সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

'থার্টি ফাস্ট নাইট' চরিত্র বিধ্বংসী উৎসব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আমিনুল ইসলাম হুসাইনী

tharti_night_date_tarikh৩১ ডিসেম্বর রাত ১২.০১ মিনিটকে 'থার্টি ফাস্ট নাইট' নামে অভিহিত করা হয়। আমরা এটাকে ইংরেজি নববর্ষ হিসেবে জানলেও মূলত তা ইংরেজি নববর্ষ নয়, বরং এটা খৃস্ট্রীয় বা গ্রেগরিয়ান নববর্ষ। যার সাথে মিশে আছে খ্রিস্টানদের ধর্ম ও সংস্কৃতি। এর নামকরণও করা হয়েছে খ্রিস্টানদের ধর্মযাজক পোপ গ্রেগরিয়ানের নামানুসারে। ঐতিহাসিকগণ বলেন, খৃষ্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ১ জানুয়ারিতে নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করে। পরে তা ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মীয় ও দেশজ সংস্কৃতি নিজ নিজ ধর্ম ও দেশের মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এটাই স্বাভাবিক ও যৌক্তিক দাবি।

বেশ ধুমধামের সাথে অন্য ধর্মের প্রথা বা বিদেশি সংস্কৃতি উদযাপন নিজ ধর্ম ও দেশজ সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞতা ও উদাসীনতা প্রকাশ করে। এটা কিছুতেই কাম্য নয়।'থার্টি ফাস্ট নাইট' উদযাপন দেশ ও ধর্মের উৎসব-সংস্কৃতির দেউলিয়াত্ব ঘোষণা করে। যা বাংলাদেশের নাগরিক ও মুসলিম হিসেবে আমাদের জন্য বড়ই লজ্জার বিষয়।

থার্টি ফাস্ট নাইট' উদযাপন ইসলামে বৈধ নয়। ইসলামি আইনবিদগণ একে হারাম বলে আখ্যায়িত করেন। অন্য ধর্মের সংস্কৃতি-উৎসব মুসলমানের জন্য উদযাপন করা জায়েয নেই। নিজ ধর্ম ও অন্যের ধর্মের কালচারকে ঘুলিয়ে একাকার করতে বারণ করা হয়েছে হাদিসে। নবী সা. বলেছেন,‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখে সে সেই জাতিরই অন্তর্ভুক্ত।’মিশকাত শরীফ:৪৩৪৭

অন্য ধর্মের সভ্যতা-সংস্কৃতি গ্রহণ না করার জন্য এ হাদিস মুসলমানদের অনুপ্রাণিত করেছে। আর গ্রহণ করলে মুসলমানিত্ব হারানোর হুশিয়ারিও প্রকাশ পেয়েছে উপর্যুক্ত হাদিসটিতে।

থার্টি ফাস্ট নাইট' উদযাপনের নামে তরুণ-তরুণীর অবাধ মেলামেশা, লিভটুগেদার, মদ-মাস্তি, গান-বাদ্য চলে রাতভর।এ উৎসবে অতীতে নারী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বহুবার।

থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করা ইসলামে নিষিদ্ধ হওয়ার সঙ্গত কারণও রয়েছে অনেক। সাধারণ বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও বলবে থার্টি ফাস্ট নাইট কোন কল্যাণ বয়ে আনে না। এতে কেবল অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাই সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে, ধর্ম পালন ও দেশজ সংস্কৃতি রক্ষার দাবিতেও থার্টি ফাস্ট নাইট পরিহারযোগ্য।

এ সংস্কৃতি উদযাপন করতে গিয়ে সম্প্রতি নির্লজ্জতা ও ছেলে-মেয়েদের বাড়াবাড়ি সবার নজরে পড়েছে। এমন অশ্লীলতা থেকে মেয়েদের সাবধান ও সতর্ক করেছে ইসলাম।থার্টি ফাস্ট নাইটকে কেন্দ্র করে রাতভর চলে অশালীন ও বেহায়পণার মহোৎসব। এ উৎসব পানসে হয়ে যাবে মেয়েরা সেখানে উপস্থিত না থাকলে। আর উপস্থিত হলে মেয়েরা স্বাধীনতার নামে নিজেদের অপমানিত করবে এটা খুবই স্বাভাবিক।

নারীর নিরাপত্তা ও সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য করে ইসলাম এ উৎসবে মত্ত হতে বারণ করে। জরিপে দেখা যায়, এ উৎসবে যুবতী মেয়েদের পোশাক ও আবেদন ইতিবাচক থাকে না। কিংবা প্রতারিত হতে তারা বাধ্য হন। তাই ঘর থেকে বের হওয়ার আগে মেয়েদের ভাবতে হবে।

