সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর
নির্বাহী সম্পাদক, নবধ্বনি
‘আসসালামু আলায়কুম। আপনার কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ চাচ্ছি। আমি এ বছর মিশকাত পড়ছি। অন্যদিকে সায়েন্স থেকে দাখিল পরীক্ষাও দিয়েছি। সিদ্ধান্ত হিমশিম খাচ্ছি যে, এখন কী করবো? অনেকে বলছে, আলিমে ভর্তি হয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে। কেউ বলছে মাদরাসার পড়া বাদ দিয়ে কলেজে ভর্তি হতে। এখন আপনি আমাকে পরামর্শ দিয়ে উপকার করবেন, প্লিজ!’
এই তরুণের উদ্বেগের কারণটা আমি বুঝি। আমাকেও একদিন এ সময় পার হয়ে আসতে হয়েছে। আমি যদিও একেবারে অথৈয়ে পড়ে যাইনি, তবে একজন সঠিক দিকদর্শীর প্রয়োজনীয়তা সবসময়ই প্রণিধানযোগ্য।
যাকগে, এ মেসেজের সূত্র ধরেই আজ কিছু না বলা কথা বলি। কখনো কি ভেবেছেন, যে ছেলেটি মাদরাসায় পড়ার পাশাপাশি দাখিল বা এসএসসি পরীক্ষা দিলেই গোল্ডেন এ প্লাস পাবে, এসএসসি-দাখিল দিয়ে ভালো কোনো ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ করে নিতে পারবে, সে ছেলেটি কেন এমন সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে? আমার তো মনে হয়, অধিকাংশ মাদরাসাছাত্রই এমন সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে।
একজন মাদরাসাছাত্র এমন সুযোগের সদ্ব্যবহার কেন করবে? এটি একটি প্রশ্ন বটে। কেননা স্কুল-কলেজের ছাত্ররা ‘সুযোগের সদ্ব্যবহার’ হিসেবে কখনোই মাদরাসায় ভর্তি হয় না। কিন্তু মাদরাসার ছাত্ররা সুযোগ পেলে দাখিল-এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে নিজেদের ভবিষ্যত রুজির একটা ভালো বন্দোবস্তের কোশেশ করে থাকেন। কেন? মাদরাসাশিক্ষা কি তার ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে না? তার প্রতিভা বিকাশে পরিপূর্ণভাবে সাহায্য করছে না? তাকে সমাজে আত্মমর্যাদাশীল করে উপস্থাপন করছে না?
এর উত্তর যদিও রূঢ়, কিন্তু বাস্তবতা হলো— মাদরাসাশিক্ষা জাগতিক বিবেচনায় অনেকাংশেই সময়ের প্রয়োজন মেটাতে অদূরদর্শী। আপনি আমি যতোই আদর্শ, দীন-ধর্ম, চেতনার ফুলঝুরি দিয়ে তাদের বুঝাতে যাই না কেন, তাদের সামনে বাস্তবতা সমুজ্জ্বল। তারা সমাজে মাদরাসাশিক্ষার অবস্থান এবং একজন মাদরাসাপাশ আলেমের অবস্থান খুব ভালোভাবেই প্রত্যক্ষ করে থাকে। বহুমুখী কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা, প্রতিভা বিকাশের অপর্যাপ্ততা এবং সর্বোপরি আয়ের নিম্নমুখী স্কেল দেখে তার মনে হীনম্মন্যতা বাসা বাঁধা খুব স্বাভাবিক।
এই হীনম্মন্যতা দূর করতে অনেক মাদরাসাছাত্র মাদরাসাশিক্ষার পাশাপাশি দাখিল-এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে নিচ্ছে। এখন আমি যদি তাদের এ প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ দেই তাহলে কওমি মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থাকে এক প্রকার অবজ্ঞা করা হবে। আবার যদি তাদের নিরুৎসাহিত করি তবে তাদের ভবিষ্যত জীবনের দোদুল্য আগামী আমাকে কটাক্ষ করবে জীবনভর। সুতরাং এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ যারা আছেন তারাই সঠিক সুরাহা দিতে পারবেন। তবে তাদের এ ধরনের প্রচেষ্টাকে আমি যেমন সম্মান করি, তেমনি এ কথাও দ্বিধাহীনচিত্তে স্বীকার করি— কওমি মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থা পৃথিবীর সবচে পিউর শিক্ষাব্যবস্থা। ধর্মীয় শিক্ষা ও দীক্ষার জন্য এর চেয়ে উত্তম কোনো শিক্ষাব্যবস্থা পৃথিবীতে এখনও গড়ে উঠেনি।
