আওয়ার ইসলাম: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের চলতি মেয়াদেও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। জামায়াতের চিহ্নিত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করে ইতোমধ্যে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হলেও দলটিকে নিষিদ্ধের প্রশ্নে সরকারের শীর্ষপর্যায়ে এখনও ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে। জামায়াত নিষিদ্ধের পর দেশে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, তা নিয়ে গভীর পর্যালোচনা চলছে সরকারের ভেতরে। সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী জানান, ‘জামায়াতের পক্ষের আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে তোলা, জামায়াতপন্থী সংগঠনগুলোকে জামায়াতের ভেতর থেকে বের করে আনার বিষয়টি ঠিক করতে হবে আগে। এছাড়া জামায়াত নিষিদ্ধ হলে দলটির নেতারা যেন আর কোনো রাজনৈতিক দলে ঢুকে পড়তে না পারেন, তাও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জামায়াত নিষিদ্ধ হলে দেশের ভেতরে কোনো বৈরি পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব বিষয় ভালোভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তাই সময় একটু লাগছেই।’ ওই দুই মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ মেয়াদে জামায়াত নিষিদ্ধের সম্ভাবনা কম।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা ‘রিস্কি’ মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাই জামায়াত নিষিদ্ধ করতে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে সরকার। এ প্রক্রিয়ায় যাওয়ায় কিছুটা ধীরগতিতে জামায়াত নিষিদ্ধ করার কার্যক্রম চলছে। সরকার মনে করছে, নির্বাহী আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ সম্ভব, কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় গেলে কিছুটা বিলম্ব হলেও পাকাপোক্ত হয় কাজটি।সেজন্য জামায়াতকে বিচারের মুখোমুখি করার করতে উপযোগী করে আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। তবে ঠিক কবে আইন প্রণয়ন করা হবে, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা জানাচ্ছেন না দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো জানায়, জামায়াত নিষিদ্ধের আগে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মানসিকতা কী, তাও নিশ্চিত হতে চায় সরকার। এ জন্যে আওয়ামী লীগ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘‘শিগগিরই জামায়াত নিষিদ্ধ হবে। বিষয়টি নিয়ে কিছু কাজ চলছে। নির্বাহী আদেশে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার কথা সরকার ভাবছে না বলেই কিছুটা দেরি হচ্ছে। এ জন্য ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম অ্যাক্ট ট্রাইব্যুনাল’ সংশোধনের কাজ চলছে।’’ তিনি বলেন, ‘সংশোধনের কাজ শেষ পর্যায়ে তা শেষ হলেই মানবতাবিরোধী অপরাধীদের দল হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধের আবেদন করা হবে। এটি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
ক্ষমতাসীন দলটির নীতি-নির্ধারণী মহল বলছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির পাশাপাশি ইসলামি সংগঠনগুলোর মধ্য থেকে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হলে সরকারের জন্যে পোয়াবারো। জামায়াত নিষিদ্ধের পরে যেন অন্তত কোনও ইসলামি দলের ভেতর থেকে আন্দোলন হতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। একইসঙ্গে ইসলামি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক যেন নষ্ট না হয়, সে পরিকল্পনাও আওয়ামী লীগের রয়েছে। এই ইস্যুতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোকে একাট্টা করা সম্ভব হলেই জামায়াত নিষিদ্ধের কাজ অনেকটা নির্বিঘ্নে করা সম্ভব হবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘মানবতাবিরোধীদের সংগঠন হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বদ্ধ পরিকর। বিষয়টি নির্ভেজালভাবেই করতে চায় সরকার। তাই এক্ষেত্রে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। জামায়াত নিষিদ্ধ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবু এ কাজটি করার জন্য জোরালো জনমত গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমরা চাই, জামায়াত নিষিদ্ধ সর্বস্তরের দাবি হয়ে উঠুক।’ তিনি বলেন, ‘এ সরকার মানবতাবিরোধীদের বিচার করেছে, শুধু বিচার কাজই নয়, তাদের রায়ও বাস্তবায়ন করেছে। জাতি বিশ্বাস করে, জামায়াত নিষিদ্ধের কাজটিও আওয়ামী লীগ সরকারই করবে।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন।
আরআর