হাওলাদার জহিরুল ইসলাম
দেওবন্দ থেকে
ভারতীয় মুসলমান কখনোই জাতিগত বিভক্তি পছন্দ করে না৷ এখানের মুসলমান পরস্পরের সহাবস্থান, সম্প্রীতি, ঐক্যে বিশ্বাসী৷ তবে মুসলিম জাতি ঈমানের প্রশ্নে কখনওই আপোস করতে পারে না৷ ভারতীয় মুসলমানগণও ঈমানের প্রশ্নে আপোস করবে না৷
গতকাল দেওবন্দের কাসেমপুরায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ সাহারানপুর জেলা শাখা আয়োজিত ‘জাতীয় ঐক্য কনফারেন্সে প্রধান অতিথির ভাষণে হজরত মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ আসআদ মাদানি এসব কথা বলেন৷
তিনি বলেন, সরকার আসবে, সরকার পরিবর্তনও হবে৷ কোনো সরকারই স্থায়ী নয়৷ উত্তর প্রদেশে সরকার পরিবর্তন হওয়ায় মুসলমানদের ভীত হবার কোনো কারণ নেই৷ যারা সত্য ন্যায়ের পক্ষে থাকে তাদের ওপর বিপদ আসবেই৷ সুতরাং চরম ধৈর্য আর নৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে সার্বিক অবস্থার মোকাবেলা করতে হবে৷ ধৈর্যের পরীক্ষায় যারা জয়ী হবে তারাই প্রকৃত বিজয়ী, সফলকাম৷ আমরা কখনো অন্যায় করি না, অন্যায়ের সঙ্গও দেই না৷ কিন্তু কেউ অন্যায় করলে তার বিরোধিতা আমরা করবোই৷
তিনি আরো বলেন, গরুর গোশত বন্ধ করায় মুসলামন শঙ্কায় নয়৷ এতে মুসলামনদের কোনো ক্ষতিও হবে না৷ ক্ষতি তো হবে রাষ্ট্রের৷ ভারত সরকার বিদেশে গোশত আমদানি করে প্রতি বছর প্রায় ২লাখ কোটি রূপি আয় করে থাকে৷ গোশত বন্ধ করলে এতো বড় রাষ্ট্রীয় আয়ের কী হবে? মুসলমান গোশত না খেয়েও থাকতে পারবে৷ সরকারের কাছে আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকবে, গরুর গোশত বন্ধের মতো পুরো দেশে মদ, নেশা, অশ্লীলতার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুন৷ মাদকের ধ্বংস থেকে জাতিকে বাঁচান৷ দেশের উন্নয়নের প্রতি দৃষ্টি দিন৷ দেশ ও দেশের মানুষের কথা বলুন৷ জাতিগত বিভক্তি নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৌহার্দ্যের কথা বলুন৷
তিনি আরো বলেন, আমরা দেশকে ভালোবাসি৷ দেশের উন্নয়নের কথা বলি৷ হিন্দু মুসলামানদের মাঝে ভাই ভাই সম্পর্কের কথা বলি৷ দেশ জাতির জন্য যদি জীবন দিতে হয় তাহলে আমরাই সবার সামনে থাকবো৷ দেশের জন্য জান কোরবানকে আমরা সৌভাগ্য মনে করি৷
কনফারেন্সে আমন্ত্রিত হিন্দু ধর্মের মহা ঠাকুর আচারিয়া প্রমোদ কৃষ্ণ জি বলেন, আমি দেওবন্দের পবিত্র এবং ঐতিহাসিক স্থানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি৷ তিনি বলেন, তিন তালাক ও গরুর গোশতের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞার অর্থ হলো মুসলামনদের ভয় দেখানো৷ এটা কখনই কাম্য নয়৷ কারো সাথে যদি ধর্মের নামে জুলম অত্যাচার করা হয় তাহলে আমরা বিরোধিতা করতে পিছ পা হবো না৷ আজকাল যারা তিন তালাক নিয়ে কথা বলে তারা তো বিবাহই করেনি৷ কেউ বিয়ে করলেও স্ত্রী রাখতে পারেনি৷
