যুবাইর ইসহাক: চলছে স্বাধীনতার মাস। নীল আকাশে মুক্তভাবে উড়ছে লাল সবুজের পতাকা। এই পতাকাটি আমাদের অাত্মত্যাগের বিনিময় পাওয়া। অনেক রক্তে বদলে সবুজের বুকে লাল বৃত্তটি আঁকা। একটি পতাকা শুধু এক টুকরা কাপড় নয়; বরং একটি দেশ, একটি জাতি, একটি স্বাধীনতা। একটি পতাকায় মিশে আছে কোটি কোটি হৃদয়। মিশে আছে কোটি কোটি বুকের ভালোবাসা।
লাল সবুজের এই কাপড়টি শুধু পতাকাই নয়, বরং এটি আমাদের অহঙ্কার। আমাদের গৌরব। আমাদের মর্যাদা।
সবুজের মধ্যে লাল আমাদের জাতীয় এই পতাকাটি প্রথমে কিন্তু এরকম ছিলো না।
১৯৭১ সালের ২ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় (বর্তমান কলা ভবনের সামনের পশ্চিম গেটে) ছাত্র নেতা আ.স.ম. আব্দুর রবের ১ম উত্তোলন করা পতাকা ছিলো সবুজের মধ্যে লাল বৃত্তে দেশের হলুদ একটি মানচিত্র অাঁকা। সেই পতাকার ডিজাইন করেছিলেন ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ। পতাকা তৈরির জন্য কাপড় দিয়েছিলেন ঢাকা নিউমার্কেটের অ্যাপোলো টেইলার্সের মালিক বজলুর রহমান লস্কর।
এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চে তাঁর বাসভবন ধানমন্ডির ৩২নম্বর বাসায়, স্বাধীনতা ঘোষণার প্রাক্কালে যে পতাকা উত্তোলন করেছিলেন, তা ছিলো মানচিত্র সমৃদ্ধ পতাকা।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনের পর শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইন করা পতাকার মাঝে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রং ও তার ব্যাখ্যা-সংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বল হয় চারুকলা ইনিস্টিটিউটের প্রধান চিত্রশিল্পী কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয়।
আমাদের জাতীয় পতাকাটি পতাকার অনুপাত- ১০ : ৬ বা ৫:৩।
এর রঙ হলো গাঢ় সবুজ, এর মধ্যে লাল বৃত্ত। এই লাল বৃত্তের মাপ- পতাকার ৫ ভাগের ১ অংশ।
আমাদের আয়তকার পতাকার দৈর্ঘ্য ১০ ফুট হলে প্রস্থ হবে ৬ ফুট, লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে ২ ফুট, পতাকার দৈর্ঘ্যের সাড়ে ৪ ফুট ওপরে প্রস্থের মাঝ বরাবর অঙ্কিত আনুপাতিক রেখার ছেদ বিন্দু হবে লাল বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু।
জাতীয় পতাকা ভবনে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন মাপ হলো ১০ ফুট বাই ৬ ফুট, ৫ ফুট বাই ৩ ফুট এবং ২৫ ফুট বাই ১৫ ফুট। মোটরগাড়িতে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো ১৫ ইঞ্চি বাই ৯ ইঞ্চি এবং ১০ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি। আন্তর্জাতিক ও দ্বিপক্ষীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য টেবিল পতাকার মাপ হলো ১০ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি।
লাল সবুজের এই পতাকাটি বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সরকারি ও বেসরকারি ভবন, বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশন ও কনস্যুলেটে পতাকা উত্তোলন করা হয়। শোক দিবসে পতাকা করা হয় অর্ধনমিত।
আমাদের এই পতাকাটি আমাদের জাতীয় গৌরব বহন করে। আমাদের ইতিহাস ভেসে উঠে। আমরা পতাকাকে প্রাণভরে শ্রদ্ধা করি। হৃদয়ভরে ভালোবাসি। উরন্ত পতাকার প্রতিটা পনপন শব্দে নতুন করে স্বপ্ন দেখি। আর মনে মনে বলি, প্রিয় মাতৃভূমি, ভালো থেকো!
আরএফ