মাওলানা আশিকুল ইসলাম খান
আলেম, লেখক
ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম চির মুক্তির ধর্ম। ইসলাম চির সাম্যের ধর্ম। ইসলাম মানুষকে শেখায় মানবতা ইসলাম। মানুষকে শেখায় উদারতা। ইসলামি জীবন ব্যাবস্থায় রয়েছে প্রতিটি ব্যক্তির ইহকালীন শান্তি ও পরকালিন মুক্তি। সমগ্র বিশ্ব মানবের হেদায়াতের জন্য ইসলামই একমাত্র অাল্লাহ কর্তৃক মনোনীত ধর্ম।
ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে, সমাজ ব্যবস্থার প্রতিটি ধাপে, রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি পদক্ষেপেই রয়েছে ইসলামি দিক দর্শন। যার অনুসরনই পারে একমাত্র ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিসৃঙ্খলা মুক্ত সুচারু রূপে পরিচালনা করতে। অার এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপকভাবে ইসলামি শিক্ষা বিস্তার পাশাপাশি ইসলামি মূল্যবোধ ও ইসলামি চেতনার বীজ মানুষের অন্তরে গ্রোথিত করা। যেখান থেকে ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অঙ্কুরিত হবে ইসলামি সৌন্দর্য।
অধুনা সমগ্র বিশ্ব জুড়ে চলছে ইসলাম ও মুসলমানদেদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত। ইহুদি, খৃস্টান ও তাদের দালালালদের ইমান বিনাশী হিংস্র থাবায় জর্জরিত মুসলিম বিশ্ব। সেই হিংস্র থাবার নখরাচর থেকে মুক্ত নয় অামাদের এই বঙ্গভূমিও।
বিশ্ব মুসলিম সভ্যতার এই নাযুক মুহূর্তে গা ভাসিয়ে দেয়নি উলামায়ে কেরাম ও সচেতন মুসলিম জনতা। অাকড়ে ধরে অাছেন ‘মা অানা অালাইহি ওয়া অাসহাবিহী’ এর পথ নির্দেশনা। ব্যাপৃত রয়েছে পথভুলা বিভ্রান্ত জাতিকে ইসলামি সভ্যতায় অালোকিত করার প্রচেষ্টায়। অার তারই ধারাবাহিকতার অন্যতম একটি হলো ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে মানুষের দ্বারে দ্বারে ইসলামি মর্মবাণীকে পৌঁছে দেওয়া। অার এই মেহনতের ফলেই অাজ জাতির এই ক্রান্তিলগ্নেও বাংলার প্রতিটি অজপাড়া গাঁয়েও পাঁচ ওয়াক্ত ধ্বনিত হয় অাজানের শব্দমালা। টিকে অাছে মুসলিম নারীদের হেজাব,বোরকা। এই মেহনেতের প্রচেষ্টার ফলেই অাজ অবদি এ বাংলার অাপামর জন সাধারণ তাদের হৃদয়ে লালন করছে মুসলিম চেতনাকে। যে বাংলায় কিছুদিন অাগেও ঘটা করে অায়োজন করা হতো যাত্রাপালাসহ সব ধরনের অনৈসলামিক অনুষ্ঠানাদির অালহামদুলিল্লাহ এই মেহনতের ফলে সেই সব অনৈসলামিক অনুষ্ঠানাদি প্রায় বিলুপ্তের পথে। যে অঞ্চলে পুথি পাঠ বা যাত্রাপালাকে কেন্দ্র করে গ্রামের সমস্ত মানুষ একিভূত হতো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতো অাজ তারা একটি ইসলামি মাহফিল বাস্তবায়নের জন্যে অনুরূপ সমবেত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে। ভেদাভেদ ভুল। গিয়ে সকলে একই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে এই মহতি কাজের অাঞ্জাম দেয়।
ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে মানুষের দ্বারে দ্বারে ইসলামি মর্মবাণীকে পৌঁছে দেওয়া। অার এই মেহনতের ফলেই অাজ জাতির এই ক্রান্তিলগ্নেও বাংলার প্রতিটি অজপাড়া গাঁয়েও পাঁচ ওয়াক্ত ধ্বনিত হয় অাজানের শব্দমালা। টিকে অাছে মুসলিম নারীদের হেজাব,বোরকা।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো কালক্রমে এসমস্ত ইসলামি মাহফিলগুলো হারিয়ে ফেলছে তাদের প্রকৃত সৌন্দর্য এবং এর অায়োজকরাও দূরে সরে যাচ্ছে তাদের মূল উদ্দেশ্য থেকে। যার কারণে প্রতিটি অঞ্চলেই ক্রমাগত বেড়েই চলছে এ জাতীয় মাহফিলের সংখ্যা কিন্তু বাড়ছে না মসজিদে নামাজির সংখ্যা। কমছে না সমাজে পাপাচার অার অন্যায় অবিচারের ক্রমবর্ধমানতা।
