সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রসাদপুর গ্রামের রহমত বিশ্বাসের বাড়িতে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে পরিবারটির সাতজন লোক মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেন ও তালা থানার ওসি মো. হাসান হাফিজুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। খবর ইত্তেফাক
বৃদ্ধ রহমত বিশ্বাস ও তার স্ত্রী নবীজান বিবি জানান, তাদের বড় মেয়ে ফরিদা বেগমের বিয়ে হয়েছে ঝিনাইদহ জেলার বুয়াভাটিয়া গ্রামে। তার স্বামীর নাম গফফার বিশ্বাস। শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে। সম্প্রতি শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। খবর পেয়ে রহমত বিশ্বাসের ছেলে হায়দর বিশ্বাস বোন ফরিদাকে খানিকটা অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসছিলেন। যশোরে আসার পর ফরিদা তাকে বলেন, ‘আমাকে বাপের বাড়ি নিয়ে গেলে তোরা সবাই পাগল হয়ে যাবি!’
নয়দিন আগে বাপের বাড়ি নিয়ে আসা হয় ফরিদাকে। এরপর থেকে বাপের বাড়ির সবাই একে একে পাগল হতে শুরু করে। এদের মধ্যে রয়েছে রহমতের ছেলে আবদুস সবুর বিশ্বাস (২৫), আবদুল হালিম বিশ্বাস (২৮), আবদুল গফুর বিশ্বাস (১৬), ফরিদার মেয়ে আয়েশা খাতুন (৬), ফরিদার বোনের ছেলে যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামের বাবু বিশ্বাসের ছেলে মেহেদি বিশ্বাস (১৩) ও ফরিদার বোন সালেহা খাতুন ( ১৪) ।
প্রতিবেশিরা জানান, সোমবার পর্যন্ত পরিবারের সাতজন পাগল হয়ে গেছে। বাড়ির অন্য সদস্যরা নিজেরাও পাগল হয়ে যাবার আতঙ্কে রয়েছেন। তবে তারা সবাই ঝাড় ফুঁক ও কবিরাজী চিকিত্সা নিচ্ছেন। সোমবার দুপুরে রহমত বিশ্বাসের বাড়ি যেয়ে দেখা গেল পা শিকল বাঁধা অবস্থায় অস্বাভাবিক আচরণ করছে তারা। তাদের কাণ্ডকারখানা দেখতে রহমতের বাড়িতে এখন সব সময় ভিড় করছে গ্রামের মানুষ।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেন বলেন, তারা দৈহিকভাবে সুস্থ, তবে মানসিকভাবে অসুস্থ। মানসিক ভারসাম্যহীনের মতো অকাজ করছে তারা। অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে। কখনও কখনও মারমুখী আচরণ করছে। পুলিশের লোক তাদের সাথে কথা বলতে গেলে অস্ত্র কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি তাদেরকে তালা অথবা সাতক্ষীরা হাসপাতালে এনে চিকিত্সা দেয়ার। কিন্তু বাড়ির লোকজন বলছে এসব জ্বীনের দোষ। বাড়ির বাইরে পাঠালে আরও সমস্যা হবে’। ‘দুই ঘন্টা ধরে তাদের বাড়িতে বসে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছি আমরা।’
রহমত বিশ্বাসের প্রতিবেশি আবদুর রহমান ও জাহিদ বিশ্বাস জানান, ওরা এক সময় খুব গরিব ছিল। বছর কয়েক হলো তারা এখন ধনী পরিবার। দালান বাড়ি করেছেন, জমি কিনেছেন রহমত বিশ্বাস। তার মেয়ে সালেহা খাতুন খলিলনগর স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। নাতি মেহেদি হাসান একই স্কুলের নবম শ্রেনির ছাত্র। তারাও অস্বাভাবিক আচরণ করছে। রহমত বিশ্বাসের ছেলেরা চাষবাস করে। তারাও হঠাৎ বেসামাল হয়ে পড়ে বাড়িময় তান্ডব জুড়ে দিয়েছে।
গ্রামবাসী বলছে, ‘কিছুদিন আগে রহমত বিশ্বাসের বড় মেয়ে ফরিদা প্রসাদপুরের বিলের মধ্যে একটি স্বর্ণমূর্তি পেয়েছিল। সেই মূর্তি বিক্রির পর তারা অনেক টাকার মালিক হয়ে যায়। তখন থেকে প্রথমে ফরিদা ও পরে অন্যরা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তবে রহমতের পরিবারের দাবি তাদের মেয়ে ফরিদাকে তদবির করে পাগল বানিয়ে ফেলেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
এআর