মুফতী তাজূল ইসলাম জালালী
ইমাম ও মাদরাসা শিক্ষক
দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ নতুন কোন বিষয় নয় বরং বহু পুরনো। সত্যের পথ হারা মানবগুষ্ঠিকে সৎপথের সন্ধান দিতে মহান আল্লাহপাক যুগে যুগে ধরাধমে পাঠিয়েছেন অসংখ্য নবী ও রাসূল। আল্লাহ পাকের দেওয়া নীতিমালা অনুসরণ করে নবী-রাসূলগণ মানবজাতিকে সৎপথের সন্ধান দেওয়ার যে দায়িত্ব পালন করেছেন এটাই মূলত দাওয়াত ও তাবলীগ।
প্রায় ২লাখ ২৪ হাজার পয়গাম্বরের পর মহান আল্লাহ দাওয়াত ও তাবলীগের মহান দায়িত্ব দিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবীর উপরে। বলেছেন, হে রাসূল সা. আপনার উপর অবতীর্ণ বিষয়ে আপনি তাবলীগ করুন (দাওয়াত প্রচার করুন)। সূরা মায়িদাহ: ৬৭
জীবন সায়াহ্নে নবীজি সা. এ গুরুদায়িত্ব উম্মতে হাতে তুলে দিয়ে যান। এই মর্মে নবীজি সা. বলেন, আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও তাবলীগ (প্রচার) কর (আল-হাদীস)। এই একই কাজে এক এক নবীর কর্ম কৌশল ছিল এক এক ধরনের। ছাহাবায়েকিরামের ইতিহাস থেকেও এমনটিই দেখা গেছে।
পৃথিবীর বহু বিষয়ে এনটিই দেখা যায় যে একই কাজ ভিন্ন ভিন্ন কর্মকৌশলের মাধ্যমে আদায় বা বাস্তবায়ন করা হয়। উদ্দেশ্য ঠিক রেখে কৌশলের ভিন্নতা হলে একে বিদআত বলে না। নবীওয়ালা কাজকে আরও সুচারুরূপে সহজে কার্যকরী করার এক কৌশলের রূপ হল আজকের সমাজের তাবলীগ জামাত। এটা ধর্মের নামে নতুন কিছু আবিষ্কার নয়-যা বিদআত বরং এটা ধর্ম প্রচারের এক নতুন কৌশল মাত্র-যা বিদআত নয়। আর এর রুপকার হলেন যুগশ্রেষ্ঠ মহা সাধক, দারুল উলুম দেওবন্দের কৃতিসন্তান হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.।
হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. জন্মগ্রহণ করেন ভারতের কান্ধল পল্লীতে। এই এলাকায়ই অল্প পরিসরে সামান্য কিছু নীতিমালার মাধ্যমে ১৯২৬ সনে এই সিলসিলা বা দাওয়াতের কৌশল চালু হয়। ধীরে ধীরে এর পরিধি বাড়তে থাকে। ছড়িয়ে পড়তে থাকে এই দাওয়াতি কাজ আশপাশের দেশগুলোতেও। এক সময় বাংলাদেশে এসে পৌঁছে এই দাওয়াতি কৌশল। সুন্দর তরতীবের এ কার্যকরী দাওয়াতি তরিকা অল্প দিনেই লাখো মুমিনের হৃদয় কাড়তে সামর্থ হয়। প্রয়োজন দেখা দেয় অতীত কাজের হিসাব-নিকাশ ও আগামীর পরিকল্পনা বাস্ত বায়নে একত্রিত হয়ে মত বিনিময় করার।
বিবেধ ভুলিয়ে ঐক্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই তাবলীগ জামাত। নিন্দুকেরাই যেন এই কাজের অগ্র নায়ক বনে যান এই কামনা করি
এই একত্রিত হওয়াকেই আরবিতে ইজতিমা বলে। বংলাদেশে প্রথম ইজতিমা হয় ১৯৪৬ সালে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে। দ্বিতীয় ইজতিমা হয় ২ বছর পর ১৯৪৮ সালে চিটাগাং হাজী ক্যাম্পে। তৃতীয় ইজতিমা হয় ১০বছর পর১৯৫৮ সালে নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। চতুর্থ ইজতিমা হয় ৮ বছর পর ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীতে। এর পর ১৯৬৭ সাল থেকে শুরু করে আজও প্রতি বছর টঙ্গীতে একই স্থানে ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
কালক্রমে এই ইজতিমা এক সময় বিশ্ব ইতিমায় রুপ নেয়। এখন এই বিশ্ব ইজতিমা মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় জমায়েত। এই ইজতিমায় ৩০ থেতে ৪০ লাখলোকের সমাগম ঘটে। সাড়া বিশের¦ প্রায় সব দেশথেকেই মুমিনেরা এখানে সমবেত হন। এর বিষেশ আকর্ষণ আখেরি মুনাজাত। আখেরি মুনাজাতে অংশনিতে উল্লেখযোগ্য নারীসহ আরও তিন চার লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটে এই ইজতিমায়।
তাবলীগ ও ইজতিমা সব মিলিয়ে ইসলাম ও ঈমানের দাওয়াতের এই কৌশলের জোয়ার আজ সাড়া বিশ্বের আনাচে কানাচে। বিবেধ ভুলিয়ে ঐক্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই তাবলীগ জামাত। নিন্দুকেরাই যেন এই কাজের অগ্র নায়ক বনে যান এই কামনা করি। আমরন একাজে নিজেকে উৎস্বর্গ করার তৌফিক চাই প্রভুর দরবারে।
আরআর