ট্রাম্প বিপজ্জনক। শুধু সে ইসলাম বিদ্বেষী বলেই নয়, ইসলামবিদ্বেষী ভায়োলেন্স মানসিকতার বৈধতার প্রবক্তা বলে। ট্রাম্প এখন এক আন্দোলন, এক প্রেরণা। 'মুসলিম মুক্ত ইউরোপ' এর প্ররণা। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ইসলাম ফোবিয়ার ফসল এই ট্রাম্প, তার প্রেসিডেন্সি।
এন্টি ইসলাম টেরোরিস্টরা স্লোগান দেয় ট্রাম্প ট্রাম্প বলে। মুসলিমদের উপর হামলা করার সময় ট্রাম্প ট্রাম্প বলে চিৎকার করে। মসজিদ পুড়ানোর সময় ট্রাম্পের নামে চিৎকার করে প্রেরণা পায়।
অনেকেই বলছেন ট্রাম্প মানে রেসিজম। ঠিক বলছেন। কিন্তু আসল সত্যকে আড়াল করা হয় রেসিজম দ্বারা। মিনমিনে শুনায়। রেসিজম ইউরোপ-আমেরিকায় কোন দিন ছিলো না? কোথায় ছিলো না? ট্রাম্প ইউরোপের সেই মনস্তাত্তিক অসুখকে বহন করেন খুবই।কিন্তু তিনি মূলত এন্টি ইসলাম এক্টিভিটিসের আইকন।এ ক্ষেত্রে তার নতুনত্ব হলো বুশ-ওবামা যতটা দিগম্বর হতে চাননি, তিনি তা হতে চান এবং বলে কয়েই। তাঁর উত্থান গোটা ইউরোপে একটি আগুনে হাওয়া বইয়ে দিচ্ছে, ঘৃণার।
এন্টিইসলাম এক্সস্ট্রিমিজম এখন আর রাখঢাকে নেই সরাসরি বলছে, 'হয় ইউরোপ থাকবে, নয় মুসলিম থাকবে।' এই যে নেদারল্যান্ডের গ্রিট ওয়াইল্ডারস (Geert Wilder) তিনি মার্চের ১২ তারিখের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হতে চান। তিনি ২০১৪ সালে পিপল পাটি ফর ফ্রিডম অ্যান্ড ডেমোক্রেসি থেকে বের হয়ে এসে পার্টি ফর ফ্রিডম গঠন করেন। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প তার প্রেরণা। মুসলিম উৎখাতের ঘোষণা দিয়েছেন, কোরান নিষিদ্ধ করতে বলছেন। মুসলিম-অধ্যুষিত দেশগুলো থেকে ইমিগ্র্যান্ট নেওয়া বন্ধ করতে বলেছেন। যে মুসলিমদের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে তারা যদি নেদারল্যান্ডের কোনো আইন অমান্য করে তবে তাদের ঘাড় ধরে বের করে দেওয়ার কথাও বলেছেন। নেদারল্যান্ডের রাজনৈতিক আশ্রয় কেন্দ্র, মসজিদ ও ইসলামি স্কুলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে তিনি।
নেদারল্যান্ডে যদি তাঁর দল ক্ষমতায় আসে তাহলে কী হতে পারে তা অনুমান করুন। এই যে ফ্রান্সে মেরিন লা পেন (Marine Le Pen)। সেখানে নির্বাচন ২৩ এপ্রিল। তাঁর কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে ট্রাম্পের বাণী। দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ও বাইরের পৃথিবী থেকে দেশের মানুষের চাকরি ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন তিনি। বলছেন, মুসলিম শত্রুদের খেদিয়ে দেয়ার কথা। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে পেনকে খুব একটা তাচ্ছিল্য করা যাচ্ছে না।