তিনি বলেন, উত্তর প্রদেশে নব নির্বাচিত সরকার গোশত বন্ধ করে দিয়েছেন৷ দক্ষিণ ভারত, বিহার বাংলা, উত্তরাখণ্ডে কেনো বন্ধ করা হচ্ছে না৷ এসব এলাকায় তো বেশির ভাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই গোশতের খরিদদার! গোশতের সাথে মাদক বন্ধ করুন৷ অশ্লীলতার জোয়ার থামান৷ জাতিগত বিভক্তি কখনোই ভালো ফল বয়ে আনে না৷ দেশটা কেবল একটি ধর্মের মানুষের নয়৷ দেশটা মুসলমানদের যতোটুকু ঠিক হিন্দুদেরও ততোটুকু৷ দেশ কারো একক মালিকানা নয়৷ দেশের আইন আছে, সংবিধান আছে৷ সে অনুযায়ী দেশ চলবে৷ কোনো ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারীতা চলবে না৷ চাই সে যে ধর্মেরই হোক না কেনো৷ মহাত্মা গান্ধীর হত্যা কোনো মুসমান করে নাই৷ মুসলাম কখনো গাদ্দার হয় না৷ দেশে একটি গোষ্ঠী এমন থাকে যারা শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্তরায়৷ তারা হিন্দু মুসলামানদের মাঝে ঘৃণা বিদ্বেষ উগরে দেবার হীন চেষ্টায় লিপ্ত থাকে৷ এজন্য হিন্দু মুসলামন সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে৷ ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে৷ বিদ্বেষ নয় সবার কণ্ঠে ভালোবাস জয়গান হোক!
জমিয়ত নেতা হজরত মুফতি কারী আফ্ফান মানসুরপুরী সাহেবের সঞ্চালনায় ও জমিয়তের সাহারানপুর জেলা শাখার সদর হজরত মাওলানা জহূর আহমদ সাহেবের সভাপতিত্ত্বে কনফারেন্সে আরো বক্তব্য রাখেন দারুল দেওবন্দের সিনিয়র উস্তাদ হজরত মুফতি রাশেদ আজমি সাহেব, জমিয়ত নেতা ও সিনিয়র শিক্ষক হজরত মাওলানা সালমান বিজনুরী সাহেব, কানপুরের জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মাতিনুল হক কাসেমিসহ অন্যান্য নেতৃবন্দ৷
মুফতি রাশেদ আজমি বলেন, আমারা শেষ নবির উম্মত৷ আমারা তাঁর আদর্শের অনুসারী৷ মক্কার মানুষ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার অনুসারীদের জন্য সব ধরনের খাবারের ওপর নিষেজ্ঞা আরোপ করেছিলো৷ তাঁরা আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করেছিলেন৷ আমাদের জন্য তো কেবল গোশত বন্ধ করা হচ্ছে৷ তো আমরা কেনো ধৈর্য ধারণ করতে পারবো না৷
কনফারেন্সে, ব্যাপক আম জনতার পাশাপাশি দেওবন্দসহ উত্তর প্রদেশে বিভিন্ন মাদরাসার উলামা তলাব অংশ নেয়৷ প্রায় ৪০হাজার (স্থানীয়দের ভাষ্যমতে) বিশাল সমাবেশে যে কোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে ব্যাপক পরিমাণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়৷ মূল মঞ্চের আশপাশ, মাঠের বিভন্ন প্রান্তে, উপস্থিত জনতার মাঝে মাঝে রাস্তার মোড়ে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থা নিতে দেখা যায়৷ উপস্থিত শ্রোতাদের সুবিধার্তে মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে ডিজিটাল মনিটর লাগনো হয়৷ মুসল্লিদের ওজুর জন্য জায়গায় জাযগায় অস্থায়ী পানির ট্যাংকী বসানো হয়৷
বিকেল ৫টায় শুরু হয়ে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে দোয়ার মাধ্যমে কমফারন্সের সমাপ্তি হয়৷ দোয়া পরিচালনা করেন দেওবন্দের সিনিয়র শিক্ষক ও জমিয়ত নেতা হদরত মাওলানা সালমান বিজনুরী৷
আরআর
ঢাকায় পৌঁছেছেন মক্কা-মদিনার ইমাম-উলামা