কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক : গত কিস্তিতে আমরা এরদোগানের প্রাথমিক কিঞ্চিত পরিচয় তুলে ধরেছিলাম। কীভাবে তিনি অতীতের তিক্ততাকে এড়িয়ে গিয়ে আঞ্চলিক দেশগুলোর সাথে সম্পর্কোন্নয়ন, দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ নিরসনে মধ্যস্ততা ও বিশ্বমহলে নেতৃস্থানীয়, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্তিকে মূল লক্ষ্য রেখে বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন, বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কারণে বিশ্বমহলে প্রশংসিত হয়েছেন, এ বিষয়গুলোও কারও অজানা নয়।
যেভাবে নেতৃত্বে আসা :
নেতৃত্বে আসার পটের প্রতিচ্ছবির দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখতে পাই, এরবাকানের মতো জনপ্রিয় নেতৃত্বের পতনের পর তুরস্কের ইসলামপন্থীদের মধ্যে তখন এক ধরনের জল্পনা কল্পনা শুরু হয়। বিশেষ করে তুরস্কের মতো কট্টর সেকুলার পরিবেশে নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে, তা-ই ছিল আলোচ্য বিষয়। পরবর্তীতে ফজিলত পার্টি গঠনের সময় দলের দৃষ্টিভঙ্গি রেফাহ পার্টির চেয়ে তুলনামূলক উদার ও সদস্যপদের ক্ষেত্রে আরো সহজীকরণের কথা বলা হলেও নেতৃত্ব নিয়ে সংকট দেখা দেয়।
তখন স্বাভাবিকভাবেই সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় এরবাকান সরকারের সময়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আবদুল্লাহ গুল ও ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয় মেয়র রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের দিকে। কারণ উভয়ে পরিচিত ছিলেন উদারবাদী ও বিচক্ষণ হিসেবে। কিন্তু এ দুজনকে এড়িয়ে গিয়ে এরবাকান তাঁর পুরোনো বন্ধু ও সিনিয়র নেতা রেকাই কুতানকে নেতৃত্ব নিয়ে আসেন। ফলে ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উদার ইসলামপন্থীদের কৌশলী চিন্তা বাধাগ্রস্ত হয়। তাই ফজিলেত পার্টির পাশাপাশি আবদুল্লাহ গুল ও এরদোগান মিলে গড়ে তোলেন ‘জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলবমেন্ট পার্টি’ বা একেপি।
আর এভাবেই তুরস্কের ইসলামপন্থী রাজনীতিতে শুরু হয় নবদিগন্ত। দলের নেতৃত্বে উঠে আসেন এরদোগান। প্রথমদিকে ইসলামপন্থী ব্যক্তিদের নিয়ে দল গঠন করলেও তিনি একেপি’কে ইসলামপন্থী হিসেবে প্রকাশ করতে দেননি। আদর্শিকভাবে দলটিকে সামাজিক রক্ষণশীল ও অর্থনৈতিক উদারবাদী হিসেবে তুরস্কের রাজনীতিতে তুলে ধরতে সক্ষম হন। বহুদলীয় গণতন্ত্র সূচনা হওয়ার পর তুরস্কের গণতন্ত্রে সংস্কারের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিল তীব্রভাবে। পাশাপাশি ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্যে সময়োপযোগী পদক্ষেপেরও ছিল অতি প্রয়োজন। ঠিক এসব সংকটজনক পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় আসে একেপি। নিজের ওপর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ক্ষমতা গ্রহণ করেন এরদোগান। দায়িত্ব পেয়ে এরদোগান মনোযোগ দেন দেশের সংকটজনক পরিস্থিতিগুলো মোকাবেলায়। জাতীয় ও জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে প্রণয়ন করা হয় সরকারের নীতি। প্রাথমিক এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে একেপিকে তুলে আনেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
শুরুর দিকে সেকুলারপন্থী সামাজিক আন্দোলন যেমন ফতহুল্লাহ গুলেনের মতো ব্যক্তিও সমর্থন দেন এরদোগানকে। প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি’র শীর্ষস্থানীয় নেতাও এরদোগান আমলে তুরস্কের ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা স্বীকার করেন। ফলে সংবিধান সংশোধনসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও উন্নয়ন পদক্ষেপে এরদোগান উদার ও মধ্যপন্থী সেকুলাদেরও সমর্থন আদায় করে নিতে সক্ষম হন। স্বাধীনভাবে ধর্মীয় মূলবোধ ও গণতন্ত্র চর্চার প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে পরিচিত সেনাবাহিনীকে জনসমর্থনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা এবং সাংবিধানিক আদালতকে আরো গণতান্ত্রিক করার পদক্ষেপের বাস্তবায়ন জনগণ সমর্থন করে। তবে বিচারক নিয়োগে সরকারের ক্ষমতাবৃদ্ধিকে অগণতান্ত্রিক ও সুশাসন পরিপন্থী বলে অভিযোগ করে থাকে এরদোগানের সমালোচকগণ। অন্যদিকে এসব কার্যক্রমকে রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়নের মৌলিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে একেপি সরকার।
