প্রথমবারের মতো একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলায় মো. আবদুস সাত্তার নামের এক আসামি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করেছেন। ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর আসামির আত্মসমর্পণের ঘটনা আর ঘটেনি। খবর বিডিনিউজের
মঙ্গলবার তিনি আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করলে বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
হত্যা, গণহত্যা ও আটকে রেখে নির্যাতনের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগ রয়েছে ৬১ বছর বয়সী আবদুস সাত্তারসহ এ মামলার আট আসামির বিরুদ্ধে। ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সাংসদ এমএ হান্নানও রয়েছেন তাদের মধ্যে।
আব্দুস সাত্তারের জামিনের জন্য আদালতে শুনানি করেন তার আইনজীবী মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া। অন্যদিকে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন এর বিরোধিতা করেন।
রেজিয়া সুলতানা জানান, আসামিদের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হান্নান, তার ছেলে মো. রফিক সাজ্জাদ, ডা. খন্দকার গোলাম ছাব্বির আহমাদ, মিজানুর রহমান মিন্টু ও মো. হরমুজ আলী আগে থেকেই কারাগারে রয়েছেন।
আবদুস সাত্তারের আত্মসমর্পণের পর এখন পলাতক আছেন মো. ফখরুজ্জামান ও খন্দকার গোলাম রব্বানী।
২০১৫ সালের ১৯ মে ত্রিশালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন এ মামলা করেন। ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক পরে এজাহারটি গ্রহণ করে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালে তদন্ত সংস্থা ওই বছরের ২৮ জুলাই তদন্ত শুরু করে। পরে ১০ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে।
ওইদিনই হান্নানকে গুলশানে তার বাড়ি থেকে এবং ছেলে রফিক সাজ্জাদকে ওই এলাকার আরেকটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া গোলাম সাব্বির, মিন্টু ও হরমুজ আলীকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অভিযোগের তদন্ত শেষে গত বছরের ১১ জুলাই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেয়।
ছয় অভিযোগ
অভিযোগ ১: একাত্তর সালের ২৩ ও ২৪ এপ্রিল ময়মনসিংহের গোলকীবাড়ী বাইলেনের প্রখ্যাত ভাস্কর আব্দুর রশিদকে অপহরণ, নির্যাতনের পর জিপের পেছনে রশি দিয়ে বেঁধে টেনে হিঁচড়ে হত্যা ও লাশ গুম।
অভিযোগ ২: মুক্তিযুদ্ধের সময় ২ অগাস্ট ত্রিশাল থানার বৈলর হিন্দুপল্লী ও মুন্সিপাড়ায় অগ্নিসংযোগ, সেন্টুকে গুলি করে হত্যা ও দুজন হিন্দুকে গুলি করে আহত করা।
অভিযোগ ৩: একাত্তরের ৭ থেকে ৯ অগাস্টের মধ্যে বৈলরের আ. রহমান মেম্বারকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা ও লাশ গুম।
অভিযোগ ৪: মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৭ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে খন্দকার আব্দুল আলী রতনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা ও লাশ গুম।
অভিযোগ ৫: একাত্তরের ২৩ এপ্রিল থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে মো. আবেদ হোসেন খানকে আটক, নির্যাতন ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর।
অভিযোগ ৬: একাত্তরের ৭ থেকে ১০ অগাস্টের মধ্যে কে এম খালিদ বাবুকে অপহরণ, আটক ও নির্যাতন।
এআর