সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

হাদিস বিশারদ আল্লামা সালিমুল্লাহ খানকে নিয়ে দু’কলম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
দেওবন্দ, ভারত থেকে

salimullah_khanউপমহাদেশের খ্যাতনামা হাদিসবিশারদ শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানি রহ.-এর অন্যতম ছাত্র পাকিস্তানের মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাওলানা সালিমুল্লাহ খান ইন্তেকাল করেছেন রোববার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে দশটায়।
১৯২৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগর জেলার প্রসিদ্ধ উপশহর হাসানপুর লৌহরিতে শাইখুল হাদিস হজরত মাওলানা সালিমুল্লাহ খানের জন্ম৷ ৯০ বছরের এই জীবনে তার রয়েছে বহু সুনাম-সুকীর্তি ও বর্ণাঢ্য কর্ম৷

তার শিক্ষাজীবন আরম্ভ হয় হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি রহ.-এর খলিফা হজরত মাওলানা মাসিহুল্লাহ খান রহ.-এর মাদরাসা মিফতাহুল উলুম জালালাবাদে৷ এরপর ১৯৪২ থেকে ১৯৪৭ সাল অবধি হাদিস, তাফসিরসহ নানা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন বিশ্বখ্যাত ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে৷

দেওবন্দ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ফিরে যান নিজ এলাকায়৷ যোগ দেন কর্মজীবনে৷ আরম্ভ করেন অধ্যাপনা৷ নিজ উস্তাদ হজরত মাসিহুল্লাহ খান রহ.-এর মাদরাসা মিফতাহুল উলুমে লেগে যান যথারীতি৷ টানা আটটে বছর মেহনত করে গড়েন হাজারো ছাত্র, তরুণপ্রতিভা৷ পাকিস্তানের বিশ্বখ্যাত আলেমেদীন ও বিচারপতি শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানির মতো ব্যক্তিরা তার ছাত্র হিসেবে গর্ববোধ করেন৷

এরপর শাইখুল ইসলাম হজরত মাওলানা শিব্বির আহমদ উসমানি রহ. প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের সিন্ধ এলাকার কেন্দ্রীয় ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম টাণ্ডোলা ইয়ারে নিয়ে আসা হয় তাকে৷ এখানে তিন বছর অধ্যাপনার কাজে নিয়োজিত থাকার পর তিনি পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ ও সবচে বড় ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম করাচির অধ্যাপনায় যোগ দেন৷ আর এখানেই তিনি একনাগাড়ে দশবছর ধরে হাদিস, ফিকহ, তাফসির, দর্শন, ইতিহাস ও আরবিসাহিত্যের পাঠদান করেন৷ এ সময়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও তিনি একটি বছর পাকিস্তানের তখনকার সময়ের প্রসিদ্ধ আলেম হজরত মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ বানুরির মাদরাসা করাচির বানুরি শহরের জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করেন৷

পাকিস্তান এসে আর ফিরে যাননি মাতৃভূূমি ভারতে৷ অপরকে জ্ঞান দান ও নিজে জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে তার আগ্রহ ছিলো প্রবল৷ এতো বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনার কাজে নিয়োজিত থাকার পরও তিনি সদা ভাবতেন আরও নতুন কিছু নিয়ে৷ সেই ধারায়ই ১৯৬৭ সালের ২৩ জানুয়ারি মোতাবিক ১৩৮৭ হিজরির শাওয়াল মাসে পাকিস্তানের করাচিতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘জামিয়া ফারুকিয়া' নামে বিখ্যাত ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান৷ সেই থেকে আজ অবধি তার এই নিরলস ও একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটি সাফল্যের শীর্ষ চূড়ার মুখ দেখেছে৷

শাইখুল হাদিস হজরত মাওলানা সালিমুল্লাহ খান ছিলেন প্রখর মেধা, দূরদর্শী চিন্তা ও অস্বাভাবিক বিচক্ষণতার অধিকারী৷ সেজন্যই ১৯৮০ সালে পাকিস্তানের মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তান'-এর প্রধান শিক্ষাসচিবের দায়িত্বে নিয়োজিত হন তিনি৷ দায়িত্ব লাভের পর তিনি পাকিস্তানের মাদরাসাসমূহের শিক্ষা, চরিত্র ও শিষ্টাচারগত যে উন্নতি এবং শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে যে পদক্ষেপ আঞ্জাম দিয়েছেন, তা পাকিস্তানের ইতিহাসে বিরল, উপমাহীন৷ তার হাত ধরেই বিশ্বমানের শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি লাভ করে পাকিস্তানের মাদরাসা শিক্ষার্থীরা৷ ধর্মীয় শিক্ষা সনদের মান এমএ, বিএ, ইন্টারমিডিয়েট, মডেল, প্রাইমারির সমমানে দেয়া আরম্ভ হয়৷ আজ অবধি তা পূর্ণ বহাল রয়েছে৷

এমনকি প্রথমদিকে এই শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দেশটির হাতেগোনা কয়েকটি মাদরাসা সংযুক্ত ছিলো৷ এছাড়াও হাজারো মাদরাসা ছিলো এই বোর্ডের বাইরে৷ সেগুলির বহু মাদরাসাকেই তিনি নিজ কর্ম দক্ষতায় বোর্ডের অধীনে আনতে সক্ষম হন৷ ফলে ২০০৭ সাল অবধি এই শিক্ষা বোর্ডে সংযুক্ত হয় পনেরো হাজারেরও অধিক মাদরাসা৷ এ কারণেই আজ পাকিস্তানের অন্যতম একটি ধর্মীয় প্লাটফর্ম হিসেবে ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তান'কেই সারা দেশে গণ্য করা হয়৷ ফলে পুরো পাকিস্তানেই একই সিলেবাসে সমস্ত মাদরাসা পরিচালিত হয়৷ তার এমন সাফল্যপূর্ণ মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দেবার ফলে ১৯৮৯ সালে বোর্ডটির সদর হিসেবে ঘোষণা করা হয় তাকে৷ ইন্তেকালের পূর্ব অবধি তিনি পূর্ণ দক্ষতার সঙ্গে অধ্যাপনার পাশাপাশি বোর্ডটির চেয়ারম্যান হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছিলেন৷

 শাইখুল হাদিস হজরত মাওলানা সালিমুল্লাহ খান ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ হাদিসের উস্তাদদের অন্যতম একজন৷ তার প্রতিটা ক্লাসেই শিক্ষার্থীরা লুফে নেবার অপেক্ষায় থাকতো তার অপরিসীম জ্ঞানভাণ্ডার৷ তিনি উর্দু, আরবি ভাষা-সাহিত্যের অন্যতম একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তিও ছিলেন৷ গেলো বছর কয়েক ধরে তার ভাষণ, বয়ান, পাঠদানের রেকর্ড ও শ্রুতলিখনের কাজ চলছিলো৷ প্রসিদ্ধ হাদিসগ্রন্থ বোখারি শরিফের ওপর লেখা তার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘কাশফুল বারি' ও মিশকাতুল মাসাবিহের ওপর লেখা ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘নাফহাতুন তানকিহ' চিরদিন অমর হয়ে থাকবে হাদিস অন্বেষী শিক্ষার্থীমহলে৷
আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