এ বিষয়ে ‘সেকুলার তুরস্কে ইসলামপন্থীদের অভিজ্ঞতার বয়ান’ শীর্ষক এক নিবন্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করা আবিদুল ইসলাম চৌধুরী লিখেনÑ উন্নয়ন ও সুশাসনের প্রশ্নে অনুন্নত, উন্নয়নশীল, উন্নত এই তিনটা পর্যায়ের রাষ্ট্রগুলোর শাসন প্রণালী কি একই ধরনের হবে? যে দেশগুলো এখনো তার নাগরিকদের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে পারে না বা কোনো কোনো দেশ পারলেও তা টেকসই হয়ে ওঠেনিÑ এমন দেশগুলোতে উন্নত রাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য ‘সুশাসন’ ফর্মুলা বাস্তবসম্মত নয়। অপরদিকে, উন্নত রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে ‘গণতন্ত্র ও সুশাসনের’ সাথে সাংঘর্ষিক পদক্ষেপ চাপিয়ে দেয়ার বহু নজির রয়েছে। জাতিকে উন্নয়নের শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করানোর জন্যে শাসক কখনো কখনো স্বৈরশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত সে সব ‘অগণতান্ত্রিক’ পদক্ষেপ রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নে মজবুত ভিত্তি হিসেবে ভূমিকা রাখে। রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সফলতার জন্যে শাসকের দেশপ্রেমও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সফলতার রহস্য :
এ বিষয়গুলো বিবেচনা করলে দেখা যায় বর্তমান সময়ের অনুন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর যে সব নেতা সুশাসনের চেয়ে উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের সাথে আজকের তুরস্ককে তুলনা করা যেতে পারে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে নানা সময় গৃহীত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়নে তুর্কি সরকার প্রধান রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান সময়ে সময়ে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগ উঠা মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের পদচ্যুত করে এক্ষেত্রে অনমনীয় মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন।
এক সময়ের উন্নয়নশীল দেশ তুরস্ক বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্ব অর্থনীতির ১৮তম রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পেছনে এরদোগানের সময়োপযোগী পদক্ষেপগুলো কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। রাষ্ট্রের উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে নানা সময় পালন করতে হয়েছে কর্তৃত্ববাদী ভূমিকা। সমালোচনা সত্ত্বেও অগ্রাধিকার বিবেচনায় ‘উন্নয়ন অথবা সুশাসন’ এমন ডিলেমায় উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন কর্মসূচিতে। অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত দেশে ‘সুশাসন’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন উদারহরণ পাওয়া দুস্কর।
মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়াতেও রাষ্ট্রের তৎকালীন ছয়টি মূলনীতিতে ‘গণতন্ত্র’কে স্থান দেয়া হয়নি। জনসমর্থনের মাধ্যমে উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নের স্বার্থে এরদোগান কিছু গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। এটি সমালোচকদের দৃষ্টিতে ‘সুশাসন’ পরিপন্থী মনে হলেও দৃশ্যত তা তুরস্কের উন্নয়নকে টেকসই করেছে। ফলে এক সময়ের বৈদেশিক ঋণনির্ভর তুরস্ক বর্তমানে পরিণত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রে।