এখানে হয়েছে আরেক সমস্যা। কিছু ছাত্র নিজেদের আত্মবিকাশের জন্য, অন্যতর শিক্ষার্জনের জন্য মাদরাসার পাশাপাশি দাখিল বা এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পরবর্তীতে কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হচ্ছে। আমার জানাশোনা অনেক মাদরাসাছাত্র ঢাকা ইউনিভার্সিটিসহ বাংলাদেশের অনেক পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে সগৌরবে অনার্স করছে, মাস্টার্স করছে। তো, যারা মাদরাসার কানুনের ভয়ে বা পরিবারের অসহযোগিতার জন্য বা মাদরাসাশিক্ষার প্রতি ভালোবাসার কারণে কলেজ-ভার্সিটিমুখো হয় না, তারা ভার্সিটিমুখো ছেলেদের নানাভাবে হেয় করার চেষ্টা করে থাকেন। তাদের প্রতি এক ধরনের নাক সিঁটকানো মনোভাব প্রক্ষালন করেন। এ ধরনের মনোভাব পরিহার করা উচিত। তাদের বুঝা উচিত, জাগতিক জ্ঞানার্জনও পুণ্যের কাজ। নিজের এবং পরিবারের জন্য আয়ের পথ সুগম করার মানসিকতা কখনোই অবজ্ঞার কাজ হতে পারে না। নিজের প্রতিভা বিকাশ এবং মেধা বিকাশের প্রচেষ্টা কখনোই নাক সিঁটকানোর মতো গর্হিত কাজ নয়। বরং এটা অন্য অনেকের চেয়ে গর্বিত পদক্ষেপ।
তবে এ কথাও স্মর্তব্য, সাধারণ শিক্ষা কেবলই জাগতিক, পার্থিব সফলতার জন্য। এটাকে কখনোই জীবনের সর্বাপেক্ষা প্রশংসনীয় কাজ বলে প্রাধান্য দেয়ার উপায় নেই। সময়ের প্রয়োজনে সময়কে ধারণ করা মাত্র।
দুই
কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি নিয়ে আমার তেমন কোনো আগ্রহ নেই। আগ্রহ নেই বলতে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার আগ্রহ নেই। কারণ এ বিষয়টি নিয়ে যারা দু’পক্ষেই কাজ করছেন, তারা কেউই মাদরাসার ছাত্রদের শিক্ষার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসেননি। মাদরাসা কর্তৃপক্ষও যেমন রাজনৈতিক কারণে স্বীকৃতি নিতে অনীহা প্রকাশ করছে, তেমনি সরকারপক্ষও রাজনৈতিক কব্জাবাজির জন্যই স্বীকৃতি দিতে কাছা বেঁধে নেমেছে। অথচ উভয় পক্ষই যদি ছাত্রদের ভবিষ্যত, তাদের শিক্ষা, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আন্তরিকভাবে ভাবতো, তবে খুব সহজেই স্বীকৃতির স্বীকৃতি হয়ে যেতো। লাখো লাখো মাদরাসাছাত্র বুক ফুলিয়ে নিজের আত্মপরিচয়ে পরিচিত হতে পারতো। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা রাজনৈতিক ‘অহিংসা পরম ধর্ম’-এর মতো ফাঁকা বুলির মধুর জালে আটকে গেছি।
তিন
মাদরাসার একজন তরুণের মেধা আছে লেখালেখি করার, সাংবাদিকতার; তাকে কেন দাওরা পাশ করে মাদরাসায়ই পড়াতে হবে? মাদরাসার একজন ছাত্র অংক খুব ভালো বুঝে, অ্যালগারিদমের কিছুটা তালিম দিলেই সে কম্পিউটার কোডিংয়ের মাস্টার হতে পারবে; তাকে কেন মাদরাসার বোর্ডিংয়ের কেরানি বানানো হবে? একজন ছাত্রের আঁকাআঁকির বেশ হাত আছে, ব্রাশ আর রঙের পোঁচটা ভালোভাবে ধরিয়ে দিতে পারলেই সে একজন ক্যালিগ্রাফার, পেইন্টার বা গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে পারে; তাকে কেন হেদায়া পড়ানোর দরসে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে? একজনের ইংরেজির প্রতি খুব ঝোঁক আছে, একটু সুযোগ দিলেই ওঊখঞঝ করে সে বিদেশে ভালো আয় রোজগারের পথ যেমন সুগম করতে পারবে তেমনি ভিনদেশে দাওয়াতি কাজেও সাহায্য করতে পারবে; কিন্তু মাদরাসার মুহতামিম সাহেব তাকে ধরে নিয়ে বসিয়ে দেন মক্তবের মাস্টার মশাইয়ের চেয়ারে— ‘ছাত্রদের ইংরেজি ক্লাসটা এখন থেকে আপনিই নিবেন হুজুর! আপনার এমন ইংরেজি প্রতিভার তো আমরা অবমূল্যায়ন করতে পারি না!’
