাও এ ব্যাপারে কথা বলেছেন।

আওয়ার ইসলাম : কওমি সনদের স্বীকৃতির অনুষ্ঠানে অন্য বিষয়ের অবতারণাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ : দেশের শীর্ষ স্থানীয় এতোগুলো আলেম সেখানে উপস্থিত হলো এবং শুধু স্বীকৃতির ঘোষণা নিয়ে ফিরে আসলো, দেশের সংকটময় দিক নিয়ে কথা বললো না তাতো হয় না। এ অবশ্যই ঠিক আছে এবং সূচনা করার জন্য মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদকে ধন্যবাদ।

আওয়ার ইসলাম : বৈঠকের কোনো কিছুর ব্যাপারে কী আপনার মনে হয়েছে, এটা ভিন্ন রকম হতে পারতো?

মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ : হ্যা, কিছু ত্রুটিও চোখে পড়েছে। যেমন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে তিনি একটি কমিটি গঠন করেদিয়েছেন। অথচ বাস্তবতা হলো, আমাদের বিভিন্ন বোর্ডের মুরব্বিগণ পরস্পর বসে একটি কমিটি গঠন করেছেন আর প্রধানমন্ত্রী তার উপর আস্থা পোষণ করেছেন। হ্যা, এভাবে কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলো। তারা বলেছিলো সকলের ঐক্যমত্বের ভিত্তিতে একটি কমিটি গঠন করে নিতে। এবং তাই করা হয়েছে।

আওয়ার ইসলাম : আপনার কী মনে হয়, সকলে একমত হতে পেরেছেন?

মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ : এখন পর্যন্ত সকলের ঐক্যই দেখা যাচ্ছে। সবাই একমত হয়েছেন বলেই সেখানে তারা একত্র হয়েছেন। তবে মুরব্বিদের কথায় কিছুটা বিরোধের আবাস রয়েছে। যদিও তা অস্পষ্ট। যেমন, কেউ কেউ বলেছেন, ছয় বোর্ড জায়গায় থেকে যেভাবে আছেন, যেভাবে পরীক্ষা নিচ্ছেন সেভাবেই চলবে এবং শুধু একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্বীকৃতি নিবেন।

অন্যদের বক্তব্য ছিলো, শুধু প্রজ্ঞাপন হলে চলবে না; বরং আইন করে সব বোর্ডের সমন্বয়ে একটি বোর্ড হবে এবং তার অধীনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। স্বীকৃতিও সম্মিলিত বোর্ডের অধীনে হবে। আমার জানা মতে, সেই বোর্ডের নাম হবে রাবিতাতুল জামিয়াতিল কওমিয়া। আর কমিটি হবে স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটি।

পদ্ধতিগত এ মতভিন্নতা দূর করতে হবে। এ দ্বিমত থাকলে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না।

আওয়ার ইসলাম : স্বীকৃতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো শঙ্কা বা সংশয় রয়েছে কী?

মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ : প্রধানমন্ত্রীর কথায় তো আশ্বস্ত হওয়াই যায়। তার কথা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলো ইতিবাচক। তিনি বলেছেন, আলেমদের আগমনে গণভবন ধন্য হলো।

তবে এটা একটা ঘোষণামাত্র। এটা প্রজ্ঞাপন হওয়া এবং আইন হওয়ার অনেক বাকি এখনো। তাছাড়া এখানে আমাদের ইচ্ছার প্রতিফলন কতোটা ঘটবে, এ স্বীকৃতি আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে না দুর্দশা তার কোনোটিই এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

আওয়ার ইসলাম : আশঙ্কা দূর করার কোনো উপায় কী আছে?

মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ : আমাদের ছয় বোর্ডের মুরব্বিগণ যদি তাদের অবস্থানে অনড় থাকেন, ঐক্যবদ্ধ থাকেন, তবে ইনশাআল্লাহ আমাদের ইচ্ছার বাইরে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ থাকবে না।

আওয়ার ইসলাম : শীর্ষ উলামাদের কারো অংশগ্রহণ বা অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কী?

মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ : না, এ বিষয়ে কোনো কথা হয় নি। আসলে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব উলামায়ে কেরাম এখানে অংশ নিয়েছেন। যারা অংশ নেন নি তারা ব্যক্তিগত কারণে হয়তো নেন নি।

তবে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মাদরাসাগুলোর বোর্ডের সভাপতি এবং  বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আযহার আলী আনোয়ার শাহকে প্রথমে মঞ্চে নেয়া হয় নি। অনেক পরে নেয়া হয়। তাকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয় নি। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলের আলেমদের মনে কিছুটা কষ্ট রয়েছে। তাদের কেউ কেউ আমাকে বলেছেনও।

আওয়ার ইসলাম : আপনার মূল্যবান সময় দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ।

মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ : আওয়ার ইসলাম ও তার সব পাঠককে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।

স্বীকৃতি কাজের জন্য ৩২ সদস্যের কমিটি গঠন

এবছরই অভিন্ন প্রশ্নপত্রে তাকমিল জামাতের পরীক্ষা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