তুরস্কের মতো উন্নয়নমুখী রাষ্ট্রকে শীর্ষস্থানীয় উন্নত রাষ্ট্রগুলোর কাতারে নিয়ে যেতে অর্থনীতিকে আরো গতিশীল ও সরকার ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এরদোগান জনগণের ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তুরস্কে কুর্দিদের জাতিসত্তা ও ভাষাকে স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে অতিরক্ষণশীল ইসলামপন্থা বা কট্টর সেক্যুলারপন্থার বাইরে উদার ও মধ্যমপন্থী দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তুর্কির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে সম্মান প্রদর্শনকারী দল হিসেবে পরিচিত একেপি।
এদিক বিবেচনায় এরদোগান তুর্কির অতীত সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছেন। এতে করে তিনি উদ্দীপ্ত তরুণ সমাজের নিকট চমকপ্রদ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। অনুকূলে পেয়েছেন কর্মোদ্দীপ্ত মধ্যবিত্ত সমাজের বৃহদাংশকে। প্রায় ৯০ বছর ধরে কামালবাদী কট্টর সেক্যুলার পরিবেশে এরদোগানই দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি আতাতুর্কের পর দীর্ঘমেয়াদে তুরস্কের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছেন।
একবিংশ শতাব্দীর শুরু হতে একেপির মতো ইসলামের প্রতি সহানুভূতিশীল দলের ধারাবাহিক বিজয় বিশ্বের মুসলিম রাজনীতির জন্যে একটা ভালো উদাহরণ হতে পারে। অবশ্য সরকারের প্রতি জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও এরবাকানের টিকে থাকতে না পারাটা একেপি’র জন্যে সতর্কবার্তা। এরদোগানের মতো প্রাজ্ঞ নেতা বর্তমান তুরস্কের তরুণ প্রজন্মকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নই শুধু দেখাচ্ছেন তা নয়, এর সাথে সাথে তুরস্ককে ভবিষ্যত পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য করে গড়ে তোলার কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছেন। তুরস্ক সরকারের নানা ধরণের সাহসী পদক্ষেপের ফলে বিশ্বগণমাধ্যম কর্তৃক এরদোগানকে ‘নতুন খলিফা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
অর্থনীতির উন্নয়ন, প্রবল জনসমর্থন নিয়ে সাহসী রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ ও দূরদর্শী পররাষ্ট্রনীতির সমন্বয়ে তুরস্ক এমন একটা অবস্থানে এসেছে যার ফলে তারা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শক্তিশালী সমরতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসায় সক্ষম হয়েছে। তুরস্ক মুসলিম বিশ্বের সেই সব দেশগুলোর অন্যতম যারা নিপীড়ক সেনাবাহিনী, চরম বিরূপ বিচার বিভাগসহ উল্লেখযোগ্য সব বিরোধী শক্তিকে সহনশীল মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রায়োগিক কর্মনীতি অনুসরণের মাধ্যমে তারা ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’কে এ পর্যন্ত অকার্যকর প্রমাণ করেছে।
তুরস্ক তার গৃহীত এসব পদক্ষেপ সফলতার সাথে বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখতে পারলে বিশ্ব রাজনীতি এক নতুন সমীকরণ তৈরী হবে। কৌশলগত কারণে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রের তালিকায় থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের পাশাপাশি শক্তিশালী কোনো মুসলিম রাষ্ট্রের উত্থান পরাশক্তিগুলো কতটুকু সহ্য করবে সেটা অবশ্য দেখার বিষয়। সাবেক প্রতিপক্ষ রাশিয়ার সাথে তুরস্কের দৃশ্যমান সাম্প্রতিক বন্ধুত্ব কতদিন টিকে সেটাও দেখার বিষয়। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ নিয়ে জটিতার অবসান এখনো শেষ হয়নি। এসব বৈদেশিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও পরিপক্ক ও সময়োচিত নীতির কারণে তুরস্ক আজ এপর্যন্ত আসতে সক্ষম হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে তুরস্ক তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি :
