মাওলানা মাহমুদ হাসান সিরাজী
প্রিন্সিপাল, মাদরাসা ওসমান ইবনে আফফান রা.
মাতুয়াইল, ঢাকা
আলেম ওলামাদের রাজনীতির ইতিহাস অনেক দীর্ঘ দিনের। কোন সময়ই আলেমরা রাজনীতিশূন্য ছিলেন না। বৃটিশবিরোধী আন্দোলন তো আলেম ওলামাদেরই অবদান। ৪৭ এর স্বাধীনতায় স্বাধীন দেশের দুই প্রান্তে দুই ওসমানীই পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। ৭১ সালে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আলেম ওলামাদের সংখ্যাটা একেবারেই ফু মেরে উড়িয়ে দেওয়ার মত নয়।
দেশ গড়া ও সমাজ বিনির্মাণের লক্ষে মসজিদ মাদরাসার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আলেম ওলামাদের অবদান বিশ্বময় চোখে পরার মত। এ দেশের প্রায় তিন লক্ষ মসজিদ ও ত্রিশ হাজার মাদরাসা সরাসরি আলেম ওলামাদের পরিচালনায় পরিচালিত হয়ে আসায় দেশ ও জনগণের সাথে আলেম ওলামার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। প্রতি শুক্রবার সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি মানুষের সামনে প্রায় তিন লক্ষ মসজিদ থেকে আদর্শ সমাজের সৎ মানুষ হিসাবে জাতিকে গড়ে তোলার দীক্ষা, সমাজ বিধ্বংশী মাদকবিরোধী বয়ান, রাষ্ট্র ও আইন শৃংখলাবিরোধী বিপথগামীদের সুপথে ফিরিয়ে আনার তেজদীপ্ত আলোচনা আলেম ওলামার মুখ দিয়েই উচ্চারিত হয়ে আসে।
দেশের সার্থে, সমাজের প্রয়োজনে ও জাতির চাহিদা মেটাতে রাজনীতির সাথেও আলেম ওলামাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।
আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাননীয় রাষ্ট্রপতি অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমুহের মতো ইসলামি দলগুলোকেও সংলাপের জন্য আহবান করেছেন। ইসলামি দলগুলোও রাষ্ট্রপতির আহবানের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেছেন। রাষ্ট্রপতির ডাকে সাড়া দিয়ে বঙ্গভবনে ছোটে গিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির সাথে আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়ে ফটোশ্যাসনে গিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতির এ উদ্দোগকে আমরা আন্তরিকতার সাথে সাধুবাদ জানাই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি ইসলামি দলগুলোকে যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন।
তবে সার্চ কমিটি গঠন হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম, ইসলামি দলগুলোর বিবেচনায় উক্ত সার্চ কমিটিতে একজন আলেমকে রাখা হবে। আলেম ওলামার মেধা ও দেশপ্রেমের সঠিক মূল্যায়ণ করা হবে। কিন্তু এদিকটি অত্যন্ত আশাহতের মতো।
যাক, সামনে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে। দেশবাসী একটা নিরপেক্ষ, স্বাধীন, শক্তিসালী ও মেরুদণ্ডওয়ালা নির্বাচন কমিশন চায়। আর এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনে একাধিক আলেম ওলামাকে জায়গা দিতে পারলে এটা দেশবাসীর আশার অনেকটা প্রতিফলন ঘটবে আশা করি। নির্বাচন কমিশনে আলেম ওলামা থাকলে নির্বাচন কমিশনও দেশবাসীর আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে জনগণ মনে করেন।
দেশ, দশ, জনসম্পৃক্ততা ও দল বিবেচনায় আমরা নির্বাচন কমিশনে একাধিক আলেমের উপস্থিতি দেখতে চাই। চাই আল্লামা মাহমুদুল হাসান বা আ ফ ম খালিদ হোসেন কিংবা আজহার আলী আনোয়ার শাহসহ অন্য কেউ। নির্বাচন কমিশনে ভূমিকা রাখার মত যোগ্যতা, দক্ষতা ও গ্রহনযোগ্যতা তাদের রয়েছে।
নেতৃত্ব দিয়ে একটা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মত শক্তি, সামর্থ, জনবল ও মনোবল তাদের রয়েছে। এখন সরকার, সার্চ কমিটিসহ রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিৎ হবে তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করে দেশের সার্থে ও সঠিক গণতন্ত্র চর্চার লক্ষে তাদের ব্যবহার করা।
একটি সুন্দর দেশ, আদর্শ জাতি, সভ্য সমাজ গড়ার শুভ কামনায় সরকারসহ সকলের সুমতি কামনা করছি।
আরআর