এই যে ৪১ বছর বয়স্ক ডক্টরেট ডিগ্রিধারি ব্যবসায়ী ফ্রাউক পেট্রি (Frauke Petry)। তার দল অলটারনেটিভ জার্মান পার্টি কঠোর ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে মিডিয়ার মনোযোগ কাড়ছে। তাঁর এক ভয়াবহ উক্তি, ‘অনুমতি ছাড়া যে মুসলিম শরণার্থী জার্মানিতে ঢুকবে পুলিশকে তাকে গুলি করার অধিকার দিতে হবে।'
মুসলিমদের জীবন পেট্রির অপছন্দ। তাঁর মেনিফেস্টোতে রয়েছে, ‘ইসলাম ইজ নট আ পার্ট অব জার্মানি’– অর্থাৎ, ইসলাম জার্মানির অংশ নয়। ইসলামের সাথে সম্পর্কিত যা কিছু, তাও জার্মানির চেতনার অংশ নয়।
পেট্রির প্রেরণা কে? তিনি নিজেই বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই যে ট্রাম্পকে কেন্দ্রে রেখে পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম বিরোধী নতুন জোয়ার, তার মাত্রা লক্ষ্যণীয়। তারা ইউরোপিয় ইউনিয়নকে সহ্য করছে না। এর প্রধান কারণ এর দ্বারা মুসলিম অভিবাসীরা সুবিধা পেতে পারে। ইউরোপ তো বরাবরই মুসলিম নিধন করে আসছে। কিন্তু এতে তারা সন্তুষ্ট নয়, তারা চায় আরো বেশি কিছু, আরো ভয়াবহ কিছু।
এরা আবার জনবিচ্ছিন্ন নয়। ইসলাম ভীতি ও রেসিজম দিয়ে ওরা জনগণের বৃহৎ এক অংশকে নিজেদের করে নিচ্ছে। শুরু করেছে নতুন ঝড়। যাকে বলা হচ্ছে ট্রাম্পীয় প্রবণতা। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি তাই ইসলাম প্রশ্নে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি নিয়ে আসছে। যা বুশীয় হত্যাপদ্ধতির উপরও খুশি নয়।মুসলিম প্রশ্নে আরো নির্মম হতে আগ্রহী। আবার ইসলাম বিদ্বেষের ইউরোপময় জোয়ার ছড়িয়ে পড়ছে এর মাধ্যমে। যা অচিরেই ইসলাম বিদ্বেষী এক্টিভিটিসের বিশ্বায়নকে নিশ্চিত করতে চাইবে। এ প্রেক্ষাপটে সংকটের ভয়াবহতাকে মাথায় রেখে ট্রাম্পীয় প্রবণতাকে পাঠ করতে হবে। তার চাওয়ার মাঝে যা কিছু মুসলিমদের বিপন্ন করে, সে সম্পর্কে জাতিকে প্রজ্ঞাপূর্ণ ও ইসলামনির্দেশিত দিকনির্দেশনা প্রদান মুসলিম স্কলার ও বুদ্ধিজীবিদের দায়িত্ব।
জায়নবাদী থিঙ্কট্যাংক চাইবে বাস্তব চিত্র থেকে মুসলিমদের অন্ধকারে রাখতে। বুঝাতে চাইবে কিছুই হবে না, কিছুই হচ্ছে না। যাতে তারা সংকট সম্পর্কে সচেতন না থাকে এবং পরিস্থিতির প্রক্ষাপটে করণীয় সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যায়। এ অজ্ঞতার ফলশ্রুতিতে জন্ম নেয় হতাশা ও উন্মাদনা। জন্ম নেয় আইএস-জেএমবি।
মুসলিম বুদ্ধিজীবি তাই সংকটকে সংকট হিসেবে উপস্থাপন করবেন। তার মাত্রা ও প্রকৃতির আসল চিত্র উপস্থাপন। জাতিকে অন্ধ রাখা নয়, মানুষের চোখ ও চিন্তার গ্রন্থি খুলে দেয়া তার কাজ। জায়নবাদী থিঙ্কট্যাংক যেখানে অবিরত পর্দা লাগাতে চায়।
মুসা আল হাফিজ, কবি কলামিস্ট ও গবেষক