অতীতের সরকারগুলোর মতো এরদোগান সরকারও পশ্চিমা শক্তির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। ঐতিহাসিকভাবে তুরস্কের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ভাল সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে। উভয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, জ্বালানী নিরাপত্তা বৃদ্ধি, পরমাণু অস্ত্রবিস্তার রোধ, মুক্তবাজার অর্থনীতি, উদার গণতন্ত্রের বিস্তার ইত্যাদি ইস্যুতে একসাথে কাজ করে আসছে। পূর্ব ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব ধরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র এখনো তুরস্কের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। বিশেষ করে ন্যাটোর মুসলিম সদস্য রাষ্ট্র তুরস্কের সেনাবহিনীর সংখ্যা সেখানে দ্বিতীয় বৃহত্তম। কৃষ্ণসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ও ‘বাকু-তিবিলিসি-সাইহান’ পাইপলাইনের নিরাপত্তায় তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অংশীদার। একেপি সরকার কর্তৃক ইরানের ওপর অবরোধ আরোপে বিরোধিতা, ইসরাইলের আগ্রাসী নীতির কঠোর সমালোচনা ও হামাসের প্রতি অনুকূল নীতি গ্রহণ সত্ত্বেও ওয়াশিংটন একেপি’র ওপর আস্থা রেখেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আইএস দমনে তুরস্ক কৌশলী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সিরিয়ায় কুর্দি নিয়ন্ত্রিত কোবানি শহরটি আইএস’এর দখলে চলে যাওয়ার পর তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এ ব্যাপারে একসাথে কাজ করতে সম্মত হয়। কারণ কোবানি শহরটি তুরস্কের সীমান্তে অবস্থান করায় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইস্যুতে আঙ্কারা আরো কঠোর হয়ে ওঠে। তবে এই সুযোগ ব্যবহার করে আইএস দমনে যুক্তরাষ্ট্র কুর্দি যোদ্ধাদের নিকট পাঠানো অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের এই তৎপরতা তুরস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দিদের সাথে চলমান শান্তি আলোচনাকে প্রভাবিত করবে বলে দাবি করে তুরস্ক। কুর্দিদের হাতে অস্ত্র চলে গেলে তা এ অঞ্চলের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে আরো দীর্ঘয়িত করবে। অন্যদিকে, আইএস’এর মতো কট্টরপন্থীদের উত্থানের ফলে একেপি’র ‘ইসলাম এজেন্ডা’র বাস্তবায়নও অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিকভাবে নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার আশংকা থাকে।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রে ‘জিরো প্রবলেমস উইথ ন্যেইবরস’ নীতি মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরে। তবে সিরিয়ার ক্ষমতা থেকে আসাদ সরকারকে সরানোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুরস্ক নীতিগতভাবে একমত। অন্যদিকে, ২০০৩ সাল থেকেই ইরাকের অভ্যন্তরে অভিযান পরিচালনার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রকে তুরস্কের ভূমি ব্যবহারে অসহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে একেপি সরকার।
পূর্বের পর্বসমূহ : তুরস্ক : উসমানি খেলাফতের সমাধি থেকে আজ (১), তুরস্ক: উসমানি খেলাফতের সমাধি থেকে আজ [২]
কোপেনহেগেন ক্রাইটেরিয়া অনুসারে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ফলে ইইউ’র কাছে একেপি সরকারের গ্রহণযোগ্যতা পূর্বের সরকারগুলোর তুলনায় বেশি। যদিও হেডস্কার্ফ ও ওসমানীয় সময়ের আর্মেনিয়ার গণহত্যা ইস্যুতে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ফ্রান্সের সাথে তুরস্কের সম্পর্কে কিছুটা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আর্মেনিয়ার গণহত্যা ইস্যুটিকে ইইউ’র সদস্যপদ অর্জনে অন্যতম বাধা হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকগণ। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে গুলেন ইস্যুতে পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে একেপি সরকারের কঠোর সমালোচনা শুরু হয়। যদিও গুলেনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ করেছে সরকার। এই গুলেনের ব্যাপারে আগামী সংখ্যায় বিস্তারিত আলোচনার প্রয়াস পাবো আশা রাখি।
-এআরকে
প্রস্তুতি সম্পন্ন; কওমি স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ১১ এপ্রিল