রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


আত্মঘাতীদের জানাযা পড়া যাবে না

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

farid_masudআল্লামা ফরীদর উদ্দীন মাসঊদ : জঙ্গিদের আত্মঘাতী প্রবণতা উদ্বেগজনক। জঙ্গিরা যে চেতনা নিয়ে আত্মঘাতী হচ্ছে ইসলাম তাদের সেই চেতনাকে সমর্থন করে না। কারণ তাদের প্রত্যাশা আত্মঘাতী হয়ে তারা বেহেশেতে যাবে। কিন্তু ইসলামে আত্মঘাতী বা আত্মহত্যাকে হারাম বলা হয়েছে।

শরিয়তের দৃষ্টিতে আত্মঘাতী বা আত্মহত্যা করে মারা যাওয়া হারাম। এতটাই হারাম যে, আত্মহত্যা করে মারা যাওয়া ব্যক্তির জানাজাও পড়া যাবে না। অথচ চোর-ডাকাতও যদি মারা যায় তার জানাজার কথা বলা আছে শরিয়তে। আত্মঘাতীরা শুধু নিজেরাই নিজেকে হত্যা করছে না, একই সঙ্গে অনেককেও হত্যা করছে। এসব গুনাহর কাজ। সব গুনাহর ভাগিদারই আত্মঘাতী ব্যক্তি। তাই আত্মঘাতীদের প্রতি আহবান তারা যেন ভুল পথে না চলে প্রকৃত পথে আসে। যে পথে তারা চলছে সেটা জাহান্নামের পথ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ। জঙ্গিরা আক্রমণ করার আগেই তারা তাদের খোঁজ পেয়েছে। ঘাঁটিতে গিয়ে তাদের প্রতিরোধ করেছে। এটা আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক। এর আগে তো আমরা দেখেছি, জঙ্গিরা আক্রমণ করার পর পুলিশ তাদের খোঁজ পেয়েছে। কিন্তু এখন আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা, দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আক্রান্ত হওয়ার আগেই জঙ্গিদের ঘাঁটিগুলো চিহ্নিত করে তাদের খতম করার চেষ্টা করছে। খুব সম্প্রতি যে কয়টা জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী একটাতেও কিন্তু জঙ্গিরা আক্রমণ করার সুযোগ পায়নি। এখন যে ব্যক্তিটি আত্মঘাতী হয়েছে তাকে বিভ্রান্ত পথে আনতে কতদিন সময় লেগেছে? নিশ্চয় সে একদিনে আত্মঘাতী হয়ে যায়নি। তাই জঙ্গিদের অপতৎপরতা, আত্মঘাতী প্রবণতা প্রতিরোধ সময় লাগবে। এ বিষয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যেতে হবে।

জঙ্গিদের মূল দর্শনটাই তো ফ্যাসিবাদী দর্শন। কোনো একটা চিন্তাচেতনা জোর করে চাপিয়ে দিতে চাইছে সমাজ ও মানুষের মধ্যে। এই দর্শন প্রতিষ্ঠিত করাই মূল টার্গেট। এটাকেই তারা ইসলামের নামে পরিচিতি করতে চাচ্ছে। ইসলাম কখনোই বর্বর, নিষ্ঠুর, হিংস্র ধর্ম নয়। ইসলাম হচ্ছে প্রেম, ভালোবাসা, সহিষ্ণুতা, উদারতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবসেবার ধর্ম। জঙ্গিরা ইসলামকে ভুলভাবে প্রচার, প্রকাশ বা পরিচিত করতে চাইছে, এটার বিরুদ্ধেই আমাদের সংগ্রাম, হুঁশিয়ারি ও প্রয়াস। কারণ ইসলামকে আমরা বিকৃত হতে দিতে পারি না।

সমর কৌশলও রয়েছে জঙ্গিদের। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করাই ওদের সমর কৌশল। অনেকটা চেঙ্গিস বা হিটলারের সমর কৌশলের মতোই। আতঙ্কিত মানুষ সাধারণত প্রতিরোধ শক্তি হারিয়ে ফেলে। মানুষের যদি প্রতিরোধ শক্তি হারিয়ে যায়, তাহলে উদ্দেশ্য সাধনের দিকে তাদের অগ্রসর হওয়া সহজ হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোথাও তারা আইএসের নামে জঙ্গি হামলা চালাচ্ছে, কোথাও জামায়াত-শিবিরের নামে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, কোথাও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে, এই যে জেমএবি বা বাংলাভাই, শায়খ আব্দুর রহমান এরা তো ছাত্রশিবিরেরই মানুষ। তারা ভিন্ন ভিন্ন নামে হতে পারে, কিন্তু গোষ্ঠী এক। এদের পেছনে মূল শক্তিদাতা হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামী। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও জামায়াতে ইসলামী তরুণদের সম্মোহিত করেছিল। বিপথে নিয়েছিল, বিভ্রান্ত করেছিল। এখনকার তরুণদেরও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পেছন থেকে যারা কলকাটি নাড়ছে, নিঃসন্দেহে তারা ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন।

এখানে জঙ্গিরা হামলাগুলো ধর্মের নামে পরিচালিত করছে। যেহেতু তারা ধর্মের নামে এসব করছে, ওদের এই ভুল পথ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পরিবারের দায়িত্ব অন্যতম। এছাড়া আলেম-ওলামা, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব অপরিসীম। রাষ্ট্র তার কলাকৌশল ব্যবহার করে কী করে ভুল পথে যাওয়াদের ফিরিয়ে আনা যায়, তা তারা ঠিক করবে। প্রয়োজনে কী করে তাদের কাউন্সিলিং করা যায়, তার ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারে। শুধু পুলিশ দিয়েই জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদকে থামানো যাবে না। রাষ্ট্র, মানুষ ও সমাজ সচেতনতায় জঙ্গিদের মূলোৎপাটন করা সম্ভব।

-আমাদের সময় ডটকমের সৌজন্যে


সম্পর্কিত খবর