এই হচ্ছে আমাদের প্রতিভা মূল্যায়নের ঠিকুজি।
যে প্রতিভা বিকাশের উপায়গুলো বাতলানো হলো, একজন মাদরাসাছাত্র কি এ সুযোগগুলো মাদরাসার চৌহদ্দিতে থেকেই কাজে লাগাতে পারে না? এসব কি কওমি মাদরাসার চেতনার পরিপন্থী কাজ? এই আত্মবিকাশের সুবর্ণ সুযোগগুলো দেওবন্দের উসুলে হাশতেগানার (অষ্ট মূলনীতি) বিরুদ্ধ রেওয়াজ? মাদরাসায় পড়াশোনা করে কি আর কিছুই হওয়া যাবে না? শুধু মাদরাসার শিক্ষকই হতে হবে? মাদরাসায় পড়ালেখা করলে মাদরাসার শিক্ষকই হতে হবে— এমন কানুন কোন কিতাবে লেখা আছে? ওয়াজ-মাহফিলের বক্তা হতে না পারলে সে কোনো আলেমই নয়— এমন ধারণা কোন হাদিসে বর্ণিত আছে? আমাদের মাদারাসার গুরুজনদের মাঝে এ ধারণা খুব শক্তপোক্তভাবে বদ্ধমূল যে— যে ছাত্র মাদরাসা থেকে পাশ করে মাদরাসায় পড়ায় না, সে হালাক, সে ধ্বংস! তার ওপর তার শিক্ষকদের বদদোয়া পতিত হয়েছে! সে ইলমের তাওয়াজ্জুহ থেকে মাহরুম হয়ে গেছে...! এমন আরও নানা দোষ-বঞ্চনার শিকার হতে হয় যে আলেম মাদরাসায় না পড়িয়ে অন্যকোনো কাজে নিজেকে ‘মশগুল’ করে।
কী তাজ্জব আমাদের মানসিকতা! অন্য অনেকের খবর জানি না, আমি নিজে এই মহান কটাক্ষের শিকার।
আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, কওমি শিক্ষাব্যবস্থা একটি একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা। এখান থেকে পড়ে কেউ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে না। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এখানে কেবলমাত্র ইসলামের সঠিক শিক্ষাটাই পাওয়ার জন্য ভর্তি করান। কিন্তু দিনশেষে সবারই তো পরিবার আছে। সংসারের হাল ধরার তাড়না আছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে কওমি মাদরাসাগুলোতে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভোকেশনাল বিভিন্ন কোর্স চালু করাটা সময়ের অপরিহার্য দাবি। এ ধরনের কোর্স মাদরাসার সাধারণ সিলেবাসকে যেমন বাধাগ্রস্ত করবে না, তেমনি মাদরাসাশিক্ষার পাশাপাশি ছাত্ররা নিজেদের নানামুখী প্রতিভারও বিকাশ ঘটাতে পারবে। মাদরাসা থেকে পাশ করে তাদের কর্মসংস্থান নিয়েও ভাবতে হবে না। যার শিক্ষকতার প্রতিভা আছে সে মাদরাসায় পড়াবে, যার কম্পিউটার কোর্স করা আছে সে কম্পিউটারবেজড কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবে, যার গ্রাফিক্স জ্ঞান আছে সে-ও নিজের আয়ের পথ করে নিতে পারবে। মোটকথা, কওমি শিক্ষাব্যবস্থা তখন ধর্মীয় জ্ঞানে যেমন জগতসেরা হিসেবে পরিচিতি পাবে, তেমনি এখানকার পাশ করা ছাত্ররাও সমাজের সর্বস্তরে নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারবে।
চার
একটা কথা আমি প্রায়ই বলি— সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি রহ. তার বিখ্যাত আরবি গ্রন্থ ‘মা যা খাসিরাল আলামু বিইনহিতাতিল মুসলিমিন’ যখন লিখেন তখন তার বয়স সাতাশ বছর। সাতাশ বছর বয়সে গ্রন্থটি লেখার পর তিনি চিন্তা করলেন, বইটি যদি আমি উপমহাদেশের কোনো পাবলিশিং হাউজ থেকে প্রকাশ করি তবে তা উপমহাদেশের পাঠকশ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু যদি তা আরবের কোনো পাবলিশিং হাউজ থেকে প্রকাশ করা হয় তবে তা আরব-অনারব সবার কাছেই পৌঁছবে। এ চিন্তা থেকেই তিনি তার পাণ্ডুলিপি মিসরের একটি বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বরাবর প্রেরণ করেন এবং সেখান থেকেই মহা সমারোহে বইটি প্রকাশ পায়। পাঠকমাত্রই জানেন, উপমহাদেশের লেখকদের অল্প যে কয়েকটা গ্রন্থ আরবে সর্বজনপঠিত, তার মধ্যে এটি অন্যতম।
