প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায়। এই বিপুল সংখ্যক লোকের সমাবেশ সফল করে তুলতে ও এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় তাবলিগ জামাতের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের ভূমিকা যেমন থাকে, তেমনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও থাকে ব্যাপক অবদান ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। এমতাবস্থায় এবারের ইজতেমা সম্পর্কে তারা কী অনুভূতি ও অভিমত ব্যক্ত করেন, তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাক বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। সেখানে জনপ্রতিনিধিদের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন দৈনিকটির গাজীপুর প্রতিনিধি মুজিবুর রহমান ও টঙ্গী প্রতিনিধি কাজী রফিক। ইত্তেফাকের সূত্রে সাক্ষাৎকারগুলো আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ায় আমরা গর্বিত
আকম মোজাম্মেল হক
মন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশে বিশেষ করে গাজীপুরের টঙ্গীতে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ধর্মীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় বলে আমরা গর্ববোধ করি। এ বিশ্ব ইজতেমার কল্যাণে সারা বিশ্বের লোকজন টঙ্গী ও গাজীপুরকে চেনেন। মুসলিম জাহানের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সঙ্গে একত্রে এ ইজতেমায় অংশগ্রহণ করে আমরা যেমন ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হই, তেমনি এই সম্মিলন আমাদের মধ্যেও আত্মিক একাত্ববোধের জন্ম দেয়। টঙ্গীতে ইজতেমা শুরুর পর থেকে যতই দিন যাচ্ছে, ততই এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষ থেকে ইজতেমার সমগ্রিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইজতেমাস্থলে আসা যাওয়ার সুবিধার্থে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও সংস্কার, যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদারকরণ, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, মুসুল্লীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করাসহ বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, মান সম্মত শৌচাগার নির্মাণ, সার্বক্ষণিক বিদ্যুত্ সরবরাহ, বিদেশি নিবাসস্থলে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া মুসল্লিদের পারাপারের জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যদের সাহায্যে তুরাগ নদে ৮টি ভাসমান পন্টুন ব্রিজ স্থাপন করা হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমা সর্বাঙ্গীন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে নিদের্শনা অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যে কোন নাশকতা রোধে এ বছর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে। এ জন্য বিভিন্ন আইন শৃংখলা বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। সরকার দায়িত্ব হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ব ইজতেমায় বিপুল সংখ্যক মুসল্লির আগমনের কারণে তাদের দুর্ভোগ লাঘবে ইজতেমা কর্তৃপক্ষ দু’পর্বে ৩২টি জেলার মুসল্লিদের ইজতেমা আয়োজনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে আমরা সন্তুষ্ট। এবার ইজতেমার আয়োজন আরো নির্বিঘ্ন হবে বলে আমরা আশা করি।
ইজতেমায় দায়িত্বপালন ছিল আমার জীবনের পরম সৌভাগ্য
আলহাজ্ব হাসান উদ্দিন সরকার
সাবেক টঙ্গী পৌরসভার প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক এমপি ও বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য
আমরা বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের শুভেচ্ছা জানাই। ১৯৬৬ সালের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরী সংলগ্ন পাগারে স্বল্পপরিসরে ইজতেমা শুরুর পর এর পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় টঙ্গীর তুরাগ নদীর পূর্ব তীরে ইজতেমার আয়োজন করা হয়। এর পর থেকে দীর্ঘ ৫০ বছর যাবত্ এটি বর্তমান স্থানে অনুষ্ঠিত হয়ে হয়ে আসছে। টঙ্গীতে বিশ্ব মুসলিম জাহানের এ দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত অনুষ্ঠিত হওয়াকে আমরা গর্ব ও গৌরবের মনে করি। বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এর আয়োজনের সঙ্গে আমার অংশগ্রহণকে আমার জীবনের পরম সৌভাগ্য বলে মনে করি। সে সময় আমি ইজতেমার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি। বিএনপি সরকারও এর উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। তবে যেভাবে ইজতেমার পরিসর বা ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে কারণে এর উন্নয়নে আরো অনেক কিছু করার আছে বলে আমরা মনে করি। বর্তমান সরকারও এর উন্নয়নে যথেষ্ট কাজ করে যাচ্ছে। আমরা টঙ্গীবাসীরা ইজতেমায় আগত দেশি-বিদেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মেহমান মনে করে তাদের টঙ্গীতে স্বাগত জানাই।
