সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

সর্বোত্তম হালাল রিজিক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

Halalজাকের উল্লাহ আবুল খায়ের

জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য হালাল উপার্জনের কোনো বিকল্প নেই। রুজি-রোজগার ছাড়া দুনিয়ার জীবনে বেঁচে থাকা অসম্ভব। বেঁচে থাকার তাগিদে অবশ্যই আমাদের হালাল রুজির অন্বেষণ করতে হয়। ইসলামের নির্দেশনা হলো, সালাত আদায় করা, সাওম পালন করা এবং হজ করা যেমন ইবাদত, হালাল রুজি কামাই করাও অনুরূপ ইবাদত। সালাত, সাওম ও হজ করা যেমন ফরয, হালাল ও বৈধ পন্থায় কামাই-উপার্জন করাও ফরয। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘সালাত শেষ হওয়ার পর তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর ফযল (রিজিক) অন্বেষণ কর।’ [সুরা আল-জুমু‘আ, আয়াত : ৯]

মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তাআলা মানব জাতির জন্য জমিনে বিভিন্নভাবে রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে, ক্ষেত-খামার, চাকরি, ফল-মূল ইত্যাদির মানব জাতির রিজিকের ব্যবস্থার বিভিন্ন উপকরণ। এ সবের মাধ্যমেই মানুষ তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করে থাকে। আল্লাহ জমিন যেমন বিস্তৃত তার জমিনের কর্মেরও কোনো অভাব নেই। মানুষের ইচ্ছা ও আগ্রহ থাকলে সে অবশ্যই কোনো না কোনো কর্ম খুঁজে পাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর অবশ্যই আমরা তো তোমাদেরকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তোমাদের জন্য তাতে রেখেছি বিভিন্ন ধরণের জীবনোপকরণ। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞ হও।’ [সুরা আল-আরাফ, আয়াত : ১০]

আল্লাহর জমিনে কর্মক্ষেত্র আল্লাহ তা‘আলা মানুষের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। যে কোনো কর্মই হোক না কেন তা মানুষের হাতের নাগালেই। যাতে মানুষ সহজেই তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। আল্লাহর দেয়া সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিজিক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান।’ [সুরা মুলক, আয়াত : ১৫]

আয়াতে একটি কথা স্পষ্ট করা হয়েছে, দুনিয়াতে তুমি তোমার জীবন পরিচালনার জন্য যত কিছুই করো না কেন, এ দুনিয়াই তোমার শেষ ঠিকানা নয়। যত কামাই-রুজি করো না কেন, তা তোমার স্থায়ী কোনো সম্পদ নয়। তোমাকে অবশ্যই একদিন এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। আল্লাহর সামনে দাড়াতে হবে। সেদিন তোমাকে অবশ্যই তোমার কামাই-রুজি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আল্লাহর সামনে হিসাব দিতে হবে কোথায় থেকে উপার্জন করলে এবং কোথায় ব্যয় করলে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া কোনো বান্দা পা নাড়াতে পারবে না। তার মধ্যে একটি প্রশ্ন হলো, সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে।’

সুতরাং মনে রাখতে হবে, তোমার উপার্জিত সম্পদ কি বৈধ নাকি অবৈধ তার উত্তর তোমাকে অবশ্যই দিতে হবে। এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর তোমাকে দুনিয়াতে থাকতেই তৈরি করতে হবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা কোনটি হালাল আর কোন হারাম তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। হালাল খেতে নির্দেশ দিয়েছেন আর হারাম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসূলগণ, তোমরা পবিত্র ও ভালো বস্তু থেকে খাও এবং সৎকর্ম কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে সর্ম্পকে আমি সম্যক জ্ঞাত।’ [সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৫১]

হালাল উপার্জন ছাড়া হালাল ভক্ষণ কখনোই চিন্তা করা যায় না। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন জীবিকার অন্বেষণ ছেড়ে অলস বসে না থাকে।’  কুরআন এবং হাদীসের বিভিন্ন ভাষ্যে স্পষ্ট নির্দেশ করা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলার বন্দেগি করার পাশাপাশি নিজের জীবিকা উপার্জনের জন্যও বৈধ সব রকমের চেষ্টা করতে হবে। অব্যাহতভাবে সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। শুধু তাই নয়, বৈধ উপায়ে রুজির প্রচেষ্টাও ইবাদত। বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিজ হাতে উপার্জন করে যে খাদ্য গ্রহণ করা হয়, আল্লাহ তা‘আলার নিকট তার ছেয়ে প্রিয় খাদ্য আর কিছুই নয়।’

আল্লাহর এক প্রিয় নবী দাউদ আলাইহিস সালাম এ জন্য প্রশংসিত হন যে, তিনি তার নিজের হাতে কামাই করে খেতেন। কারো কামাই খেতেন না। হাদীসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিজ হাতে কামাই করে খাদ্য গ্রহণ করার চেয়ে উত্তম আর কোনো খাদ্য হতে পারে না। আল্লাহর নবী দাউদ আলাইহিস সালাম তিনি হাতের কামাই ছাড়া খাদ্য গ্রহণ করতে না।’

আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি আমাদের আদর্শ ও অনুকরণীয় তিনি নিজেও পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরাতেন। হালাল রুজি উপার্জনের জন্য তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন, ব্যবসায়ী কাজে বিভিন্ন দেশে-বিদেশে সফর করতেন।

এত বড় মর্যাদার অধিকারী হওয়া আল্লাহর প্রিয় বান্দা তথা নবীরা নিজ হাতে কামাই রুজি করা এবং কর্ম করাকে নিজেদের মর্যাদাহানি মনে করতেন না। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের উপর অর্পিত মহান দায়িত্ব-আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করা-পালন সত্ত্বেও তাদের কর্ম করা থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারে নি। তারা তাদের নিজ হাতে কামাই করতেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরাও বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। হালাল উপার্জনের প্রতি তাদের আগ্রহের কোনো কমতি ছিল না। তারা কখনোই বেকার বসে থাকতেন না। অন্যের বোঝা হয়ে থাকতেন না। মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইতেন না। ভিক্ষা চাওয়া খুবই ঘৃণিত কাজ। ভিক্ষা করা আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরুৎসাহিত করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কোনো লোক তার রশি নিয়ে বনে জঙ্গলে বা পাহাড়ে গিয়ে লাকড়ি সংগ্রহ করে, লাকড়ির বোঝা নিয়ে, নিজের প্রয়োজন মিটানো বা হালাল রুজি কামাই করার উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে বিক্রি করা মানুষের ধারে ধারে ভিক্ষা করা (কেউ তাকে দিল আবার কেউ না করল)-এর চেয়ে অধিক উত্তম।’

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য বিভিন্ন ধরণের কর্মস্থলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এ গুলোকে কাজে লাগিয়ে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারি। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারি। যা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানেই উপকারে আসবে।

(সংক্ষেপিত)

কৃতজ্ঞতায় :  ইসলাম হাউজ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