এ ব্যাপারে কিছু ক্ষোভের ক থা না বললে পাঠকের প্রতি অবিচার করা হবে। কেননা কিছু বিষয় আছে যেগুলো জানার অধিকার সকল পাঠকের রয়েছে। সেগুলো না জানালে, না শোনালে তাদের প্রতি অবিচার হয় বৈকি। করেছিলেন বিশ্বব্যাপিতার। সে হিসেবে আমাদের চিন্তার ব্যাপকতা অত্যন্ত নিম্নমানের। আমরা বিশ্বজয়ের চিন্তা তো দূর কি বাত, দেশ জয়ের স্বপ্ন দেখতেও ভয় পাই।
এ ব্যাপারে কিছু ক্ষোভের কথা না বললে পাঠকের প্রতি অবিচার করা হবে। কেননা কিছু বিষয় আছে যেগুলো জানার অধিকার সকল পাঠকের রয়েছে। সেগুলো না জানালে, না শোনালে তাদের প্রতি অবিচার হয় বৈকি।
একটা বিষয় আপনারা খেয়াল করেছেন কি-না জানি না, আর খেয়াল করলেও সেটাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করেছেন কি-না সেটাও জানি না— বাংলাদেশের বড় বড় মাদরাসাগুলোতে বিভিন্ন মাহফিল বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে ভারত বা পাকিস্তান থেকে নামজাদা বড় বড় আলেমদের দাওয়াত করে আনা হয়। বেশ সাহসী এবং মোবারক উদ্যোগ। এ ব্যাপারে আমার কোনো কথা নেই। আমার কথা হলো, এই যে আমরা ভারত-পাকিস্তান থেকে বড় আলেমদের আনছি বরকত হাসিলের জন্য, আমরা কেন নিজেদেরকে তাদের সমপর্যায়ে নিয়ে যেতে পারছি না? তাদের ছায়ায় বেড়ে উঠে আমরা মনে করি— তাদের মতো হওয়া আমাদের পক্ষে কখনো সম্ভব নয়। এবং অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদেরও গরজ নেই দেশি আলেমদের বিশে^র বুকে উঁচু করে তুলে ধরার।
এর একটা মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। আমরা যেখানে তকি উসমানি, আলি মিয়া নদভি, জুলফিকার নকশবন্দির অনূদিত বই মানেই সেটা হেদায়েতের পাথেয় মনে করছি, সেখানে বাংলাদেশের কোনো আলেমের বইকে গোনায়ই ধরছি না। ফলে দেখা যায়, অনেক ভালো গবেষক আলেম পৃষ্ঠপোষকতা না থাকার দরুণ, সঠিক মূল্যায়ন না হবার কারণে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যান।
বিগত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশে কি একজন আলি মিয়া নদভির জন্ম হয়নি? হয়তো হয়েছে, অনেক হয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে তাদের দিয়ে মাদরাসার বোর্ডিংয়ের হিসাব আর কুতুবখানার কিতাবের তালিকা প্রণয়নে ব্যস্ত রেখেছি।
যদ্দুর জানি, বিগত একশো বছরে দারুল উলুম দেওবন্দে হাজার হাজার বাংলাদেশি ছাত্র পড়াশোনা করেছে এবং তাদের ফলাফল বরাবরই অন্য সব দেশের ছাত্রদের চেয়ে তুলনামূলক ভালো। দাওরা ক্লাসে প্রায়ই বাংলাদেশি ছাত্ররা রেকর্ড পরিমাণ নম্বর পেয়ে থাকে। এ কারণে দেওবন্দে বাংলাদেশি ছাত্রদের আলাদা কদর রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় দেখুন, এসব ছাত্ররা যখন বাংলাদেশে আসে তখন তাদের ভাগ্যে জুটে মফস্বলের এক মাদরাসায় বড়জোর আবু দাউদ শরিফ পড়ানো আর নাজেমে তালিমাতের দায়িত্ব, সঙ্গে এক মহিলা মাদরাসায় মুসলিম শরিফের দরস। দেওবন্দফেরত একজন রেকর্ড নম্বরধারীকে আমরা এভাবেই মূল্যায়নের বরমাল্য দিয়ে বরণ করে নিই। এর চেয়ে বেশি কিছু করার ক্ষমতা সৃষ্টিগতভাবেই বাঙালি আলেমসমাজের রয়েছে কি-না, এ বিষয়টি আরেকবার ভেবে দেখার অনুরোধ জাগরুক থাকুক সবার মাঝে।
নবধ্বনি’র সৌজন্যে