গত ৩ এপ্রিল মন্ত্রীসভার বৈঠকে ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে আইনের ব্যাখ্যা তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন-২০১৭ এর খসড়ায় বলা হয়েছে, জনস্বার্থে মসজিদ ও মন্দিরসহ যে কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়, কবর ও শ্মশানের জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে সরকার।
তিনি আরও বলেন, আগের বিধান অনুযায়ী সাধারণভাবে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, কবরস্থান, শ্মশানের জমি অধিগ্রহণ করা হতো না। তবে এখন শর্তসাপেক্ষে জনস্বার্থে একান্ত অপরিহার্য হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা সংস্থার অর্থে স্থানান্তর ও পুনর্নির্মাণ সাপেক্ষে কেবল ওই সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা যাবে।
তবে শর্ত সাপেক্ষে হোক আর বিনা শর্তে হোক, জনস্বার্থে হোক বা সরকারের ইচ্ছায় হোক মসজিদ মাদরাসা স্থানন্তরের ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে ইসলামবোদ্ধাদের। তাদের দাবি, কোনো ওয়াকফ স্থানে একবার নামাজ আদায় করা হলে, সেখানে অন্য কোনো কাজের সুযোগ ইসলামি শরিয়তে নেই। একইভাবে যদি কোনো ওয়াকফ স্থানে মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হলে তা স্থানান্তর করার খুব বেশি সুযোগ থাকে না।
মসজিদ-মাদরাসা স্থানান্তর করা ও ওয়াক সম্পত্তির বিধান সম্পর্কে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার প্রধান মুফতি ও মুহাদ্দিস মুফতি হিফজুর রহমান ও জামিয়া কারীমিয়া আরাবিয়ার প্রধান মুফতি ও মুহাদ্দিস মুফতি হেমায়াতুল্লাহ। দেশের এ দুই প্রাজ্ঞ ও খ্যাতিমান মুফতির সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের বার্তা সম্পাদক আতাউর রহমান খসরু।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ সম্পর্কে মুফতি হেমায়াতুল্লাহ বলেন, ‘ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মসজিদ অধিগ্রহণ করার সুযোগ কোনোভাবেই নেই। বরং আমাদের জানা মতে শরিয়তের বিধান হলো, যদি কোনো স্থান মসজিদের জন্য ওয়াকফ হয় এবং সেখানে কমপক্ষে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়, তবে কেয়ামত পর্যন্ত তা মসজিদ থাকবে। যদি কোনো কারণে সেখানে নামাজ নাও হয়, তবে সে স্থান সংরক্ষণ করতে হবে। অন্য কোনো কাজ করা যাবে না।’
তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, জনস্বার্থ ও দেশের উন্নয়নের প্রশ্ন আসলে শরিয়তের বিকল্প পদ্ধতি কী? তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি আসমান ও জমিনের সবকিছুর মালিক আল্লাহ। আর আল্লাহ তার ঘরে স্থানে অন্যকিছু করার অনুমতি দিচ্ছে না। তাই তার ঘরের সম্মান রক্ষা বিকল্প যা কিছু করা সম্ভব তাই করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মসজিদ অধিগ্রহণ না করা হলে কীই বা হবে? হয়তো একটু জায়গা বেশি লাগবে, হয়তো একটু বাঁকা হবে। এই তো? কিন্তু তার চেয়ে বড় তো আল্লাহর ঘর ও তার সম্মান।’
মুফতি হেমায়েতুল্লাহ মনে করেন, সরকার ইচ্ছে করলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ না করেও উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখতে পারেন। যেমন, সরকার গুলিস্তানের মাজারটি রেখে দিলো। মসজিদ সরিয়ে দিলো। অথচ বিধান হলো, মসজিদ সরানো বৈধ নয়, কবর মিটিয়ে দেয়া বৈধ। আমার মনে হয়, অধিগ্রহণ করতে চাইলে তার সদ্বিচ্ছার অভাব।’
তবে তিনি একটি বিষয় স্পষ্ট করেন। তাহলো, ‘মসজিদের অধীনে অনেক জায়গা থাকতে পারে। কিন্তু শুধু নামাজ হতো এমন জায়গাটুকুই সংরক্ষণ করতে হবে। বাকি অংশ অধিগ্রহণের সুযোগ আছে। ’
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণের ব্যাপারে দেশের বরেণ্য আলেম ও লেখক মুফতি হিফজুর রহমান বলেন, ওয়াকফ সম্পদ অধিগ্রহণের চেষ্টা সেই ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হয়েছে। কিন্তু কোনো সরকার পারে নি। অমুসলিম ও বিধর্মী সরকার যা করার সাহস করতে পারে নি। মুসলিম সরকার তাই করছে।
এ প্রবীণ মুহাদ্দিস ও মুফতি বলেন, দেশের অধিকাংশ মসজিদ ওয়াকফকৃত জমিতে অবস্থিত। আর ওয়াকফের সম্পদ বিক্রি, পাল্টানো ও স্থানান্তর করার অনুমতি শরিয়তে নেই।
মাদরাসা অধিগ্রহণের বিধান জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাদরাসা যদি ওয়াকফকৃত জমিতে হয় তবে তা স্থানান্তর করা যাবে না। আর যদি তা দানের জমি হয়, তবে তা বিকল্প পথ বের করা যেতে পারে।
এ মুহূর্তে উলামায়ে কেরামের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, তাদের দায়িত্ব হলো সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলের কাছে শরিয়তের বিধান তুলে ধরা। সভা ও সেমিনার করে জনগণকে সচেতন করা। সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয় গ্রহণ না করলে প্রয়োজনে আন্দোলন করা তাদের দায়িত্ব।
আরআর
মসজিদ-মন্দির-মাদরাসাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করতে পারবে সরকার
মসজিদ কি স্থানান্তর করা যায়? ইসলাম কী বলে?
বন্ধ করে দেয়া হলো ভেনিস জামে মসজিদ