ইজতেমা যাতে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় সে জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি বিশ্ব ইজতেমার সাফল্য কামনা করি এবং ইজতেমায় আগত সকল মুসল্লিকে আবারও শুভেচ্ছা জানাই।
এই এলাকার মানুষ মুসল্লিদের সেবা করতে পেরে ধন্য
মো. জাহিদ আহসান রাসেল
সংসদ সদস্য, গাজীপুর-২
প্রতিবারের ন্যায় এবারও ৫২তম বিশ্ব ইজতেমায় আগত সকল মুসল্লিকে টঙ্গী ও গাজীপুরবাসীর পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আমার বিশ্বাস, আমার এলাকার সাধারণ মানুষ ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের প্রতিবারই সেবা করতে পেরে ধন্য। এবারও তার ব্যত্যয় হবে না। দুই পর্বে অনুষ্ঠিত ইজতেমার ময়দানসহ টঙ্গী— উত্তরা আশপাশের এলাকায় মুসল্লিদের ঢল নামে। এতে করে ইজতেমায় আগত মুসল্লি ও আল্লাহর মেহমানদের সেবা করতে পেরে আমি ও আমার এলাকার মানুষ আমাদের ভাগ্যবান মনে করি। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ইজতেমা ময়দানের দুইপাশে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে একাধিক গোসলখানা, ওযুখানাসহ বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা ইজতেমা চলাকালিন মুসল্লিদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়ে থাকি। বরাবরই মুসল্লিদের চিকিত্সার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিত্সক রাখা হয়। টঙ্গী ৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালকে ইজতেমা চলাকালীন সময়ে ১০০শয্যা ও অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা ৬টি মেডিকেল টিম এবং মুসল্লিদের দ্রুত সেবা প্রদানে ১৪টি এ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক রাখা হয়েছে। প্রতিবারই ইজতেমায় বিপুল সংখ্যাক আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য পুরো ইজতেমা ময়দানকে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে রাখেন। ইজতেমা শুরুর আগে থেকে আমি স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করি এবং ইজতেমা সফল করতে মুসুল্লিদের সকল প্রকার নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ প্রদান করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করি, এবারের ৫২তম বিশ্ব ইজতেমা প্রতিবারের ন্যায় সফল হোক।
বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে চাই সকলের সহযোগিতা
মো. আসাদুর রহমান কিরন
ভারপ্রাপ্ত মেয়র, গাজীপুর সিটি করপোরেশন
আমি প্রথমেই ২০১৭ সালের এবারের ৫২তম বিশ্ব ইজতেমায় আগত সকল মুসল্লিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাই। প্রতিবারের ন্যায় এবারও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ময়দানের আশেপাশে জীবাণু প্রতিরোধে ১শ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার দেয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ময়দানের চারপাশে নির্মাণ করা হয়েছে ১০টি তোরণ। ইতোমধ্যে ময়দানের আশেপাশে ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয়পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ইজতেমা চলাকালীন সিনেমা হলগুলো বন্ধ ও দেয়ালে সাঁটানো অশ্লীল পোস্টার অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সময়ে সার্বিক যোগাযোগের জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ময়দানের মশক নিধনের জন্য ২৪টি ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশন ১২টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন ঘণ্টায় ৩ কোটি ৫৫ লাখ গ্যালন সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। ইজতেমা ময়দানের চারপাশের সড়কগুলোতে ১১টি পানির গাড়ি দিয়ে পানি ছিটানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাতে করে ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা ধুলাবালির সমস্যায় না পড়েন। ইজতেমা চলাকালিন ২৫টি গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে দিনরাত বর্জ্য অপসারন কার্যক্রম নিশ্চিত করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের ফ্রি চিকিত্সা প্রদান করতে ময়দানের পাশে মুন্নু গেইটের একটি মাঠে শতাধিক সরকারি-বেসরকারি ফ্রি চিকিত্সা প্যান্ডেল তৈরি করে দেয়া হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরের জনগনের পক্ষ থেকে এবারের ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার সফলতা ও এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করি।
আরআর