মুফতি মনোয়ার হোসাইন
মুহতামিম ও খতীব
মসজিদে নববীর সম্মানীত খতিব, হারামাইন পরিচালনা কর্তৃপক্ষের উপপ্রধান শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসের খুযাইম ও বৃত্তবন্দি বঞ্চিত আমাদের কওমিয়ান!
রেডিসান ব্লুতে এ দুই মহান অতিথীর সম্মানে ডিনার ছিল! এক শুভান্যুধায়ী’র আন্তরিকতায় আমিও দাওয়াত পেয়েছিলাম। দাওয়াত পেয়ে নিজকে সৌভাগ্যবান মনে করেছি, রাসুল সা.এর মিম্বারের সম্মানীত খতিব সাহেবের সান্নিধ্য পাবো সে আশায়। সরকারী কোন আয়োজন আমাকে কখনই আন্দোলিত করে নি, আজই না। সোহরায়ার্দি উদ্যান বিমুখ ছিলাম সে কারণেই। রাসুলের মিম্বারের খতিবকে দেখতে না পারার মনে সুপ্ত কষ্ট ছিল। আলহামদুলিল্লাহ, রাতে তা মুছে গেছে মহান আলেমদের নেক সুহবতে।
প্রবেশ করার পর দেখলাম ভি আইপি গ্যালারি জুরে বসে আছেন সম্মানিত মেহমানগণ। ছালাম বিনিময় ও মুসাফাহা হলো। হাসিমাখা ঠোটে আরবী বিশুদ্ধ উচ্চারণে ভাল থাকার কথা জানালেন। শিহরিত আমি রাসুলের মসজিদের ইমাম সাহেবের সাক্ষাতে। মনে মনে ভাবলাম, শায়খ! রেডিসানের জৌলুষ এ পরিবেশ দেখে কখনই বুঝবেন না এ দেশেই মাদরাসার টিনের চালের নিচে রাতে ডালভাত খেয়ে হাদীসের চর্চা করার কষ্টকর দৃশ্য! কখনো জানবেনও না আমার নবীর হাদীস চর্চা করার কুরবানী, কত রাত জেগে কত কষ্ট করে এখানে জীবিত রাখা আছে।
হারামাইন পরিচালনা কর্তৃপক্ষের উপপ্রধান শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসের খুযাইম এর সাক্ষাতকার নিচ্ছিলেন চ্যানেল আই এর চকর মালিথা। অনুবাদকের কথা আর কিইবা বলবো। নিজেদের সরকারের সফলতার কথাই ঘুরে ফিরে বলছিল যা বক্তার ব্ক্তব্যর সাথে প্রায়শই মিল ছিল না।
ডিনার সেটে বাইতুল মুকাররমের পেশ ইমাম দু’জনকে দেখলাম। এগিয়ে গিয়ে পরিচিত হলাম। এক হজরতের সাথে একজন খাদেম আছে, আরেক হযরত একা। উপযাচক হয়ে পরিচিত হতে গেলাম কিন্তু তাদের আগ্রহী হতে দেখলাম না। তারপরও কথা বলে আমাকে ধন্য করেছেন এ জন্য শুকরিয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের ভালো করুন। আমার কষ্ট লেগেছে আমাদের জাতিয় মসজিদের ইমামদের তৃতিয় টেবিলে একাকি এতিমের মত বসে থাকতে দেখে। অথচ পাশেই জমজমাট টেবিলে মাজার পন্থিরা! আর মেহমানদের রিজার্ভ টেবিলে সরকারী লোকেরা। বাইতুল মুকাররমের ইমামদের জায়গাটা কি মেহমানের টেবিলে হতে পারতো না! নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম।
তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম কওমীয়ানদের, যারা এ দেশের ইসলামের ঝান্ডাবাহি, রাসুলের শানে রক্ত নযরানা পেশ করার নজীর রেখে চলেছে। তাদের একজনকেও পেলাম না।
কষ্ট’র নীল বিষ শীর দাঁড়া বেয়ে গেল। আলোকজ্জল পরিবেশ তিমির হয়ে এল। হায় আমার দেশ! হায় আমার ক্ষমতা। হাজার হাজার কওমী মাদরাসা, লাখ লাখ আলেম তাদের কোন প্রতিনিধি এখানে আসার যোগ্যতা রাখলো না! অযোগ্য, ইসলামের সাথে সম্পর্কহীন, বিদআতিরা হারামাইনের মেহমানদের ঘিরে রেখেছে।
অথচ রাসুলে আরাবীর সুন্নাতের পাবন্দিওয়ালারা মসজিদে নববীর ইমামের কাছে ঘেষতে পারে নি। কেন? তারাতো এ দেশেরই। এই যোগ্য লোকদের সামনে আনলে তো দেশেরই সুনাম হতো। আমাদের ভিন্নমত থাকতে পারে কিন্তু মেহমানদেরকে কেন অন্ধকারে রাখা!
আমরাও কম যাই না। ভারত পাকিস্তানের খানকার কোন আলেম আসলেও সেখানে বরকত নেবার জন্য জীবন বাজি রাখতে দেখা যায় তলবে ইল্ম আর আমাদের আকাবিরদের। অথচ হারামাইনের পরিচালক, নববীর ইমাম আমাদের নজর কারে না, আমাদের গুরুত্ব তাদের দিকে যায় না। আমাদের নির্লিপ্ততাও কম দায়ী নয়! এমন অবস্থায় কওমীয়ানরা আরব আলেম বিমুখ- অভিযোগ আসতেই পারে!
দেশের মানুষের, ইসলামের, আমলের, মক্কার, মদীনার খুব ধারক বাহক এই কওমীয়ানরা অথচ তাদের সম্পর্কে মক্কা মদীনার মেহমানরা কি কিছু জানে? আমার মনে হয় ‘না’। আমাদের দূরে রাখা হয়েছে, আমরা কি কাছে যাবার চেষ্টা করেছি? কূটনৈতিক কোন চ্যানেল কি আছে আমাদের? আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অযোগ্যতার, অথর্বতার পরিচয় দিচ্ছি মনে হয়। আরবী ভাষার প্রতি গুরুত্বহীনতা, আরবের সাথে পরিচয় সংকট, উপমহাদেশবৃত্ততা, এগুলোতো তাই প্রমাণ করে। মনের দুঃখে ভাষা হারিয়ে ফেলি। হায় আকাবির !! হায় আকাবির!
হজে নাওয়াফের সাথে কথা হচ্ছিল হারাম শরীফের সামনে। ওখানকার ছাত্র। বাংলাদেশের আলেম, মাদরাসা, ইসলাম চর্চা সম্পর্কে জিজ্ঞাস করে উত্তর পেলাম সে কিছুই জানে না, জানে এদেশে মাজার পুজা হয়!
বৃত্তবন্দিত্ব ভাঙবে কবে? আমাদের আকাবিরদের তালিকায় মক্কা মদীনার ইমামগণ কবে আসবেন? হয়তো আসবে আগত শুভ্র তারুন্যর হাত ধরে... আহলান ওয়া সাহলান খতিব মাসজিদে নাববী... সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া সাল্লাম।
লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে
মক্কা-মদিনার অতিথি : হাতে ফুল, চোখে কালো মেঘ