যেসব কারণে ইসলাম বারণ করে

অশ্লীলতা: এ প্রসঙ্গে নবী সা. বলেন, 'ঐসব নারী যারা হবে পোশাক পরিহীতা কিন্তু নগ্ন। যারা পরপুরুষকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উচুঁ কাঁধ বিশিষ্ট উটের মত। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না।' সহীহ মুসলিম:২১২৮

গান বাজনা : এ রাতে আয়োজিত হয় বিভিন্ন কনসার্ট। যেখানে নারী পুরুষের একসঙ্গে গান বাজনা, নগ্ন নৃত্য আবশ্যকীয় বিষয় হয়ে দাড়িঁয়েছে। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ও রাসূল সা. এসব নিন্দনীয় কাজকে সম্পূর্ণ হারাম ও অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন। আর যারা এসব কাজে লিপ্ত তাদের জন্য করেছেন কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, 'একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।' সূরা লুকমান :৬

আতশবাজী পটকাবাজী : এ রাতে আনন্দ উল্লাস উপভোগ করার জন্য মধ্যরাত থেকে শুরু হয় আতশবাজীও পটকাবাজী। যা জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টি করে। এর দ্বারা অগ্নিসংযোগেরও আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া এসব কর্মকাণ্ডে জনসাধারণকে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতে হয়। অথচ আল্লাহ বলেছেন, 'যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।' সূরা আহযাব : ৫৮

অর্থ অপচয় : এ রাতকে কেন্দ্র করে অনেক অর্থ অনৈসলামিক ও হারাম কাজে ব্যয় করা হয়। যা একদিকে যেমন মারাত্মক গুনাহের কাজ অপর দিকে অপচয়। আর ইসলাম অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের বড়ই অকৃতজ্ঞ। সূরা বনি ইসরাঈল :২৭

যুবক-যুবতীর অবাধ মেলামেশা : এ রাত্রিতে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, সমুদ্র সৈকত, নাইট ক্লাবে যুবক-যুবতীরা অবাধে মেলামেশা ও অপকর্মে লিপ্ত হয়। যা ইসলামের পরিভাষায় ব্যভিচার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এখন কেউ যদি বলে আমরা খারাপ কিছু করব না, শুধু উৎসব উদযাপন করব তাহলে বুঝতে হবে এরাই ধোঁকাবাজ। এরা হয়তো সমাজকে ধোকা দিচ্ছে, নয়তো তারা নিজেরাই ধোকায় পড়ে আছে। কেন না রাসূল সা. বলেছেন, 'কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হলে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান।' মিশকাত শরীফ :১৩১৮

আর শয়তান মানেই বিপদের দিকে ধাবিত হওয়া। এসব কারণসমূহ ছাড়াও আরো অসংখ্য কারণ বা অপকারীতা রয়েছে এই থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনে। সুতরাং একথা এখন নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, মুসলিম যুব সমাজকে ধ্বংস করার লক্ষ্যেই এই থার্টি ফাস্ট নাইট সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সারা বিশ্বে। কোনো মুসলমানের জন্য উচিত নয় ,এসব অসভ্য ও অশালীন কালচার গ্রহণ করা।

আমাদের মনে রাখতে হবে, উৎসব হচ্ছে একটি জাতির ধর্মীয় মূল্যবোধ। সে জন্যই নবী মুহাম্মাদসা.পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের উৎসব নির্ধারণ করে গেছেন।রাসূল সা. ইরশাদ করেন, 'প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ (খুশি) রয়েছে, আর এটা (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) আমাদের ঈদ।' বুখারী ও মুসলিম শরীফ

তাই মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো, থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন থেকে বিরত থাকা।একে কেন্দ্র করে সকল প্রকার অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, হৈ-হুল্লোড় এবং নগ্নতা প্রদর্শনকে এড়িয়ে চলা।

পাশাপাশি বছরের সূচনালগ্ন যখন আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়, তখন আমাদের করণীয় হলো, যে বছরটা আমাদের জীবন থেকে গত হয়ে গেল, তা কোন কাজে ব্যয় করলাম তার হিসেব করা, ভুলত্রুটির জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাওয়া। এবং আগত দিনগুলো যেন আমাদের জন্য কল্যাণকর হয় সে জন্য রাব্বুল আলামীনের কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করা।

লেখক : ইমাম ও খতিব, আদ্রা জামে মসজিদ, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

ইমেইল : [email protected].

ডিএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