কবি বলেছিলেন
রয়ে গেছে অাজো অাজানের প্রচলন
তবে বাকি নেই বেলালের রুহানিয়াত
দর্শন শাস্ত্র ঠিকই অাছে
ছুটে গেছে গাজালীর নীতি কথন।
তদ্রুপ বর্তমানে ওয়াজ মাহফিলের প্রচলন অাছে তবে সবক্ষেত্রে পূর্বের সেই রুহানিয়াত নেই। যার কারণে অাজ মানুষ দ্বীনের কথা শুনছে ঠিকই কিন্তু তদানুযায়ী অামল নেই কারো। ফলে রাতভর বয়ান শোনার পরও ফজরের নামাজে মসজিদ থাকে মুসল্লিশূন্য।
অার এই মাহফিলগুলো তার প্রকৃত অবস্থান থেকে ক্রমেই যে দূরে সরে যাচ্ছে এটা কারো ব্যক্তি গত অবহেলার কারণে নয় বরং এর মাঝে যেমন অায়োজকদের অংশ রয়েছে তেমনি শত্রুতা ও বক্তাদেরও অংশ রয়েছে। অায়োজকরা যেমন পূর্ব পুরুষরা করে অাসছে এখন নিজেরা না করলে কেমন দেখায় বা সব যায়গায় হচ্ছে অামাদের এলাকাতে না হলে কেমন দেখায় এই ভাবনায় এ সমস্ত মাহফিলের অায়োজন করে তদ্রুপ শ্রোতারাও অাসে তাদের চিত্ত বিনোদনের জন্য। কুরঅান হাদীসের কথা শুনান জন্য নয়। অার এই সুযোগে কিছু অসাধু অল্প বিদ্যার ব্যক্তি কুরঅান হাদিসের কথা বাদ দিয়ে কিস্সা কাহিনী বানিয়ে সুরের মোহনায় মূর্ছিত করে মানুষকে নিজেদের দিকে অাকৃষ্ট করে ইসলামি মাহফিলের প্রকৃত সৌন্দর্যগুলোকেই বিলিন করে দিচ্ছে।
অায়োজকরা যেমন পূর্ব পুরুষরা করে অাসছে এখন নিজেরা না করলে কেমন দেখায় বা সব যায়গায় হচ্ছে অামাদের এলাকাতে না হলে কেমন দেখায় এই ভাবনায় এ সমস্ত মাহফিলের অায়োজন করে তদ্রুপ শ্রোতারাও অাসে তাদের চিত্ত বিনোদনের জন্য। কুরঅান হাদীসের কথা শুনান জন্য নয়।
তাদের কারণেই যে সমস্ত অালেম উলামা কুরঅান হাদিসের ভিত্তিতে কথা বলেন তাদের অবস্থান ও বয়ানের ক্ষেত্রগুলোও ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে অাসছে। ফলে মানুষ বয়ান শুনছে ঠিকই কিন্তু কুরঅান হাদিসের নির্যাস থেকে বঞ্চিত রয়ে যাচ্ছে। অনতিবিলম্বে যার সংশোধন একান্ত অাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সংশোধন প্রক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে উলামায়ে হক্কানি নানা রকম পন্থা বর্ণনা করেছেন। যার সার হলো, প্রথমত যে সমস্ত বক্তা কুরঅান হাদিস ছেড়ে মনগড়া কিস্সা কাহিনী দিয়ে মানুষকে ভুলিয়ে রাখে ওই সকল অসাধু বক্তাদের বয়কট করা। দ্বিতীয়ত, যারা অায়োজক বা শ্রোতা তাদের নিয়তের বিশুদ্ধতা একান্ত অপরিহার্য। যার জন্য অাবশ্যক হলো তাদের মগজ ধোলাই। অার এব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে এলাকা ভিত্তিক প্রতিজন অালেমকে এবং নেতৃত্বে থাকতে হবে মসজিদের ইমাম সাহেবদের। কেননা বর্তমানে অামাদের দেশে মাহফিলগুলো ঋতু কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। যার ফলে বছরের কোন একটা সময় মাহফিলের ধুম লেগে যায় অার সারা বছর অার কোন খবর নেই।
সে ক্ষেত্রে তারা সপ্তাহিক শুক্রবার জুমার নামাযে মসজিদে খতিব সাহেবদের থেকে নানা ধরনের নসিহতমূলক কথা শুনে। অার সেখানেই তাদের মগজ ধোলাই করে তাদের ধ্যান ধারণাকে পরিবর্তন করে সহীহ চিন্তা ধারণায় তাদের প্রভাবিত করতে হবে। এই ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে ইনশাঅাল্লাহ এই সমস্ত ওয়াজ মাহফিল হারানো সৌন্দর্য কে ফিরে পাবে। জাতি তাদের পথ চলার জন্য কুরঅান হাদিস ভিত্তিক পথনির্দেশনা পাবে। অাল্লাহ অামাদের সকলকে তৌফিক দান করুন।
আরআর