এম ওমর ফারুক আজাদ; চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামে নগরীর খুলশী থানার সেগুনবাগানে তালিমুল কোরআন মাদরাসার এক ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মিডিয়া মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করছে বলে অভিযোগ করেছে ওই মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তারা ছাত্রের মিত্যুকে কেন্দ্র করে মাদরাসায় হামলা-ভাঙচুর ও মিডিয়ায় মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ জানান।
চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি মিডিয়া এবিষয়ে নানারকম খবর ছাপে এমনকি ওই শিক্ষার্থীকে হত্যা করার হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মারদাসা কর্তৃপক্ষ পুরো ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ৭ মার্চ বিকেল আনুমানিক ৫টার সময় দায়িত্বরত শিক্ষক হিফজুল কুরআন বিভাগের ছাত্র ইশমাম হায়দার (বয়স ১১ বছর)-কে মাদরাসায় অনুপস্থিত দেখে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার অভিভাবককে তার নিখোঁজ সংবাদ জানানো হয়। এদিকে অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে অন্যান্য ছাত্রের কাছ থেকে জানা যায় যে, আছরের নামায শেষে শিক্ষার্থীরা যখন খেলাধুলা করছিল; ছাত্রাবাসের কোণায় যেখানে শিক্ষার্থীদের বিছানাপত্র, বালিশ, কম্বল ইত্যাদি রাখা হয় সবার অগোচরে ওখানে ঘুমিয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহপাঠী ছাত্রদের বর্ণনামতে সে একটি কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়েছিল অধিকন্তু জায়গাটাতে খানিকটা অন্ধকারও ছিল। মাগরিবের নামাযের পর যখন সকল ছাত্র পড়তে বসেছে শিক্ষকরা তাকে দেখতে না পেয়ে সবখানে খোঁজাখুঁজি শুরু করে প্রায় রাত ৮.৩০ পর্যন্ত সম্ভাব্য সব জায়গা খুঁজে তাকে না পেয়ে হিফজ বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ সকলেই উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন। সর্বশেষে কম্বল, বালিশ ইত্যাদি বিছানাপত্রের পার্শ্বে ছাত্রটিকে কম্বল গায়ে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির লোকজন মাদরাসায় উপস্থিত হন। পরামর্শক্রমে অভিভাবকদের সহযোগিতায় তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ইত্যবসরে স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাস্তান লাঠিসোটা, লোহার রড ও ইটপাথর নিয়ে মাদরাসায় হামলা চালায়। প্রধান ফটক ভেঙ্গে মাদরাসার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। দরজা ভেঙে পরিচালকের রুমে প্রবেশ করে তার উপর শারিরিক আক্রমণ এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরিচালকের কার্যালয়ে চেয়ার-টেবিল ও জিনিসপত্র তছনছ করে। বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর মোবাইল ফোন, ত্রিশ হাজার নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
ঘটনার এক পর্যায়ে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় কাউন্সিলর জনাব আলহাজ্ব মুহাম্মদ হোসেন হীরনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ছাত্রটির আকস্মিক মৃত্যুকে পুঁজি করে স্থানীয় একটি স্বার্থান্বেষী কুচক্রি মহল বিশেষ মতলবে এটাকে নানান ধরনের রঙ দেবার চেষ্টা করছে।
দুর্ভাগ্যজনক এই আকস্মিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার ও গুজব ছড়াচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ বলেন, ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক আজাদীসহ কয়েকটি পত্রিকায় বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছাপানো হয়েছে। ‘অধ্যক্ষকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ। সেগুনবাগানে মাদরাসাছাত্র খুন; এলাকাবাসীর ক্ষোভ ভাঙচুর’ শিরোনামে আজকের দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকা প্রধান সংবাদ প্রকাশ করেছে। যা অসত্য, একতরফা, বিভ্রান্তিমূলক ও খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের ধারণা স্থানীয় একটি গোষ্ঠী পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মাদরাসার সুনাম নষ্ট করার অসৎ উদ্দেশ্যে সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে। আমরা এ সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
প্রকৃতপক্ষে অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা হাফেজ মুহাম্মদ তৈয়্যবকে পুলিশ আদৌ গ্রেফতার করেনি এবং ৮ মার্চ বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি সশরীরের উপস্থিত ছিলেন এবং সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য রেখেছেন। আমরা আশা করছি, সত্য, দায়িত্বশীলতা ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার স্বার্থে সংবাদপত্রগুলো এই ভুল সংবাদটি সংশোধন করে আমাদের প্রতিবাদলিপি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করবেন।
আমাদের বক্তব্য হলো, ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমের আমাদের প্রাণপ্রিয় ছাত্রটির মৃত্যুর সঠিক কারণ উদ্ঘাটন করা হোক। ইতোমধ্য ঘটনা তদন্তের জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনার অভ্যন্তরীণ তদন্তের লক্ষ্যে ৫ সদস্য-বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটিকে অবিলম্বে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করার জন্য বলা হয়।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সকলকে কুচক্রি মহলের অপপ্রচার ও মিথ্যাচার সম্পর্কে সজাগ-সচেতন থাকার জন্য আহ্বান জানান।
আরআর