মুফতি দিদার শফিক:প্রেমেই নারীর জান্নাত লাভ। আল্লাহ-রাসুলের প্রেমে ও স্বামীর আনুগত্যে ভালবাসার পুষ্পিত উদ্যান আছে যে নারীর ,সে নারী জান্নাতি ।
সংসার নারীকে অপদস্থ নয়, সম্মানী করে তোলে। সংসারে স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের পরিপূরক। স্বামী দেয় অর্থের জোগান। স্ত্রী সামলায় ঘর। বউ সে তো গৃহের পিদিম।
চলার পথে সব বিষয়েই একে অন্যের কল্যাণকামী। উভয়েরই কাঁধে অর্পিত আছে কিছু দায়িত্ব। যা অবশ্য পালনীয়। দাম্পত্য জীবন যে শুধু কর্তব্য পালনের বিষয়টি এমন নয়, এতে আছে প্রেম-ভালবাসা ও শ্রদ্ধার শুদ্ধতম অনুশীলন। এ অনুশীলনে যারা এগিয়ে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ায় সুখময় জীবন। আখেরাতে চির শান্তির আবাস জান্নাত।
অবৈধ প্রেমে মানুষ ধ্বংস হয়,বৈধ প্রেমে পায় জান্নাত। বৈবাহিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর প্রেমের সূত্র ধরে নারী পায় জান্নাত লাভের সনদ। জান্নাতের সনদপ্রাপ্ত নারী কারা? প্রেম-ভালবাসা আর বৈধ আনুগত্যে যে নারী স্বামীর হৃদয়ে নিজের আসন করে নিতে সক্ষম হয়, সে নারীই শ্রেষ্ঠ নারী। শ্রেষ্ঠ প্রেমিকা । আল্লাহ ও রাসুলের প্রিয় পাত্রী। প্রেমময়ী জান্নাতি নারীর বিবরণে আল্লাহ বলেন,‘পূণ্যবতী রমণীগণ আনুগত্য করে এবং আল্লাহ যা সংরক্ষণযোগ্য করে দিয়েছেন সে বিষয়ের সংরক্ষণ করে।সুরা নিসা: ৩৪
কুরআনের বিখ্যাত ভাষ্যকার আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, নেককার নারীগণ স্বামী অনুগতা হয়। , আয়াতের শেষাংশের ব্যাখ্যায় আল্লামা সুদ্দী বলেন, স্বামীর অনুপস্থিতে স্ত্রী নিজের ইজ্জতের সংরক্ষণ করবে এবং স্বামীর সম্পদ হেফাযত করবে।
আবদুর রহমান বিন আউফ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি সা. বলেছেন,‘মুসলিম নারী যদি যথাযথভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে , রমজানের রোজা পালন করে, নিজের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে,তখন সে ই নারীকে বলা হবে তুমি জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছে ভেতরে প্রবেশ কর।”
আনাস বিন মলেক রা. থেকে বর্ণিত, নবি সা.বলেছেন, “কোন ধরণের রমণী জান্নাতি আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব না? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, তোমাদের জান্নাতি নারীরা স্বামীর প্রতি প্রেমময়ী, এবং অধিক সন্তান প্রসবকারীনী।
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি সা. কে প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসুল! কোন শ্রেণীর নারী সর্বোত্তম? তিনি বলেন, “তার পরিচয় হচ্ছে তুমি তার দিকে তাকালে সে তোমাকে আনন্দিত করবে, কোন নির্দেশ দিলে তা বাস্তবায়ন করবে। তার নিজের ব্যাপারে এবং স্বামীর সম্পদের ব্যাপারে স্বামীর অপছন্দনীয় কাজ করে স্বামীর বিরোধিতা করবে না। ’
অন্য বর্ণনায় এসেছে, একদা নবি সা. ওমর রা.কে লক্ষ্য করে বললেন,
“আমি কি তোমাকে মানুষের আকর্ষণীয় শ্রেষ্ঠ গুপ্তধন সম্পর্কে বলে দিব না? তা হচ্ছে, নেককার স্ত্রী।স্বামী তার দিকে তাকালে সে তাকে মুগ্ধ করে, কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং স্বামী কাছে না থাকলে নিজের ইজ্জত-আবরু রক্ষা করে।”
উপর্যুক্ত কুরআনের আয়াত ও নবি সা. এর হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় নেক আমলের পাশাপাশি স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর জান্নাত লাভের অন্যতম কারণ।
ভালবাসা আনন্দের। প্রাপ্তি ও ত্যাগের। স্বামীর ভালবাসায় নারীর আছে প্রাপ্তি; আছে ত্যাগ। আর এই ত্যাগরে মধ্যদিয়েই হয়ে ওঠে জান্নাতি নারী। স্বামীর সেবায় নারীর জান্নাত প্রাপ্তির পথ সুগম হয়।
হোসাইন বিন মিহসান রা. বলেন, আমার ফুফু আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। একদা তিনি নবি সা.এর কাছে কোন প্রয়োজনে গিয়েছিলেন। প্রয়োজন শেষ হলে নবি সা. তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কি স্বামী আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তার জন্য তুমি কেমন স্ত্রী? আমি বললাম, একান্ত অপারগ না হলে তার খেদমত করতে কোন ত্রুটি করি না। তিনি বললেন, ভালভাবে খেয়াল রাখবে, তুমি তার কেমন খেদমত করে থাক। কেননা সেই তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।”
অর্থাৎ- তার আনুগত্য ও খেদমত করলে জান্নাতে যাবে আর অবাধ্য হলে জাহান্নামে যাবে।
উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি সা. বলেছেন, ‘ স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন করে যে স্ত্রী মারা যায় সে স্ত্রী জান্নাতে প্রবেশ করবে। ’
নারীবাদীদের মিথ্যে বুলিতে প্রতারিত না হয়ে, প্রেমের পাপড়ি যেখানে-সেখানে মেলে না ধরে, কুরআন-হাদিসের আলোকে নারী দাম্পত্য জীবনে প্রেমময়ী হয়ে ওঠলে তার দুনিয়া-আখেরাত সবই ঈর্ষণীয় হয়ে ওঠে। জীবন হয় সুখের।
ডিএস